আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ঢাকা: আজ ১২ রবিউল আউয়াল। পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী। মানবতার মুক্তির দূত, সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মহানবী হযরত মুহম্মদ (স) এদিনে জন্মগ্রহণ ও মৃত্যুবরণ করেন। মুসলিম বিশ্বের কাছে এ দিনটি একই সঙ্গে আনন্দ ও বেদনার দিন।
তাই এদিনে বিশ্বের ১শ’ ৬০ কোটি মুসলমান পরম শ্রদ্ধা ও সম্মানের সঙ্গে তাঁদের প্রিয়নবীকে স্মরণ করবে। তাঁদের কণ্ঠে ধ্বনিত হবে ইয়া নবী সালাম আ’লায়কা, ইয়া রাসুল সালাম আলায়কা।
বালাগাল উলা বেকামালিহি, কাশাফদ্দোজা বেজামালিহি, হাসানাত জামিউ খেসালিহি, সাল্লুআলাইহে ওয়া আলিহি। পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
দিনটি উদযাপন করার জন্য বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বিভিন্ন বেসরকারী রেডিও ও টিভি চ্যানেল এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে এবং সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। এ উপলক্ষে আজ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে আজকের এদিনে মক্কা নগরীর পবিত্র ভূমিতে মা আমেনার কোলে জন্মগ্রহণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব। তাঁর জন্মের ৬ মাস আগে বাবা আব্দুল্লাহ সিরিয়া থেকে ফেরার পথে মক্কার অদূরে কুফা নগরীতে মৃত্যুবরণ করেন। জন্মের ২ বছর পর্যন্ত প্রিয় নবীকে লালন-পালন করেন দূতমাতা হালিমা।
এর পর তিনি তাঁর মাতা আমেনার কাছে ফিরে আসেন। তাঁর বয়স যখন ৬ বছর তখন মায়ের সঙ্গে কুফা নগরীতে পিতার কবর জিয়ারত শেষে ফেরার পথে মা আমেনাও একই স্থানে মৃত্যুবরণ করেন। পিতার কবরের পাশেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।
পিতামাতা মারা যাওয়ার পর তিনি দাদা আব্দুল মুত্তালিবের কাছে বড় হন। শেষ পর্যন্ত দাদা মারা গেলে চাচা আবু তালিব নবীর কিশোর বয়সে দেখাশোনার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি এমন এক সময় পৃথিবীতে আগমন করেন, যে সময়ে সমগ্র আরব জাহানে যুদ্ধবিগ্রহ হানাহানি লেগেই থাকত। গোত্রে গোত্রে মারামারি কাটাকাটি ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। কন্যা শিশু জন্মগ্রহণ করলে তাকে জীবন্ত কবর দেয়া হতো। সমগ্র আরব বিশ্ব ছিল পৌত্তলিকতার অন্ধকারে নিমজ্জিত।
খুব ছোট কাল থেকে এসব দৃশ্য তাঁর মনে রেখাপাত করেছিল। তিনি তখন থেকে আরব জাতির মুক্তির উপায় খুঁজতেন। ছোটবেলা থেকেই হযরত মুহম্মদ (স) সত্যবাদী, বিশ্বাসী, সৎ, ন্যায়নিষ্ঠ হিসেবে প্রশংসিত ছিলেন। এ কারণে সব শ্রেণী, বর্ণ ও গোত্রের লোকেরা তাঁকে বিশ্বাস করত। সবাই তাঁকে ডাকত আল আমিন বা বিশ্বাসী বলে। আরব জাতির এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য তিনি গঠন করেন হিলফুল ফুজুল বা শান্তি সংঘ।
তাঁর বয়স যখন ২৫ বছর তখন মক্কার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী খাদিজার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরিণত বয়সে তিনি প্রায়ই হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। তাঁর বয়স যখন ৪০ বছর তখন ফেরেশতা জিবরাইলের মাধ্যমে নবুওয়াত প্রাপ্তির সুসংবাদ পান। ধ্যানে মগ্ন থাকাকালে ফেরেশতার মাধ্যমে তিনি প্রথম বাণী শ্রবণ করেছিলেন; হে নবী পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন একফোঁটা রক্তবিন্দু থেকে। আর এভাবেই তাঁর ওপর অবতীর্ণ হয় সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ কোরান মজিদ।
নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকে তিনি মানবতার কল্যাণে বিশ্ববাসীকে মুক্তি ও শান্তির পথে আহ্বান জানান। দীর্ঘ ২২ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম এবং জুলুম নির্যাতন সহ্য করে বিশ্বের মানুষের কাছে তিনি ইসলামের বাণী পৌঁছে দেন। ইসলাম প্রচারকালে তিনি তায়েফবাসীদের আক্রমণের শিকার হন। তায়েফবাসীরা নবীকে পাথর মেরে রক্তাক্ত করে দিয়েছিল। এ সময় তিনি প্রতিশোধ না নিয়ে তায়েফবাসীর জন্য আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করেন, ‘এদের জ্ঞান দাও প্রভু, এদের ক্ষমা কর’।
হযরত মুহম্মদ (স) কে প্রেরণ করা হয়েছিল সমগ্র মানবজাতির রহমত স্বরূপ। পবিত্র কোরান শরীফে আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করেছেন মুহম্মদকে সৃষ্টি না করলে আমি পৃথিবীকে সৃষ্টি করতাম না। তাঁর আগমণে মানব জাতি লাভ করেছে কল্যাণময় পথের পরিপূর্ণ দিক নির্দেশনা, মানবিক মূল্যবোধ ও মর্যাদার গভীরতম চেতনা। কোরানে অন্যত্র ইরশাদ করা হয়েছে, ‘আমি আপনার খ্যাতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি।’
আল্লাহ্ আরও ঘোষণা করেছেন ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেস্তাগণ নবীর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করে থাকে। অতএব হে ঈমানদারগণ; তোমরাও নবীর শানে দরুদ ও সালাম পেশ কর।’ ৬৩২ সালে দীর্ঘ ৬২ বছর বয়সে আজকের এদিনে তিনি পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেন। মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর বিদায় হজের ভাষণে বিশ্ববাসীর উদ্দেশে বলেছিলেন, তোমাদের মাঝে আমি রেখে যাচ্ছি দুটি মূল্যবান জিনিস, ‘কোরান ও সুন্নাহ’। এ দুটিকে তোমরা যতদিন আঁকড়ে থাকবে ততদিন পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না।
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী উপলক্ষে পৃথক বাণীতে মুসলিম উম্মার সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি এবং দেশের সার্বিক অগ্রগতি ও কল্যাণ কামনা করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে আজ এ উপলক্ষে সকাল ১০টায় একটি র্যালি বের করা হবে।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম থেকে র্যালি শুরু হবে। এতে নেতৃত্ব দেবেন ধর্মপ্রতিমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। এ ছাড়া বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পক্ষকালব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এসব অনুষ্ঠানে রয়েছে হামদ, নাত, সেমিনার ও কেরাত মাহফিল।
এ ছাড়া বাংলাদেশ আনজুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভান্ডারী, দাওয়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, আশেকানে মাইজভান্ডারী এ্যাসোসিয়েশন, আজিমপুর দায়রা শরীফ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দিনটি উপলক্ষে কোরানখানি, দোয়ামাহফিলসহ আলোচনাসভা ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।