জামায়াতকে ছাড়তে খালেদার নানা হিসেব-নিকাশ!
Libraryমান্না আতোয়ার,ঢাকা: জামায়তকে ছাড়ছেন খালেদা, জামায়াতকে জোটে রেখেছেন কিছু কৌশলগত কারণে, জামায়াতের সাথে বিএনপি তথা খালেদার টান-পোড়ন সম্পর্ক, ইত্যাদি হেড লাইন করে ইতিমধ্যে মিডিয়াতে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিভিন্ন টিভি’র টকশো অনুষ্ঠানগুলোতেও বিএনপি জামায়াত নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে।
তারই ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়া ইতিমধ্যে জামায়াতকে নিয়ে হিসেব-নিকাশ কষতে বসে গেছেন। জামায়তের সঙ্গ ছাড়লে কি সুবিধা, সঙ্গ না ছাড়লে কি অসুবিধা এইসব কিছু নিয়েই এখন ব্যস্ত খালেদা।
তাই বিএনপির চেয়ারপারসন ও ১৮ দলীয় জোটের নেতা বেগম খালেদা জিয়া ভেতরে বাইরে চাপ থাকা সত্বেও জামায়াতের ইসলামীর সঙ্গ ত্যাগ করতে নারাজ।
কারণ বিএনপি জামায়াতকে ত্যাগ করলেই ক্ষমতাসীন আ’লীগ কৌশলে জামায়াতকে কাছে টানবে বলে ধারণা করছেন খালেদা জিয়া।
কিন্তু বিভিন্ন সময় বিদেশী কূটনীতিক জামায়াতের সঙ্গ ছাড়তে খালেদা জিয়াকে আহ্বান জানান। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর খালেদা জিয়া বেশ কয়েকবার জানিয়েছেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট কৌশলগত এবং তা অস্থায়ী।
বিএনপির সূত্র বলছে, দলটির ভোট ব্যাংক এবং দেশের ভেতরে-বাইরে থাকা বিভিন্ন ইসলামি সংগঠনের ওপর প্রভাব থাকার কারণে জামায়াতকে এখনই ছাড়তে ইচ্ছুক নন বেগম জিয়া।
জামায়াত-শিবিরের মজবুত অর্থনৈতিক ভিত্তি এবং ত্যাগী নেতা-কর্মী রয়েছে, যারা যেকোনো আন্দোলনকে সফল করতে সর্বশক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। বিএনপি চেয়ারপারসন এই কারণেও জামায়াতকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে জানায় বিএনপি’র সূত্রগুলো।
বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এবং বেগম জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান শুক্রবার রাতে তার মাকে ফোন করেন। দলীয় বিভিন্ন বিষয় ছাড়াও জামায়াত নিয়েও তাদের মাঝে আলোচেনা হয় বলে জানায় বিএনপি’র সূত্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের কর্মপরিষদের এক সদস্য আজকের বাংলাদেশ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, সম্প্রতি রাজনৈতিক সহিংসতা এবং কৌশলগতভাবে বিএনপি থেকে দূরে থাকার জন্য দলটির ওপর চাপ রয়েছে।
বিএনপি নেতৃত্বধীন ১৮ দলের এক শীর্ষ নেতা আজকের বাংলাদেশ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, বিএনপিপন্থী পেশাদারদের পক্ষ থেকে সম্প্রতি পরামর্শ দেয়া হয়েছে, নাম পরিবর্তন করলে জামায়াতের সঙ্গ নাও ছাড়তে পারে বিএনপি। জামায়াতের এক নীতিনির্ধারকের নাম উল্লেখ করে ওই নেতা বলেন, “কিন্তু এই পরামর্শ ইতিবাচকভাবে নেয়নি জামায়াত। তারা মনে করছেন এই ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেও জামায়াতের ওপর থেকে সরকারি নিপীড়ন বন্ধ হবে না।”
জামায়াতের সম্প্রতি রাজনৈতিক সহিংসতার জন্য দলটিকে ত্যাগ করতে বিএনপির ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আসতে পারে। বিএনপি’র সহকারী দফতর সম্পাদক জানান, তারা এই বিষয়ে সচেতন রয়েছেন।
বিএনপি এবং ১৮ দলীয় নেতারা জানান, শতাধিক নির্বাচনী আসনে জামায়াতের ভোটব্যাংক রয়েছে। ওই সব এলাকায় বিএনপির জয় নির্ভর করছে জামায়াত ইসলামি দলটির ওপর।
জামায়াতঘনিষ্ঠ এক বিএনপি নেতা বলেন, “শিক্ষক, চিকিৎসক, আইজীবী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাদার সংগঠনের মধ্যেও জামায়াতের ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে।ওই সংগঠনগুলোর পরিচলনা পর্ষদ নির্বাচনেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে দলটি।”
তিনি জানান, এমনকি হেফাজতে ইসলামের মাধ্যমে দেশের প্রায় সব কওমি মাদ্রাসায় প্রভাব বিস্তার করেছে দলটি। গত ১৩ জানুয়ারি ১৮ দলীয় জোটের বৈঠককে ইঙ্গিত করে এক জোট নেতা বলেন, “জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়ে ম্যাডামকে খুব সিরিয়াস মনে হয়েছে।
এমনকি তিনি এটাও বলেছেন যে, জামায়াতের সঙ্গে জোট রাখাটি ঠিক হবে কি হবে না তা নির্ধারণ করবে জনগণ। তারা যদি মনে করে যে, জামায়াতের সঙ্গে জোট রাখটা ভুল তবে তারা আমাদের ভোট দেবে না।”
বৃহস্পতিবার জামায়াত এবং হেফাজতের সঙ্গ ছাড়তে একটি প্রস্তাব পাস করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’সঙ্গে জড়িত দলগুলোর সঙ্গ ছাড়তে আহ্বান জানায় সংস্থাটি। জামায়াতকে ইঙ্গিত করে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, “সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো দলগুলোকে অবশ্যই নিষিদ্ধ করা উচিত।”