পুঁজিবাজারের অধিকাংশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে !
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত অধিকাংশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। ফারমার্স ব্যাংকের গ্রাহকদের মধ্যে আমানত ফিরে না পাওয়ার আতঙ্ক, বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন, পরিচালনা পর্ষদ দখল, খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া ও ডলারের বাজারে বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে ২০১৭ সাল অতিবাহিত হলেও এই সময়ে বেশিরভাগ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মুনাফা করেছে ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন ও পরিচালনা পর্ষদ দখল হওয়া ইসলামী ব্যাংকে।
রবিবার (৩১ ডিসেম্বর) বছরের শেষ দিনে দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা সব শাখার ব্যালেন্স শিট দেখে হিসাব বিবরণী তৈরি করেছে ব্যাংকগুলো।
২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক দুই হাজার ৪২০ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে। ২০১৬ সালে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছিল দুই হাজার ৩ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে ব্যাংকটির মুনাফা হয়েছিল এক হাজার ৮০৮ কোটি টাকা।
২০১৭ সালে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ৬৬০ কোটি টাকা। গত বছর ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৬০৫ কোটি টাকা। আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক মুনাফা করেছে ৮০৯ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংক করেছে ৫১১ কোটি টাকা মুনাফা।
যা ব্যাংকটির এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ মুনাফা। পূবালী ব্যাংক করেছে ৯১৫ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ৭২০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক মুনাফা করেছে ৪১৭ কোটি টাকা।
এক্সিম ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৭১১ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে ছিল ৬৫০ কোটি টাকা। প্রিমিয়ার ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৪৫০ কোটি টাকা। আগের বছর যা হয়েছিল ৩৫০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে মার্কেন্টাইল ব্যাংক মুনাফা করেছে ৭১১ কোটি টাকা। আগের বছর ব্যাংকটির মুনাফা ছিল ৫০৩ কোটি টাকা।
২০১৭ সালে ইস্টার্ন ব্যাংক ৭৫০ কোটি টাকা, আইএফআইসি ব্যাংক ৫০৪ কোটি টাকা, ব্যাংক এশিয়া ৬৭০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। এনসিসি ব্যাংক মুনাফা করেছে ৫৩৫ কোটি টাকা। আগের বছর ব্যাংকটির মুনাফা ছিল ৪৭০ কোটি টাকা। সরকারি মালিকানার অগ্রণী ব্যাংক মুনাফা করেছে ৯৫০ কোটি টাকা।
সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল এবং আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি থাকায় ব্যাংকগুলো আগের বছরের চেয়ে বেশি মুনাফা করেছে।
এ প্রসঙ্গে ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যানদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘২০১৭ সালে ফারমার্স ব্যাংকের ঘটনা ছিল দুঃখজনক। এটি ছাড়া এই সময়ে ব্যাংকের বিনিয়োগ বেড়েছে, ব্যবসা বেড়েছে। সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল এবং আমদানি-রফতানি বাণিজ্য ইতিবাচক ছিল। যে কারণে বেশ কিছু সমস্যা থাকার পরও ব্যাংকগুলো ভালো মুনাফা করেছে।’
এদিকে, ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়েছে অনেক ব্যাংক। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ব্যাংক খাতে ঋণের পরিমাণ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এক লাখ ২২ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা বেশি। গত সেপ্টেম্বর মাসে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক ৮০ শতাংশ। এই অর্থবছরের শুরুতে (জুলাই ২০১৭) ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গত অর্থবছর শেষে (জুন ২০১৭) ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বছর শেষে নতুন অনুমোদন পাওয়া ইউনিয়ন ব্যাংক মুনাফা করেছে ২৩০ কোটি টাকা। ব্যাংকটি গত বছর মুনাফা করেছিল ১৮৫ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক মুনাফা করেছে ২০২ কোটি টাকা। গত বছর ছিল ১৭২ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কর্মাস ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ১৮২ কোটি টাকা। আগের বছর যা ছিল ১৫৪ কোটি টাকা।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক লিমিটেড করেছে ১৬১ কোটি টাকা। যা আগের বছর ছিল ৯৮ কোটি টাকা। মধুমতি ব্যাংক মুনাফা করেছে ১৫১ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে ছিল ৯০ কোটি টাকা। মিডল্যান্ড ব্যাংক ১২০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। ২০১৬ সালে ছিল ৭২ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে মেঘনা ব্যাংক করেছে ১১০ কোটি টাকা। আগে বছর ছিল ১০২ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো পরিচালন মুনাফার তথ্য প্রকাশ করতে পারে না। এজন্য কোনও ব্যাংকই তাদের পরিচালন মুনাফার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তথ্য প্রকাশ করে না।
পরিচালন মুনাফা ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়; নিট মুনাফাই ব্যাংকের প্রকৃত আয়। পরিচালন মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি (প্রভিশন) এবং কর (৪২ দশমিক ৫ শতাংশ) বাদ দিয়ে নিট মুনাফা হিসাব করা হয়।