netদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: মোবাইল নেটওয়ার্কসাধারণত উঁচু ভবনের ওপরের ফ্লোর, নিচের অংশে বা ভবনের পাশে অবস্থান নিলে মোবাইলে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। মোবাইলের টাওয়ার কাভারেজ এলাকার মধ্যে না পড়লে ভয়েস এবং ইন্টারনেট ব্যবহারে এই সমস্যা হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিটি টাওয়ারের বিম বা ফুটপ্রিন্টের (কাভারেজ এরিয়া) একটি নির্দিষ্ট সীমা থাকে। সেই সীমার বাইরে গেলে মোবাইলে নেটওয়ার্কের সমস্যা হয়। এছাড়াও মোবাইল টাওয়ারের স্বল্পতা, দুটি টাওয়ারের মধ্যবর্তী দূরত্ব, জনবসতির হার, উঁচু নিচু ভবনের আধিক্য, পাহাড়-পর্বতের অবস্থানের কারণে মোবাইল নেটওয়ার্কের সমস্যা হয়।

এসব সমস্যা দূর করারও উপায় রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মোবাইলফোন অপারেটরগুলো উদ্যোগ নিলেই গ্রাহকদের ভোগান্তি কমবে বলে মনে করেন অনেকেই। অন্যদিকে মফস্বল বা গ্রামাঞ্চলে টাওয়ারের সংখ্যা শহরের তুলনায় কম হওয়ায় নেটওয়ার্ক ভোগান্তি হয়। অপারেটরগুলোর ‘বিজনেস কেস’-এ সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলো না পড়লে বিরাজমান সমস্যার সুরাহা খুব একটা হয় না।

প্রসঙ্গত, মোবাইলফোন রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে মোবাইল টাওয়ারের (বিটিএস) সঙ্গে যুক্ত থাকে। যা একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্য টাওয়ারে প্রেরণ করে। সব ফোনই একই পদ্ধতিতে কোনও না কোনও টাওয়ারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। মূলত মোবাইলে কল করা হলে সেটি কাছের টাওয়ারে সংযুক্ত হয়। পরে তা চলে যায় সুইচ রুমে।

সুইচ রুম থেকে তা সংশ্লিষ্ট টাওয়ারে গিয়ে কল করা মোবাইলে যুক্ত হয়। টাওয়ারগুলো সমান দূরত্বে হলে ফোনের ট্রান্সমিশন রেঞ্জও কাছাকাছি হয়। কিন্তু অনেক সময় বিভিন্ন বাধায় মোবাইলে কল যেতে সমস্যা হয়, মোবাইলে নেটওয়ার্ক পায় না।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) একজন মহাপরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মোবাইলের টাওয়ারের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে সেই টাওয়ারের আশপাশে (নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে) যারা মোবাইলফোন ব্যবহার করেন তারা কেমন নেটওয়ার্ক পাবেন। টাওয়ারের যেসব অংশ (ডিশ অ্যান্টেনা বা বড় বোলের মতো) যেদিকে ঘোরানো থাকে সেদিকে নেটওয়ার্কে সিগন্যাল ভালো থাকে।

এর বিম (সহজ ভাষায় বললে ফুটপ্রিন্ট) যতটুকু জায়গা কাভার করে ততোটুকু জায়গায় নেটওয়ার্ক ভালো থাকে। তেমনি উঁচু ভবনের ওপরে টাওয়ার বসানো থাকলে তার বিম এলাকার মধ্যে নেটওয়ার্ক ভালো থাকে। সেক্ষেত্রে ভবনের নিচে বা আশপাশের ভবনের নিচে যারা অবস্থান করেন তারা নেটওয়ার্ক পান না বা পেলেও দুর্বল সিগন্যাল পান।’

এ সমস্যার সমাধান আলোচনা করতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এ সমস্যার জন্য রয়েছে ডিভাইস সার্ভিস অ্যান্টেনা (ডিএসএ)। এই ডিভাইসটি ভবনে বসালে সেখানের নেটওয়ার্ক সমস্যা দূর হয়ে যায়। ইতোমধ্যে দেশে এ ধরনের ডিভাইস বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। বড় বড় ভবন, শপিং মল, জনবহুল স্থানে এই ডিভাইস বসিয়ে নেটওয়ার্ক সমস্যার সমাধান দেওয়া হচ্ছে।’

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নেটওয়ার্ক সমস্যায় কোনও উঁচু ভবনের ওপরে, নিচে বা পাশে মোবাইলে অনেক সময় ‘নো সার্ভিস’ দেখাতে পারে। মোবাইলফোন বন্ধ করে চালু করার পরও সমস্যা দূর হয় না। ফলে অনেক সময় বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। এমনকি মোবাইলে ব্যবহৃত সিমটি অকেজো হয়ে যেতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা পরামর্শ দিয়ে জানান, মোবাইলসেটে নো সার্ভিস দেখালে নেটওয়ার্ক পাওয়ার জন্য বেশি চেষ্টা না করে সেটটি বন্ধ করে দেওয়া। পরে যেখানে ভালো নেটওয়ার্ক আছে সেখানে গিয়ে আবার চালু করা। তখনও যদি নেটওয়ার্ক না আসে তাহলে মোবাইলের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করা উচিত।

তবে মোবাইলফোন বন্ধ করে আবারও চালু করলে আরেকটি টাওয়ার থেকে সংযোগ পাওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। হতে পারে ওই সিগন্যালটা আরও শক্তিশালী। অন্যদিকে মোবাইলে ‘এয়ারপ্লেন মোড’ চালু করে আবার বন্ধ করলে অনেক সময় নেটওয়ার্ক সমস্যার সমাধান হতে পারে।

বিড়ম্বনার নাম নেটওয়ার্ক হোল:

চলতি পথে মোবাইলে থ্রিজি নেটওয়ার্কে ইন্টারনেট ব্রাউজ করছেন কেউ। হঠাৎ নেটওয়ার্ক ‘ই’ দেখানো শুরু করলো। কথা বলা অবস্থায় কলড্রপ হয়ে যায় বা অনেক সময় কথা শোনাই যায় না। কিছুক্ষণ পরে আবার তা ঠিকও হয়ে যায়। চলতি পথের হঠাৎ এই অবস্থার নাম ‘নেটওয়ার্ক হোল’।

মোবাইলফোন অপারেটরগুলো ওই হোলে বিটিএস বসালে সমস্যা দূর হয়ে যায়। অনেক সময় যে টাওয়ার আছে তাতে ‘গেইন’ বাড়ালে সমস্যা আর থাকে না বলে জানিয়েছেন ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক।

তিনি বলেন, ‘এসব নেটওয়ার্ক হোলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হন গ্রাহকরা। ঢাকা শহরে অসংখ্য ভবন রয়েছে যেগুলো একই উচ্চতার নয়। ফলে কোথাও উঁচু, কোথাও নিচু ভবনে টাওয়ার বসায় মোবাইলফোন অপারেটররা। এগুলো সব ভবন সমান নেটওয়ার্ক কাভারেজের আওতায় আসে না। সেক্ষেত্রে অপারেটরগুলো গুরুত্বের ভিত্তিতে ডিসিএ (ডিভাইস সার্ভিস অ্যান্টেনা) বসিয়ে সমাধানের চেষ্টা করে থাকে।’

এছাড়া সবসময় লোকসমাগম হয় না, তবে কোনও উৎসব উপলক্ষে হঠাৎ যেসব স্থান জনবহুল হয়ে ওঠে সেখানে মোবাইলফোনের নেটওয়ার্ক সমস্যা তীব্র হয়ে ওঠে। যেমন- বাণিজ্য মেলা, বই মেলা বা পহেলা বৈশাখের মতো অনুষ্ঠান। সেসব জায়গায় মোবাইলে কথা বলা বা ইন্টারনেট ব্যবহার করা দুটোই কঠিন হয়ে পড়ে।

ফলে সেখানকার সমস্যা দূর করতে মোবাইলফোন অপারেটরগুলো মুভেবল টাওয়ার (বিটিএস সমৃদ্ধ গাড়ি বা অন্য কোনও মাধ্যমে) বসানো হয় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।