dse-strategic-partnerদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: কৌশলগত বিনিয়োগকারী বাছাইয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতি ছাড়াই আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করে। যা কোম্পানি আইনের ব্যত্যয়। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক গঠিত কমিটি এমন পর্যালোচনা তুলে ধরে বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, কৌশলগত বিনিয়োগকারী নির্বাচনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান প্রক্রিয়া ছিল ত্রুটিপূর্ণ। প্রাইমারি শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতি ছাড়াই শুধু পর্ষদের সিদ্ধান্তে এ দরপত্র আহ্বান করা হয়, যা কোম্পানি আইনের ব্যত্যয়। চীনা কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করার সিদ্ধান্তের ডিএসইর প্রস্তাব পর্যালোচনায় বিএসইসি গঠিত কমিটি এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

প্রক্রিয়াগত ক্রটি দেখিয়ে ডিএসইর প্রস্তাবটি বিএসইসি বাতিল করতে পারে কি-না- এমন প্রশ্নে ওই সূত্রগুলো জানায়, এ বিষয়ে এখনই মন্তব্য করা সম্ভব নয়। কারণ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। কমিটি এ বিষয়েও কোনো সুপারিশ করেনি; শুধু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে।

এবিষয়ে বিএসইসির এক কর্মকর্তা বলেন, কমিশন গঠিত কমিটি তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে। কমিশন দ্রুতই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে। আগামী মঙ্গলবার কমিশন সভা হলে ওই দিন সিদ্ধান্ত হতে পারে।

কমিটির এমন প্রতিবেদনের বিষয়ে ডিএসইর একাধিক নেতা জানান, আইনগত সব দিক বিবেচনায় করেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। আইনের কোথাও প্রাইমারি শেয়ারহোল্ডারদের থেকে অনুমতি নেওয়ার শর্ত নেই। এমনকি কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি মাসে এ বিষয়ে সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। প্রক্রিয়াগত ত্রুটি থাকলে কমিশন আগেই অবহিত করতে পারত।

তারা আরও বলেন, ডিএসইর পক্ষ থেকে চীনা জোটকে কৌশলগত অংশীদার করার পক্ষে প্রস্তাব পাঠানোর পর কমিশনের কমিটি যে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেয়, তাতেও ওই প্রক্রিয়া শুরুর ত্রুটি নিয়ে কোনো ব্যাখ্যা চায়নি। এ ছাড়া এ নিয়ে প্রাইমারি শেয়ারহোল্ডারদের কোনো আপত্তি নেই; থাকলে তারা ডিএসইর পর্ষদকে জানাতেন বা আদালতের শরণাপন্ন হতেন।

ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার কৌশলগত অংশীদারদের কাছে বিক্রির জন্য সংরক্ষিত। আইন অনুযায়ী বিএসইসি ওই শেয়ার বিক্রির জন্য ডিএসইকে নির্দেশ দিলে দুই বছর আগে শেয়ার বিক্রির উদ্যোগ নেয় ডিএসই।

এ জন্য দ্বিতীয় দফায় গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করলে চীনের সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ জোটবদ্ধভাবে শর্তসাপেক্ষে দরপ্রস্তাব করে। তারা ডিএসইর ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার কিনতে ২২ টাকা দর দিতে চায়। অপর প্রস্তাবটি ছিল ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বাধীন জোটের। তারা একই শেয়ারের জন্য ১৫ টাকা দর দিতে চায়।

ডিএসইর পর্ষদ উভয় প্রস্তাব পর্যালোচনা করে চীনা জোটের প্রস্তাবটি গ্রহণ করে। এরপর গত ২২ ফেব্রুয়ারি তা অনুমোদনের জন্য বিএসইসির কাছে আবেদন জানায়। অবশ্য এর আগে বিএসইসির পক্ষ থেকে ভারতীয় স্টক এক্সচেঞ্জটিকে কৌশলগত অংশীদার করতে ডিএসইর পর্ষদকে চাপ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে শেয়ারবাজারে শুরু হওয়া দরপতনের জন্য এ বিতর্ককেও অনেকে দায়ী করেন।

ডিএসইর প্রস্তাব পেয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ফরহাদ আহমেদকে আহবায়ক ও নির্বাহী পরিচালক মো. মাহবুবুল আলমকে সদস্য সচিব করে ৪ সদস্যের কমিটি করে বিএসইসি। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন নির্বাহী পরিচালক ড.এটিএম তারিকুজ্জামান ও নির্বাহী পরিচালক মো. আনোয়ারুল ইসলাম। এ কমিটি ওই প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে বৃহস্পতিবার (১৫ মার্চ) তাদের প্রতিবেদন বিএসইসিতে জমা দেয়।