dse dorpotonদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা আশা করেছিলেন নির্বাচনের বছরে প্রণোদনা আসবে। বাজার হবে চাঙ্গা। বাস্তবে বাজার চিত্র উল্টো। অব্যাহত দরপতনে শেয়ারবাজারে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। বাজার মন্থরতার কারণে হতাশ ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীরা।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি মাসের ১৮ কার্যদিবসে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূলধন কমেছে ১৬ হাজার কোটি টাকা বা ৪.০৩২ শতাংশের ওপরে। আর গড় লেনদেন কমেছে ৫৪৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। একই চিত্র চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও।

সব ধরনের হিসাব ভুল প্রমাণ করে গত এক মাসে দেশের শেয়ারবাজারে দরপতন অব্যাহত আছে। চলতি মাসে সূচক ১৫ শতাংশ কমেছে। এর মধ্যে টানা ১৩ দিন ধরে প্রধান সূচক ৩১০ পয়েন্ট কমেছে। এসএসইএস বা শরিয়াহ সূচক কমেছে ১১ পয়েন্ট। আর ডিএসই৩০ সূচক কমেছে ১১ পয়েন্ট।

ডিএসইর ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, তালিকাভুক্ত অধিকাংশ কোম্পানির লোকসানের পরিমাণ ১৪ কোটি টাকা, যা গত বছরের চেয়ে ২৭ শতাংশ বেশি। গত ২ মে বাংলাদেশের প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ৮১৩ পয়েন্ট। গত এক বছরের মধ্যে সূচক এখনই সবচেয়ে কম। এর আগে সূচক সবচেয়ে কম ছিল ২০১৭ সালের ৩০ মে, ৫ হাজার ৩৭৩ পয়েন্ট।

এ ছাড়া ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে ৩৭টি। এর মধ্যে ৩০টির ইউনিটের বাজার মূল্য অবিহিত মূল্যের নিচে। যে ছয়টি মিউচুয়াল ফান্ডের মূল্য অবিহিত মূল্যের ওপরে রয়েছে, তার মধ্যে একটির দাম ১৬ টাকার ওপরে। বাকি পাঁচটির দাম ১৪ টাকা বা তারও নিচে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরাও মনে করছেন, কয়েকটি ইস্যুতে বাজারে পতন ঘটছে। ব্যাংকের এডিআর হার কমানো, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এক্সপোজার এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আইসিবির শেয়ার বিক্রি করা।

এডিআর কমানো ইস্যুতে বাজার পড়ে যাবে, আরও কমবে বাজার এমন তথ্য ছড়িয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীকে শেয়ার বিক্রি করতে ‘বাধ্য’ করা হয়েছে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। এসব আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি করছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। শেয়ারের দাম কমে গেলে কারসাজি চক্র কম দামে শেয়ার কিনে বাজারে ঢুকছে বলেও তারা অভিমত দেন।

দরপতনের আরও দুটি কারণ দেখান ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সাবেক সভাপতি আহমেদ রশিদ লালী। একটি হচ্ছে, ঈদ এবং অন্যটি হচ্ছে বাজেট। তিনি খোলা কাগজকে বলেন, সামনে বাজেট ও ইলেকশন, এ সময় বিনিয়োগকারীরা অবজারভেশন করেন। আর রোজার সময় কিন্তু বাজার কিছুটা মন্দা যায়, কারণ মানুষ ঈদের খরচের জন্য শেয়ার ছেড়ে টাকা তুলে নেয়।

বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্যপরিষদের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী বলেন, গুজবের অস্থিরতায় পুঁজিবাজারে দরপতনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। কোনো তথ্য শুনলেই শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন তারা। কারণ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় প্রত্যেক কার্যদিবসেই শেয়ার বিক্রয় করছে। আইসিবি নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। টালমাতাল বাজার পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা নিঃস্ব হতে চলছে।

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংকগুলোতে সুদের হার অনেক বেড়ে গেছে। মানুষ পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলে বেশি লাভের জন্য ব্যাংকে রাখছে।’ এ ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথম প্রান্তিকে খুব খারাপ ফলাফল দেখিয়েছে বলে তার নেতিবাচক প্রভাব ব্যাংক খাতের শেয়ারের ওপর পড়েছে, সেটাও সার্বিকভাবে পুঁজিবাজারকে প্রভাবিত করেছে বলে মনে করেন তিনি।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সাইফুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের বছরে বাজার চাঙ্গা থাকবে এমন কোনো কথা নাই। আমাদের পুঁজিবাজারের মূল সমস্যা হচ্ছে এটি এখনো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীনির্ভর বাজার। তারা এখনো গুজবের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করে লোকসানের মুখে পড়ছে। এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।