মুন্নু জুটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে ডিএসই: রকিবুর রহমান
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে মন্দাভাব দেখা দিলেও তালিকাভুক্ত মুন্নু জুট স্টাফলার্সের শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েই চলেছে। প্রতিষ্ঠানটির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের দাম সাড়ে চার হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেছে। মুন্নু জুট স্টাফলার্সের শেয়ারের দাম এমন অস্বাভাবিক বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কঠোর পদক্ষেপ নেবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. রকিবুর রহমান।
অবশ্য এর আগেই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত এপ্রিলে তদন্তে নামে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে বিএসইসির সেই তদন্ত তদন্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে। ফলে মুন্নু জুটের শেয়ারের দাম বাড়ার পালে আরও হাওয়া লেগেছে। এখন ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ারের দাম সাড়ে চার হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেলেও এ বিষয়ে আপাতত নতুন করে তদন্ত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।
এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মুন্নু জুট স্টাফলার্সের শেয়ারের দাম বাড়ছে। তবে প্রথমদিকে শেয়ারের দাম অল্প অল্প হারে বাড়লেও চলতি বছরের এপ্রিলে তা অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম ৯০০ টাকা ছাড়িয়ে গেলে অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণ খতিয়ে দেখতে এপ্রিলে তদন্ত কমিটি গঠন করে বিএসইসি।
এ বিষয়ে বিএসইসির মুখপাত্র সাইফুর রহমান বলেন, তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তবে এখনও এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশন হয়নি। এটি হলে তথ্য প্রকাশ করা হবে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৪৬ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানির শেয়ারের দাম প্রায় সাড়ে চার মাস ধরে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। চলতি বছরের ২৯ মার্চে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল ৭৮৭ টাকা। সেখান থেকেই টানা বেড়ে গত বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৫১০ টাকায়। অবশ্য এদিন কোম্পানিটির শেয়ার চার হাজার ৫৫১ টাকায়ও লেনদেন হয়েছে।
এ হিসাবে সাড়ে চার মাসের ব্যবধানে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে তিন হাজার ৭৬৪ টাকা বা ৪৭৮ শতাংশ। অন্যভাবে বলা যায়, সাড়ে তিন মাসের ব্যবধানে মুন্নু জুট স্টাফলার্সের শেয়ারের দাম বেড়ে হয়েছে ৫ দশমিক ৭৮ গুণ। অর্থাৎ একজন বিনিয়োগকারী ২৯ মার্চ কোম্পানিটির ১০ লাখ টাকার শেয়ার কিনে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ধরে রাখলে সাড়ে চার মাসেই তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৭ লাখ ৮০ হাজার টাকায়।
সে হিসাবে ১০ লাখ টাকা সাড়ে চার মাস খাটিয়ে লাভ পাওয়া গেছে ৪৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বিএসইসির তদন্ত চলাকালে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম এমন অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বিএসইসির তদন্তের পাশাপাশি ডিএসই কোম্পানিটিকে একাধিকবার নোটিশও দিয়েছে। প্রতিটি নোটিশের জবাবে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানায়, শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক বাড়ার পেছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদশীল তথ্য নেই। কোম্পানির দেয়া এ তথ্যের ভিত্তিতে ডিএসই বিনিয়োগকারীদের ওয়েব সাইটের মাধ্যমে সতর্ক করে। তবে ডিএসইর নোটিশের উত্তর দেয়ার কিছুদিন পরেই কোম্পানি দুটি মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করে।
এ বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, আমরা জাঙ্ক শেয়ারের বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। মুন্নু জুট স্টাফলার্সের মতো ৫০ লাখ টাকার পেইড-আপ ক্যাপিটাল, তার শেয়ারের দাম চার হাজার টাকা হয়ে যাবে, এটা তো হতে দেয়া যায় না। আমরা কোম্পানিটাকে ধরবো। আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, আমরা বুঝতে পারছি যে এ কাজগুলো করা উচিত নয়। আমরা বোর্ডে আছি, বোর্ডের একটা দায়িত্ব আছে। বোর্ড সবকিছু এড়িয়ে যেতে পারে না।
১৯৮২ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত মুন্নু জুটের লভ্যাংশের বিষয়ে ডিএসই মাত্র দুটি বছরের তথ্য প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ সালে কোম্পানিটি শেয়ার হোল্ডারদের ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দেয়। ফলে প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে শেয়ার হোল্ডাররা এক টাকা করে লভ্যাংশ পান।
পরের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে লভ্যাংশ হিসাবে দেয়া হয় ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার। বর্তমানে কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন এক কোটি টাকা। অবশ্য এ অনুমোদিত মূলধন কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ বাড়িয়ে ১০০ কোটি টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মুন্নু জুট স্টাফলার্সের শেয়ার সংখ্যা চার লাখ ৬০ হাজার। এর মধ্যে ৫৫ দশমিক ৯০ শতাংশ রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৩৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৬ দশমিক ৪২ শতাংশ এবং বিদেশিদের কাছে আছে দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ শেয়ার।
কোম্পানিটির সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি হিসাব বছরের নয় মাসে (২০১৭ সালের জুন থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত) ব্যবসা পরিচালনা করে মুনাফা হয়েছে ১৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ফলে প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে মুনাফা দাঁড়িয়েছে দুই টাকা ৯৫ পয়সা।