Evenceদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের ইভেন্স টেক্সটাইল বিনিয়োগকারীদের চোখে স্বপ্ন ভুনে দিয়ে ২০১৬ সালের ১৭ জুলাই পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু করেছিল । কিন্তু দুই বছরের ব্যবধানেই বিনিয়োগকারীদের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার। সদ্য সমাপ্ত বছরে মুনাফা থাকা শর্তেও কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ সভায় নো ডিভিডেন্ড ঘোষণা করায় শেয়ার দর এক লাপে ইস্যু মূল্যের নিচে নেমে এসেছে।

বিনিয়োগকারীদের দাবি, উদ্যোক্তা-পরিচালকদের প্রতারণায় হতাশ বিনিয়োগকারীরা। যার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠছে ডিভিডেন্ড ঘোষণার পরবর্তী কার্যদিবসগুলোর লেনদেনে। তাই হঠাৎ করে কোম্পানি’র নো ডিভিডেন্ড ঘোষণার কারণ খুজে বের করে বিনিয়োগকারীদের অভিহিত করা উচিত। তারা বলেন, কারসাজির অংশ হিসাবে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কারণ, আইপিও’র টাকা ব্যবহারের পর চলতি বছরেই কোম্পানিটির উৎপাদন ও মুনাফা বাড়ার ঘোষনা দিয়েছে প্রসপেক্টাসে। এমন পরিস্থিতিতে কোম্পানিটির কোন ডিভিডেন্ড না দেওয়ার ঘোষণা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

সূত্র জানায়, ইভিন্স টেক্সটাইলে কোম্পানি আইন, করপোরেট গভর্ণেন্স গাইডলাইন (সিজিজি), হিসাবমানসহ বিভিন্ন অসঙ্গতি নিয়ে আইপিও অনুমোদন পেয়েছিল। এর আগে একই মালিকানার আরগন ডেনিমস পুঁজিবাজার থেকে উত্তোলিত টাকার অপব্যবহার করে। তাদের প্রতারণার কারণে ৩০ লাখ টাকা জরিমানার কবলে পড়ে আরগন ডেনিমস। আবার সেই উদ্যোক্তারাই নতুন করে প্রতারণার ফাঁদ পাতেঁ ইভিন্স টেক্সটাইলের মাধ্যমে।

ইভিন্স টেক্সটাইল কোম্পানি লিমিটেডের প্রসপেক্টাসে বিভিন্ন অসঙ্গতির কথা উল্লেখ করে ডিএসইর তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. স্বপন কুমার বালা কোম্পানিটির আইপিওতে আপত্তি জানিয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেনের কাছে পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট পাঠান। তবে বিএসইসি তা উপেক্ষা করে আইপিও অনুমোদন দিয়েছিল। তবে কোম্পানিটির আইপিওতে ডিএসইর পর্যবেক্ষন যে সঠিক ছিল, তা কোম্পানিটির তালিকাভুক্তির ৩ বছরেই প্রমাণিত হয়েছে।

২০১৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির পর্ষদ সর্বপ্রথম ৩০ শতাংশ (১০% নগদ ও ২০% বোনাস) লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল। যা ১৮ মাসের (জানুয়ারি ১৫-জুন ১৬) ব্যবসায় ঘোষণা করা হয়েছিল। এরপরের অর্থবছরে (জুলাই ১৬- জুন ১৭) লভ্যাংশ কমে আসে মাত্র ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ারে। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শেয়ারহোল্ডারদের কোন লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় গত রবিবার থেকে কোম্পানিটি “জেড” ক্যাটাগরিতে লেনদেন শুরু করে। কোম্পানিটির ২০১৭-১৮ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি ১.০৬ টাকা হিসেবে মোট ১৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকার নিট মুনাফা হয়েছে। যাতে কোম্পানিটির ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়ার সক্ষমতা ছিল। তবে কোম্পানিটির পর্ষদ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত করে, পুরোটাই রিজার্ভে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

কোম্পানিটির ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই ১৭-মার্চ ১৮) সমন্বিত মুনাফা হয়েছিল ১৯ কোটি ৬ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ১.২০ টাকা। তবে বছর শেষে এই মুনাফার পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ১.০৬ টাকা। অর্থাৎ কোম্পানিটির শেষ প্রান্তিকে লোকসান হয়েছে ২ কোটি ২৭ লাখ টাকা বা শেয়ারপ্রতি ০.১৪ টাকা।

কোম্পানিটির ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সমন্বিত শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছিল ১.২৮ টাকা। যা কমে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে হয়েছে ১.০৬ টাকা। এক্ষেত্রে ইপিএস কমেছে ০.২২ টাকা বা ১৭ শতাংশ। ১৫৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের ইভিন্স টেক্সটাইলে ৫৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকার রিজার্ভ রয়েছে। তবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে কোন লভ্যাংশ না ঘোষণা করার ফলে মুনাফার সম্পূর্ণ বা ১৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকার রিজার্ভ বাড়বে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ২০ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) ইভেন্স টেক্সটাইলের শেয়ার দর ছিল ১৫ টাকা। মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) অর্থাৎ তিন কার্যদিবসের ব্যবধানে কোম্পানিটির শেয়ার ৯.২০ টাকায় নেমে এসেছে। অর্থাৎ এসময় কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৩৮.৬৭ শতাংশ।