hasina deshআহসান আমীন : পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে এই মুহূর্তে বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি এবং এদেশের গণতন্ত্র সুসংহত করার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা যে অবদান রেখেছেন তা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। শেখ হাসিনার তুলনা শুধু শেখ হাসিনা।

গ্রিক রূপকথার ফিনিক্স পাখির ‘পূর্ণজাগরণের’ বৈশিষ্ট্যকে উদাহরণ হিসেবে বাস্তবের মাটিতে নামিয়ে এনেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রূপকথার ‘আগুন-পাখি’যেমন ছাইভস্ম থেকে উঠে আসে স্বমহিমায়, বঙ্গবন্ধুকন্যার ‘পাহাড় সমান সংকট থেকে উঠে এসে সাগর সমান অর্জন’যেন সেই পৌরাণিক কাহিনীকে স্মরণ করিয়ে দেয় বারবার। এ যেন ঘুরে দাঁড়ানোর এক বিস্ময়কর উপাখ্যান।

সেই ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ মন্তব্য থেকে শুরু করে যারাই যখন তাচ্ছিল্যভরে প্রত্যাখ্যান করেছে প্রিয় স্বদেশকে, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আগেই তাদের সবার মুখে ছাই ছুড়ে মেরেছেন বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ব্যক্তি শেখ হাসিনাও ঘুরে দাঁড়ানোর এক অনন্য প্রতীক। নিরন্তর সংগ্রামী এই জ্যোতির্ময় কন্যা মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন অনির্ণেয় গতিতে। দেশ গড়ার পথে নির্ভীক আর দুর্দম্য সেই অভিযাত্রা। ’৭৫-এর জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে ভাগ্যযোগে বেঁচে গিয়েছিলেন বিদেশে থাকার কারণে, তারপর অন্তত আরও ১৯ বার হত্যাচেষ্টার মুখোমুখি হয়েছেন কিন্তু এক বিন্দুও টলেননি নিজের স্বপ্নযাত্রা থেকে, বিশ্বাস হারাননি বাবার সোনার বাংলার গড়ার ইস্পাতকঠিন প্রত্যয় থেকে। নানা চড়াই-উতরাইয়ের সিঁড়ি বেয়ে সাফল্যের সীমানা ছোঁয়া এই মানসকন্যার ৭২তম জন্মদিন আজ।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাম-গঞ্জে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জরিপ করলেও তার প্রমাণ মিলে। বাংলার দু:খী মানুষের বক্তব্য শেখ হাসিনার মানবিকতার উদারে সাধারন মানুষ হ্রদয় জায়গা করে নিয়েছেন।

শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য কন্যা। তিনি তার পরিশ্রম ও কাজ দিয়ে মানুষের মন জয় করেছেন। তার জনপ্রিয়তা এমন যে আওয়ামী লীগের চেয়েও বেশি। তার কাছ থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত আ’লীগ সহ সর্বদলীয় নেতাদের। বিভিন্ন বিশেষণে ভূষিত না হয়ে তাদের উচিত বাংলাদেশের উন্নয়নে কাজ করা।’

বাংলার মানুষের বক্তব্য শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবতার নেত্রী সাধারন মানুষদের মাঝে আস্থা করে নিচ্ছেন। সম্প্রতি শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার জনপ্রিয় নেতা মন্তব্য করেছেন ভারতের লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন। ফ্রান্সিস এবং বিল গেটসকে পিছনে ফেলে ২০১৭ সালে বিশ্বের সবচেয়ে মানবিক মানুষ মনোনীত হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে যেভাবে গোছাতে চেয়েছিলেন, যে উচ্চতায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু তা পূরণ হয়নি ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের কালরাত্রির কারণে। এরপর যেসব কুচক্রি মহল বাংলাদেশের শাসনক্ষমতা নিজেদের কুক্ষিগত করেছিল তারা ব্যস্ত ছিল হত্যা, লুণ্ঠন, ক্যু আর দুর্নীতিতে।

একটা দেশকে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে তুলে ধরতে যে শক্তি, মনোবল, দৃঢ়তা, ইচ্ছা আর পরিকল্পনার প্রয়োজন ছিল তার কোনোটাই ছিল না বঙ্গবন্ধু পরবর্তী সরকারগুলোর মধ্যে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার স্বপ্ন ছিল। স্বপ্ন ছিল বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে সোনার বাংলা বানানোর। তার ফলশ্রুতিতে তিনি বিদেশ থেকে শত বৈরিতা সত্ত্বেও, জীবনবাজি রেখে দেশে ফিরে এসে হাল ধরেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর। একের পর বাধা, চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ছিন্ন করে শেখ হাসিনা তার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে নিয়ে গিয়েছেন বিশ্ব মঞ্চের এক অনন্য উচ্চাতায়।

বাংলার গণমানুষের নন্দিত নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ৭২ বছরে পদার্পণ করছেন। তার শুভজন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ সারাদেশের মানুষ দীর্ঘায়ু কামনা করে দোয়া ও আশীর্বাদ করছে।

দীর্ঘ তিন যুগ সাফল্যের সঙ্গে মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদানকারী দল আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়ে, গণরায়ে অভিষিক্ত করে তিনবার সরকারে অধিষ্ঠিত হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। নিষ্ঠার সঙ্গে, সততার সঙ্গে, অত্যাচার-অবিচার সহ্য করে, জেল-জুলুম-নির্যাতন ভোগ করে আওয়ামী লীগকে বাংলার মানুষের কাছে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭ সালে টুঙ্গিপাড়া গ্রামে তাঁর জন্ম হয়। সময়টা ভারত ভাগের উত্তালে মাতোয়ারা। মূল্যবোধ, রাজনীতি, দর্শন, দেশ ধর্ম দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে নতুন জাতি সত্তা তৈরি হচ্ছে। শেখ হাসিনার জন্মের সময়ে তাঁর পিতা শেখ মুজিব খুবই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কলকাতাতে ভারত ভাগের পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে।

দাঙ্গা প্রতিরোধ, রাজনীতি, আন্দোলন আর লেখাপড়া নিয়ে তিনি তখন মহাব্যস্ত। তাই জন্মের পরেই পিতার স্নেহ পাননি শেখ হাসিনা। দাদা এবং দাদির প্রথম স্নেহ মমতা নিয়ে শেখ হাসিনার জন্ম। প্রিয় নাতনির নাম রাখেন দাদা ‘হাসিনা’।

আহসান আমীন, প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, বরিশাল জেলা