Bankদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক এখন খেলাপি ঋণের শীর্ষ স্থান দখল করেছে। এক সময়ে ব্যাংকটি আদর্শ বলে খ্যাত ছিল। এ ব্যাংকের ৯ হাজার ১৪৪ কোটি টাকাই এখন খেলাপি। যা বিতরণ করা মোট ঋণের ৬১ দশমিক ৭২ শতাংশ। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বেসিক ব্যাংক বিতরণ করেছে ১৪ হাজার ৮১৪ কোটি টাকার ঋণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

বেসিক ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ভুয়া কোম্পানির নামে জালিয়াতির মাধ্যমে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ওইসব ঋণ এখন আদায় না হওয়ায় খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে। তবে ব্যাংকটিকে বাঁচাতে বার বার জনগণের করের টাকা দেওয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে দেশের কোনও ব্যাংকই ভালো অবস্থায় নেই। ব্যাংকগুলোতে সুশাসন না থাকায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দেখা যাবে অনেকগুলো ব্যাংক ঠিকমতো চলতেই পারছে না। তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংক ও ফারমার্স ব্যাংকের পরিস্থিতির জন্য যারা দায়ী, তাদের শাস্তি দেওয়া জরুরি। তা না হলে ব্যাংক খাতে সুশাসন ফিরবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিতরণ করা ঋণের ৫৭ দশমিক ৮২ শতাংশই খেলাপি হয়েছে নতুন প্রজন্মের ফারমার্স ব্যাংকে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটি ঋণ বিতরণ করেছে ৫ হাজার ৩১১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে প্রায় ৩ হাজার ৭১ কোটি টাকা। গত জুনে এই ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এই ব্যাংক থেকেও জালিয়াতির মাধ্যমে মোটা অঙ্কের ঋণ বেরিয়ে গেছে। যেগুলো এখন ফেরত আসছে না। ফলে তা খেলাপিতে পরিণত হচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিতরণ করেছে ১ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৮৪৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৫৫ দশমিক ১০ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, শতাংশ হিসাবে খেলাপি ঋণে সবার শীর্ষে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে এই ব্যাংকটি বিতরণ করেছে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা । এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ১ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা, যা মোট ঋণ বিতরণের ৯৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। অধিকাংশ ঋণ খেলাপি হওয়ায় ব্যাংকটির কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।

শতাংশ হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঋণ খেলাপি হওয়া ব্যাংকটি হলো আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ব্যাংকটি বিতরণ করেছে ৮৪৪ কোটি টাকা । এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৭০৯ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৮৩ দশমিক ৯২ শতাংশ। এই ব্যাংক থেকেও প্রায় ৭০০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত নয় মাসের (জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর) ব্যবধানে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ২৫ হাজার ৫৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে পাঁচটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫০ থেকে ৯৪ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকি খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ৭৪ হাজার ৩১৮ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের ঋণ বেড়ে হয়েছে ৮ লাখ ৬৮ হাজার ৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। গত জুনে যা ছিল ৮৯ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৩০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গত সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বাড়লেও আগামী ডিসেম্বর প্রান্তিকে খেলাপি ঋণ কমে আসবে।’ তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলোকে খেলাপি আদায়ে নির্দেশ দেওয়া আছে। ব্যাংকগুলো আদায় বাড়ালেই খেলাপি ঋণ কমে আসবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, পরিমাণের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে জনতা ব্যাংকে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই ব্যাংকটি ঋণ বিতরণ করেছে ৪৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ১৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণ বিতরণের ৩১ দশমিক ৩১ শতাংশ।

একই সময়ে সোনালী ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেছে ৩৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ১২ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণ বিতরণের ৩৪ দশমিক ০৪ শতাংশ।

রূপালী ব্যাংক বিতরণ করেছে ২২ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে, যা মোট ঋণের ২২ দশমিক ২৪ শতাংশ।

বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেছে ২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৫৫৭ কোটি টাকা, যা মোট ঋণ বিতরণের ২৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ঋণ বিতরণ করেছে ১৮ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ৩ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণ বিতরণের ২০ দশমিক ৭৩ শতাংশ। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের বিতরণ করা ৫ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ১ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা খেলাপিতে পরিণত হয়েছে, যা মোট ঋণের ২৫ দশমিক ১৪ শতাংশ।