bangladesh bank nbrদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কোনো কোনো করদাতার সঠিক তথ্য পাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে এমন অভিযোগ করেছে সরকারের রাজস্ব আহরণকারী সংস্থাটি। এনবিআর বলেছে, কোনো কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান করদাতার ব্যাংক হিসাব ও লেনদেন সম্পর্কে ভুল তথ্য প্রদান করছে।

আবার ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে করদাতার অ্যাকাউন্ট থাকার পরও আংশিক কিংবা শূন্য বিবরণী দাখিল করা হচ্ছে। এদের অনেকে কর ফাঁকি দেওয়ায় রাজস্ব আহরণে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে এনবিআর এ অভিযোগ করে।

মিথ্যা কিংবা আংশিক তথ্য দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে উল্লেখ করা হয় চিঠিতে। এতে রাজস্ব আয় বাড়ানোর স্বার্থে যথাযথ তথ্য দেওয়ার জন্য সংশ্নিষ্টদের অনুরোধ করা হয়। একই সঙ্গে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে গভর্নরের হস্তক্ষেপ চেয়েছে এনবিআর। কর ফাঁকি উদ্ঘাটনে সন্দেহজনক করদাতার আয়-ব্যয়ের যাবতীয় লেনদেনের তথ্য ব্যাংকগুলোর কাছে চাইতে পারে এনবিআর। এ বিষয়ে আয়কর আইনে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে কর্মকর্তাদের।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ঢালাওভাবে এমন অভিযোগ সঠিক নয়। এনবিআরের যে কোনো ধরনের তথ্য চাইলে তা দিতে বাধ্য ব্যাংকগুলো। তিনি বলেন, কিছু প্রতিষ্ঠান হয়তো সময়মতো তথ্য দেয় না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন তিনি। ব্যাংকগুলোর তথ্য গোপন করার কোনো ধরনের সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এনবিআর সূত্র জানায়, আয়কর আইন অনুযায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তথ্য গোপন করা কিংবা আংশিক তথ্য দেওয়া বা মিথ্যা তথ্য প্রদর্শন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। মূলত কর ফাঁকি দেওয়ার লক্ষ্যে তথ্য গোপন করা হয়। কর ফাঁকি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ এবং এ অপরাধ প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ তিন বছর এবং সর্বনিম্ন তিন মাসের জেলসহ জরিমানার বিধান রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো চিঠিতে এনবিআর উল্লেখ করেছে, আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪-এর ১১৩ ধারা অনুযায়ী, আয়কর কর্তৃপক্ষ করদাতার ব্যাংক হিসাব-সংক্রান্ত তথ্য প্রদানের জন্য ব্যাংক, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয়।

এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত লেনদেন-সংক্রান্ত তথ্য সঠিক আয় নিরূপণ ও এবং করারোপের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে, কোনো কোনো ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান করদাতার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের লেনদেন সম্পর্কে ভুল তথ্য দিচ্ছে।

এতে আরও উল্লেখ করা হয়, করদাতার একাধিক হিসাব থাকার পরও অনেক ক্ষেত্রে সবক’টির তথ্য দেওয়া হচ্ছে না কিংবা আংশিক তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। আবার অনেক ঘটনায় শূন্য বিবরণী পাঠানো হচ্ছে।

এ ছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য দিচ্ছে না অনেক ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান। এনবিআর আরও বলেছে, বর্তমানে দেশের সব ব্যাংক, লিজিং কোম্পানিসহ অন্যসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সব ধরনের লেনদেনের হালনাগাদ তথ্য সংরক্ষণ করা হয়।

এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর মনে করে, আয়কর বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী করদাতার লেনদেনের তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে ভুল-অসম্পূর্ণ তথ্য প্রদানের সুযোগ নেই। চিঠিতে এসব বিষয় তুলে ধরে করদাতার সঠিক তথ্য দেওয়ার জন্য গভর্নরকে অনুরোধ করা হয়।