teaদেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: চা উৎপাদনে আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। দেশের চা চাষের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে এবার। বছরের শুরুর দিকে চা চাষের আবহাওয়া কিছুটা প্রতিকূল থাকার পরও এমন রেকর্ড হল। এ বছর সব মিলিয়ে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার চা উৎপাদন হয়েছে। যেটা দারুণ এক সুখবর।

লন্ডনভিত্তিক ‘ইন্টারন্যাশনাল টি কমিটি’ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, চা উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে নবম। বেশ কয়েক বছর ধরেই দশম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। গত শতকের শেষে চা উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১১তম, ১৯৮৯ সালে ছিল ১২তম।

সংস্থাটির প্রতিবেদন হিসাবে, চা উৎপাদনে এখন শীর্ষে রয়েছে চীন। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভারত তারপর কেনিয়া, শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও আর্জেন্টিনা। বাংলাদেশের নিচে আছে জাপান, উগান্ডা, নেপাল, ইরান, মিয়ানমারের মতো দেশগুলো।

২০১৮ সালে সারা দেশের ১৬৬টি বাগানের চা উৎপাদনের হিসাব চূড়ান্ত করেছে চা বোর্ড। সে হিসাবে দেখা যায়, গত বছর চা উৎপাদন হয়েছে ৮ কোটি ২১ লাখ কেজি। এ হিসাবে গত বছর ৪ হাজার ১০৫ কোটি কাপ চা (প্রতি ২ গ্রামে এক কাপ চা) হয়েছে দেশে। ২০১৭ সালে চা উৎপাদন হয়েছিল ৭ কোটি ৮৯ লাখ কেজি। গত বছরের চেয়ে উৎপাদন বেড়েছে ৩১ লাখ কেজি বা ৪ শতাংশ। চা উৎপাদনে সর্বোচ্চ রেকর্ড হয় ২০১৬ সালে। সে বছর সাড়ে ৮ কোটি কেজি চা উৎপাদন হয়।

২০১৬ সালে চা চাষে পুরোপুরি অনুকূল আবহাওয়ার মধ্যে রেকর্ড হয়েছিল। এবার প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও উৎপাদন প্রত্যাশার চেয়ে ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাগানের মালিক ও চা বোর্ডের কর্মকর্তারা। চা বোর্ডও এবার ৭ কোটি ২৩ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন ৯৭ লাখ কেজি বা ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি হয়েছে।

সাধারণত ৩ থেকে ৫ বছরের গড় উৎপাদন হিসাব করে চায়ের উৎপাদনের ধারাবাহিকতা হিসাব করা হয়। গত ৩ বছরে গড় উৎপাদন ৮ কোটি ২০ লাখ কেজি। এর আগের ৩ বছরে (২০১৩-২০১৫) ছিল ৬ কোটি ৫৮ লাখ কেজি।

চা–বাগান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদের সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, কিছুটা প্রতিকূল আবহাওয়া বিবেচনায় নিলে এবার চা উৎপাদন খুবই ভালো হয়েছে। চা–বাগানগুলোতে এখন পুরোনো চারা উঠিয়ে নতুন চারা লাগানো হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া কয়েক বছর ধরে চলছে। তাতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী দিনে চা উৎপাদন যে বাড়বে তাতে সন্দেহ নেই।

২০০৯ সালে চা–শিল্পের উন্নয়নের জন্য নেওয়া কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে চা চাষের আওতা বাড়ানো হচ্ছে। সমতল ভূমিতে চা চাষ হচ্ছে। চা চাষের নতুন এলাকা উত্তরাঞ্চলে পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরে চায়ের উৎপাদন বাড়ছে। যেমন ২০১৭ সালে উত্তরাঞ্চলে চা উৎপাদন হয়েছিল ৫৪ লাখ কেজি। গত বছর উৎপাদন ৫৭ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৮৫ লাখ কেজি। বান্দরবানের রুমায় চা চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের উপপরিচালক (পরিকল্পনা) মো. মুনির আহমেদ বলেন, চা চাষের আওতা ও উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। চা উৎপাদনে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারও বেড়েছে। চা বোর্ড থেকে তদারকি করা হচ্ছে। সরকার এ খাতে উৎপাদন বাড়াতে যে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে তার কারণেই এবার কিছুটা প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেও উৎপাদনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড হয়েছে।

৮ বছর আগেও এ অবস্থা ছিল না চা–শিল্পে। উল্টো ২০১০ সাল থেকে চা আমদানি শুরু হয়। শঙ্কা ছিল চা আমদানিনির্ভর হয়ে পড়বে। ২০১৫ সালে সর্বোচ্চ ১ কোটি ১৪ লাখ কেজি চা আমদানি হয়। তবে এখন চাহিদার কাছাকাছি উৎপাদন হওয়ায় আমদানিও কমেছে। গত বছর চা বোর্ড ৬৫ লাখ কেজি চা আমদানির জন্য ব্যবসায়ীদের অনুমতি দিয়েছে।

অবশ্য দেশে ভোগ বাড়ায় চা রপ্তানি কমেছে। গত বছর সাড়ে ৬ লাখ কেজি চা রপ্তানি হয়। বাংলাদেশ থেকে চা রপ্তানি হচ্ছে পাকিস্তান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

চা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালিনীছড়া চা-বাগানের মাধ্যমে প্রথম বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চা চাষ শুরু হয়। বর্তমানে চা বোর্ডের নিবন্ধিত ১৬৬টি চা–বাগান রয়েছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজারে ৯১টি, হবিগঞ্জে ২৫টি, সিলেটে ১৯টি, চট্টগ্রামে ২২ টি, পঞ্চগড়ে ৭টি, রাঙামাটিতে ২টি ও ঠাকুরগাঁওয়ে ১টি চা–বাগান রয়েছে। এসব বাগানে মোট জমির পরিমাণ ২ লাখ ৭৯ হাজার ৪৩৯ একর।