দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি শেয়ারবাজার। এই বাজারের সঙ্গে মুদ্রানীতি সরাসরি সম্পৃক্ত। তবে মুদ্রানীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেওয়া হয় না। যাতে মুদ্রানীতিতে শেয়ারবাজারের স্বার্থ অবহেলিত থাকে।

এছাড়া মুদ্রানীতি ঘোষণার আগে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নানা ধরনের গুজব তৈরী হয়। যা বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তবে এ সমস্যা উত্তরনে আগামিতে মুদ্রানীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ফজলে কবির।

শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘মানিটারি পলিসি স্টেটমেন্ট : ইমপ্লিকেশন অন প্রাইভেট সেক্টর’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানিয়েছেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ডিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট ওসামা তাসীর এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াকার আহমদ চৌধুরী।

এর আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, মুদ্রানীতির সঙ্গে শেয়ারবাজারের যে গভীর সর্ম্পক্য রয়েছে, সেটা সবাই মূলত বুঝতে পেরেছে ২০১০ সালের পরে।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই মুদ্রানীতি প্রণয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক কখনোই শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদেরকে গুরুত্ব দেয়নি। তাই আগামিতে মুদ্রানীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরের কাছে দাবি জানান।

এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এর সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট মতামত তুলে ধরা যেতে পারে।

তিনি বলেন, মুদ্রানীতি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শেয়ারবাজারে আগেই বিভিন্ন ধরনের গুজব ও আতঙ্ক তৈরী হয়। কিন্তু মুদ্রানীতি প্রণয়নে যদি আমাদের অংশগ্রহণ থাকে, তবে সেই সমস্যা কেটে যাবে। এছাড়া মুদ্রানীতির কারনে অনাকাঙ্খিত কোন ঘটনা ঘটার সুযোগ থাকবে না।

মিনহাজ মান্নান ইমনের দাবির সাথে সম্মতি জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর জানিয়েছেন, আগামিতে মুদ্রানীতি প্রণয়নে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের মতামত নেওয়ার বিষয়ে করণীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

অনুষ্ঠানে ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি মো: শাকিল রিজভী বলেন, দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের ক্ষেত্রে ঋণের পরিবর্তে শেয়ারবাজারকে উৎসাহিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বিএসইসির ন্যায় বাংলাদেশ ব্যাংককে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। তাহলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমে আসবে। এতে দেশের অর্থনীতি শক্ত হবে। যেটা আমেরিকার মতো দেশে করা হয়। অন্যথায় আমেরিকাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাংলাদেশের চেয়ে বেশি হতে পারত।

শাকিল রিজভী বলেন, শেয়ারবাজারের মূলধনের ৪০ শতাংশ ব্যাংকের দখলে। যাতে ব্যাংকের শেয়ার দর উঠানামায় শেয়ারবাজারে বড় প্রভাব পড়ে। এরমধ্যে কিছু ব্যাংক বিনিয়োগকারীদেরকে আকৃষ্ট করার জন্য অনিরীক্ষিত প্রান্তিক হিসাবগুলোতে অতিরঞ্জিত মুনাফা দেখায়।

বিশেষ করে প্রদত্ত ঋণের বিপরীতে সম্ভাব্য ঝুকির জন্য সঠিক সঞ্চিতি (প্রভিশনিং) গঠন না করে এমনটি করা হয়। তবে বছরের চূড়ান্ত ও নিরীক্ষত আর্থিক হিসাবে ব্যাংকের প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসে। তখন সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শেয়ারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

এতে পুরো শেয়ারবাজার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরের প্রতি তিনি আহবান করেছেন। এছাড়া ইচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর হতে এবং অনিচ্ছাকৃত খেলাপি ঋণ আদায়ে নমনীয় হওয়ার আহবান করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের প্রতিটি লেনদেনের জন্য নিরীক্ষা করাতে হয়। এক্ষেত্রে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের হয়রানি ও অর্থ ব্যয় হয়। তবে ভারতে এ জাতীয় সমস্যা নাই। তাই দেশের শেয়ারবাজারের স্বার্থে এই সমস্যা কাটিয়ে উচিত। এছাড়া শেয়ারবাজারকে এগিয়ে নিতে বন্ড মার্কেট চালু করা উচিত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত আগামি ৫ বছরের সুদের হার কেমন হবে, তা আগাম ধারনা দেওয়া উচিত বলে মনে করেন শাকিল রিজভী। যাতে ব্যবসায়িদেরকে সুদের হারের উঠানামা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করতে না হয়। এছাড়া আমানতকারী ও ঋণগ্রহিতার মধ্যে সুদের হারের ব্যবধান কমিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

ব্যাংকগুলোর অনিরীক্ষিত আর্থিক হিসাবে সঞ্চিতি ঘাটতির মাধ্যমে অতিরঞ্জিত মুনাফা দেখানোর বিষয়টি দেখবেন বলে জানিয়েছেন গভর্ণর ফজলে কবির। এছাড়া শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।