দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াতে আগামী অর্থবছর করপোরেট করহার কমানোর দাবি করেছে মেট্রোপলিটন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই)। একইসাথে আয়কর মুক্ত সীমা সাড়ে ৪ লাখ টাকা করা, ব্যক্তিশ্রেণীর সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ করাসহ সিএসআরের পূর্ণাঙ্গ ব্যয়ের ওপর কর রেয়াত সুবিধা রাখার দাবি এমসিসিআইয়ের।

রোববার বিকেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে প্রাক-বাজেট আলোচনায় এসব দাবি করা হয়েছে। সভায় এমসিসিআইয়ের ট্যারিফ-ট্যাক্সেশন কমিটির চেয়ারম্যান আদিব এইচ খান এসব দাবি তুলে ধরেন। সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সভাপতিত্ব করেন।

প্রাক-বাজেট আলোচনায় এমসিসিআই বিনিয়োগ স্কিমে অনুমোদিত বিনিয়োগের হার বাড়ানো, কোম্পানির বিদেশি ভ্রমণ ব্যয়ের সীমা ২ শতাংশে উন্নীত করা, লোকসানী কোম্পানির পরামর্শ সেবায় কর অব্যাহতি, সারচার্জের সীমা বাড়ানো, ভ্যাটের স্ল্যাব ভিত্তিক করহার অব্যাহত রাখা, মূলধনী যন্ত্রাংশ ও মধ্যম পর্যায়ের কাঁচামাল আমানিতে শুল্ক কমানোসহ আয়কর শুল্ক ও ভ্যাটের ৭৬টি সংশোধনী দাবি রাখেন।

বর্তমানে করদাতার সর্বোচ্চ করহার ২৫ শতাংশ করা হলে করদাতারা আয়কর রিটার্নে সঠিক তথ্য উপস্থাপনে উৎসাহী হবে মন্তব্যে এমসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি গোলাম মাঈনুদ্দীন বলেন, আমরা নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নে এনবিআরকে সহযোগিতা করতে চাই।

তিনি আরও বলেন, কর কর্তৃপক্ষের বিশেষ বিবেচনা প্রয়োগ করার সমতা বিলোপ করতে হবে। এর অপব্যবহারের কারণে করদাতাকে প্রায়ই বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। দেশীয় শিল্পের উন্নয়নের জন্য আমদানি শুল্কের ক্ষেত্রে অসামঞ্জস্য রয়েছে তা বিবেচনা করা, মৌলিক কাঁচামাল ও অন্তর্বর্তী কাঁচামালের উপর শুল্ককর কমানো উচিত।

রয়্যালটি, কারিগরি সেবা ফি, কারিগরি জ্ঞান ফি খাতে কর্তনের অনুমোদনযোগ্য সীমা হিসেবে হিসাব বিবরণীতে প্রকাশিত নিট লাভের ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নির্দেশিকা ও বিডার অনুমোদন ব্যতীত এসব খাতের অধীনে ৬ শতাংশ বৈদেশিক রেমিট্যান্স টার্নওভার অনুমোদন করে। এটা ব্যবসা করার খরচ কমানোর জন্য একটি প্রতিবন্ধক। এসব খাতে সব ব্যয় অনুমোদন-যোগ্য ব্যয় হিসেবে গণ্য করার দাবি করেন।

তিনি বলেন, প্রথম সাত মাসে রাজস্ব ঘাটতি প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা। অতীতে দেখেছি, এনবিআর ঘাটতি পূরণে এলটিইউয়ের অধীনে ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের উপর অতিরিক্ত করের বোঝা আরোপ করে। যা এসব করাতাদের শাস্তির তুল্য। ভবিষ্যতে এলটিইউতে বড় প্রতিষ্ঠান আসতে নিরুৎসাহিত করবে।

রাজস্ব ঘাটতি পূরণে বিকল্প সমাধান খুঁজে বের করা উচিত। এছাড়া এমসিসিআই আয়ের পক্ষ থেকে নতুন ভ্যাট আইনে মূল্য ঘোষণা রাখা, আমানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাটের সাথে ৩ শতাংশ এআইটি ও ৫ শতাংশ এটিভি প্রত্যাহার, ভ্যাট সেবা বাড়াতে ইন্ডাস্ট্রি অনুযায়ী স্পেশাল ভ্যাট কমিশনারেট করার দাবি রাখেন।

সভায় এসিআইয়ের চেয়ারম্যান আনিস উদ দৌলা বলেন, আয়কর আইনের বেশকিছু সমস্যা ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে। সাধারণ নিয়মে আয় হলেই কেবল আয়কর দিতে হয়। কিন্তু আমাদেরকে লোকসানি প্রতিষ্ঠানের বেলায়ও কর দিতে হচ্ছে। বেশি বেতনের কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে দ্বৈত কর পরিশোধ করতে হয়। আয়কর আইনের পারকিউজি হিসাবের কারণে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা বেতনভোগীকে নিয়মিত করের বাইরে ফের কর দিতে হয়। এটি আয়কর আইনের পরিপস্থি।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, প্রতিবছরই ব্যবসায়ীদের অভিযোগ থাকে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ বাজেটে প্রতিফলিত হয় না। এ অভিযোগ থেকে বের হয়ে আসতে চাই আমরা। বাজেটে ব্যবসায়ীদের দাবিগুলো রাখতে চেষ্টা থাকবে এনবিআরের। করপোরেট করহার কমানোর বিষয়টি সব মহল থেকেই দাবি করা হচ্ছে এমন উক্তি করে তিনি বলেন, পর্যালোচনা করে দেখছি করপোরেট করহার কমানোর ব্যাপারে।