দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বিতর্কিত বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আসা এস্কয়্যার নিটের শেয়ার দর নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এর আগে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে বাজারে আসা কোম্পানিগুলোর পুঁজিবাজারে আসার পরই উচ্চ দরে লেনদেন শুরু হয়। এর কিছুদিন পরই ওইসব শেয়ার দরে ধস নামে। তাই এসকোয়্যার নিট কম্পোজিটের ক্ষেত্রেও বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগে ঝুঁকিপুর্ণ বলে বাজার বিশ্লেষকরা মতামত দিয়েছেন।

তাই অতিরিক্ত দরে এ শেয়ারটি না কেনার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গত মঙ্গলবার লেনদেনের প্রথম দিনেই কাট-অফ প্রাইসের কাছে অবস্থান করছে এস্কয়্যার নিট কম্পোজিটের শেয়ার দর। যদিও এ পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে আসা অন্য

কোম্পানিগুলোর মধ্যে অর্ধেকের বেশি এরইমধ্যে কাট-অফ প্রাইসের নিচে নেমে এসেছে। তবে সেগুলো লেনদেনের কয়েক মাস পরে এসেছে। তালিকাভুক্তির পর পুঁজিবাজারে প্রথম কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে মাত্র ৭০ পয়সা। আর লেনদেনের প্রথম দিনে কোম্পানির শেয়ার দর কাট-অফ প্রাইসের কাছে অবস্থান করলেও দ্বিতীয় দিনেই কাট-অফ প্রাইসের নিচে অবস্থান করছে। আজ বুধবার কোম্পানির শেয়ার দর ২.১০ টাকা বা ৪.৫৮ শতাংশ কমে ৪৩.৩০ টাকায় ক্লোজিং হয়েছে। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৪৫ টাকা কাট-অফ প্রাইসের এস্কয়্যার নিটের শেয়ারটি আজ ৪৫.৯০ টাকা দরে লেনদেন শুরু হলেও ৪৩.৩০ টাকায় লেনদেন ক্লোজিং হয়। তবে সর্বশেষ ৪৩.৮০ টাকায় কোম্পানির শেয়ার দর লেনদেন হয়েছে আর সারাদিনে কোম্পানির শেয়ার দর ৪২.৮০ টাকা থেকে ৪৭ টাকায় উঠানামা করে। আজ কোম্পানিটির ১৪ লাখ ১৫ হাজার ৮১টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ৬ কোটি ৩৪ লাখ ৩০ হাজার টাকায় লেনদেন হয়েছে। এসব শেয়ার হাত বদল হয়েছে ১২ হাজার ৬১৫ বার।

এদিকে, চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জে (সিএসই) কোম্পানির শেয়ার দর ৪২.৮০ টাকায় ক্লোজিং হয়। সারাদিনে কোম্পানির শেয়ার দর ৪২ টাকা থেকে ৪৬.২০ টাকায় উঠানামা করে সর্বশেষ ৪৩.৫০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। এদিন কোম্পানিটির ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৩৩৩টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যা ২ কোটি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকায় লেনদেন হয়েছে। এসব শেয়ার হাত বদল হয়েছে ৪ হাজার ৮৩৬ বার।

এস্কয়ার নিটের আগে দেশের পুঁজিবাজারে প্রিমিয়াম নিয়ে তালিকাভুক্ত হওয়া কোনো কোম্পানির শেয়ার দাম লেনদেনের প্রথমদিন এতো কম বাড়েনি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বুক বিল্ডিংয়ে কোম্পানির কাট-অফ প্রাইস অতিমূল্যায়িত হচ্ছে বলে অনেক দিন ধরেই পদ্ধতিটি বিতর্কিত। যা এই পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে আসা একমি ল্যাবরেটরিজ, আমান কটন ফাইবার্স ও বসুন্ধরা পেপারের শেয়ার দর কাট-অফ প্রাইসের নিচে নামার মাধ্যমে আরও জোড়ালো হয়েছে। তাই বিতর্কিত বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আসা কোম্পানিটির শেয়ার দর নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

এর আগে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে বাজারে আসা কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে আসার পরই উচ্চ দরে লেনদেন শুরু হয়। এর কিছুদিন পরই ওইসব শেয়ার দরে ধস নামে। এসকোয়্যার নিট কম্পোজিটের ক্ষেত্রেও সেরকম হবে বলে ধারণা করছেন বিনিয়োগকারীরা। তাই অতিরিক্ত দরে এ শেয়ারটি না কেনার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

হঠাৎ করে আয় ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখিয়ে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন নেওয়া ৭৫ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দরে ধস নেমেছে। বিশেষ করে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ারের দাম বাড়িয়ে পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলনকারী বেশ কয়েকটি কোম্পানির হাজার হাজার বিনিয়োগকারী সর্বস্বান্ত হতে চলেছেন। ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫টি কোম্পানি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে।

কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ও ইস্যু ম্যানেজারের পরিকল্পনা অনুসারে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে তৈরি করা প্রসপেক্টাস দিয়ে টাকা তুলে নেওয়া কোম্পানিগুলো হচ্ছে: আমান কটন ফাইবারর্স, একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, এমজে এল বাংলাদেশ লিমিটেড, এম আই সিমেন্ট ও আরকে সিরামিক লিমিটেড। এসব কোম্পানির শেয়ারের দাম এখন কাট-অব প্রাইসের নিচে অবস্থান করছে। অর্থাৎ পুঁজিবাজারে আসার সময় কোম্পানিগুলো যে দামে শেয়ার বিক্রি করে টাকা উত্তোলনে করে টাকা তুলে নিয়েছে এখন সেই দামের নিচে।

দেখা যায়, ২০১০ সাল থেকে ২০১৯ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত মোট আটটি কোম্পানি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এর মধ্যে ছয়টি কোম্পানির শেয়ারের দাম কাট-অব প্রাইসের নিচে চলে এসেছে। যা শতাংশের হিসেবে ৭৫ শতাংশ। তালিকাভুক্ত হওয়ার পরপরই এই করুণ পরিণতির পেছনের কারণ পুঁজিবাজারে আসার সময় কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের দাম অতিরঞ্জিত করা হয়েছে।

এই চক্রের সঙ্গে জড়িত রয়েছে ব্রোকারেজ হাউজ, কোম্পানি ও মার্চেন্ট ব্যাংকাররা। স¤প্রতি দুটি কোম্পানির শেয়ার কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকায় অর্ধশত প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করা হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আইনি দুর্বলতা ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার কারণে কারসাজি চক্র সুযোগ নিচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

তথ্য বিশ্লেষনে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের প্রথম দিকে ৪০ টাকা দরে দুই কোটি আট লাখ ৩৩ হাজার শেয়ার বিক্রি করে পুঁজিবাজার থেকে ৮০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে আমান কটন ফাইবার্স লিমিটেড। কোম্পানির লেনদেন শুরু হয় গত বছরের ১৫ মে। আজ ৯ এপ্রিল তা নেমে আসে ৩১ টাকা ৯০ পয়সায়।

ওষুধ খাতের কোম্পানি একমি ল্যাবরেটরিজের কাট-অব প্রাইস ছিল ৮৫ দশমিক ২০ টাকা। আজ ৯ এপ্রিল শেয়ারটির সর্বশেষ দাম ছিল ৭৯ টাকা ৪০ পয়সা। ২০১৬ প্রতিষ্ঠানটি পুঁজিবাজার থেকে ৪০৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা সংগ্রহ করে।

২০১১ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া এমজেএলের কাট-অব প্রাইস ছিল ১৫২ দশমিক ৪০ টাকা। সেখান থেকে প্রতিটি শেয়ারের দাম আজ ৯ এপ্রিল নেমে এসেছে ৯৬ টাকায়। একই বছর তালিকাভুক্ত হয় সিমেন্ট খাতের আরেক কোম্পানি এম আই সিমেন্ট। সেই সময় শেয়ারটির কাট-অব প্রাইস ছিল ১১১ দশমিক ৬০ টাকা।

আজ ৯ এপ্রিল শেয়ারটি সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৭১ দশমিক ৭০ টাকায়। এছাড়াও ২০১০ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া আরকে সিরামিকের শেয়ারের কাট-অব প্রাইস ছিল ৪৮ টাকা। শেয়ারটির দাম ৯ এপ্রিল ছিল ৩৩ টাকা।