দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের মুনাফা বাড়লেও ডিভিডেন্ডের ক্ষেত্র পিছিয়ে রয়েছে। সপ্তাহ অর্থবছরে কোম্পানিগুলোর ডিভিডেন্ড পলিসি বিশ্লেষণ করে এ তথ্য দেখা গেছে। তবে দেশের অধিকাংশ ব্যাংকই রয়েছে মুনাফার ধারায়। অনেক ব্যাংক আগের বছরের চেয়েও বেশি মুনাফা করেছে। যদিও এটি প্রকৃত মুনাফা নয়।

আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে যে মুনাফা থাকে, সেটিই কোনো ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা। পরিচালন মুনাফা থেকে খেলাপি ঋণ ও অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) এবং সরকারকে কর প্রদান করতে হয়। প্রভিশন ও কর-পরবর্তী এ মুনাফাই হলো একটি ব্যাংকের প্রকৃত বা নিট মুনাফা।

তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অধিকাংশ ব্যাংকেরই পরিচালন মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এই মুনাফা কতটা টিকবে সেটা একটা বিষয়। কারণ ব্যাংকিং খাতে প্রচুর পরিমাণে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণ এবং আয়কর প্রদান-পরবর্তী নিট মুনাফা অনেক কমে যাবে।

এদিকে আগের বছরের তুলনায় ২০১৮ সালে তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর ২ হাজার ১২৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন বেড়েছে। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা বেড়েছে ৩৯৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। যাতে ব্যাংকগুলোর ২০১৮ সালে ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা নিট মুনাফা হয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি মুনাফা হয়েছে ইসলামী ব্যাংকের। ব্যাংকগুলোর ২০১৮ সালের সমন্বিত (সাবসিডিয়ারিসহ) আর্থিক হিসাব থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

তালিকাভুক্ত ৩০ ব্যাংকের ২০১৭ সালের শুরুতে মোট ২৫ হাজার ৭৩৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন ছিল। যা এখন বেড়ে হয়েছে ২৭ হাজার ৮৬০ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আর ওই বছরের ৬ হাজার ৪০১ কোটি ৪০ লাখ টাকার নিট মুনাফা বেড়ে ২০১৮ সালে হয়েছে ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

দেখা গেছে, তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৬৩১ কোটি ১২ লাখ টাকা মুনাফা করে শীর্ষে উঠে এসেছে ইসলামী ব্যাংক। এরপরে ৫৫৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে নেমেছে ব্র্যাক ব্যাংক। তৃতীয় সর্বোচ্চ ৪২০ কোটি ২০ লাখ টাকা মুনাফা হয়েছে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের।

২০১৮ সালে একমাত্র আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লোকসান করে সবার তলানিতে রয়েছে। ব্যাংকটির ৪৮ কোটি ৫২ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এরপরে সবচেয়ে কম মুনাফা হয়েছে এবি ব্যাংকের। এ সময় ব্যাংকটির ৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা মুনাফা হয়েছে। আর ৪১ কোটি ৪ লাখ টাকা নিয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন রূপালি ব্যাংকের ও ১২৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা নিয়ে তৃতীয় সর্বনিম্ন মুনাফা হয়েছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের।

তালিকাভুক্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি পরিশোধিত মূলধন রয়েছে। ব্যাংকটির ২ হাজার ৬৫৪ কোটি ৯১ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন রয়েছে। তবে ব্যাংকটি মুনাফার হিসাবে রয়েছে চতুর্থ স্থানে। এরপরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬১০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে ইসলামী ব্যাংক মুনাফায় প্রথম স্থানে রয়েছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৪১২ কোটি ২৫ লাখ টাকার তৃতীয় সর্বোচ্চ পরিশোধিত মূলধন নিয়ে এক্সিম ব্যাংক মুনাফায় ১১তম অবস্থানে রয়েছে।

অপরদিকে সবচেয়ে কম ২০০ কোটি টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে ডাচ-বাংলা ব্যাংক মুনাফায় ৩য় স্থানে রয়েছে। এরপরে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ৩৭৬ কোটি ৫২ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে মুনাফায় ২য় সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে রূপালি ব্যাংক। এছাড়া তৃতীয় সর্বনিম্ন ৪০০ কোটি ৮ লাখ টাকার পরিশোধিত মূলধন নিয়ে মুনাফায় ২০তম অবস্থানে রয়েছে উত্তরা ব্যাংক।

বর্তমানে ১০টি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার কোটি টাকার উপরে রয়েছে। ব্যাংকগুলো হল- ন্যাশনাল ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, আইএফআইসি ব্যাংক ও প্রাইম ব্যাংক।

অন্যদিকে চাহিদার তুলনায় জোগানের আধিক্যে অবমূল্যায়িত্ব হচ্ছে পুঁজিবাজারের সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ার। অবমূল্যায়িত্ব বাজারে ক্যাটাগরি রক্ষায় শুধু স্টক বা বোনাস ডিভিডেন্ড ঘোষণা করছে ব্যাংকিং খাতের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো। স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করায় ব্যাংকগুলো ডিভিডেন্ড পে-আউট রেশিও বা ডিভিডেন্ড প্রদানের অনুপাত দাঁড়িয়েছে শূন্য। এতে করে কোম্পানির মূলধন ও দায় বাড়লেও শেয়ার দরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

ডিভিডেন্ড পে-আউট রেশিও শূন্য হওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্র্যাক ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনাইটেড কমর্সিয়াল ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ব্র্যাক ব্যাংক: ব্যাংকটি বিনিয়োগকারীদের ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ১৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আলোচিত সময় ব্যাংকটির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ৫.১৭ টাকা।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ: ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ সমাপ্ত বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আলোচিত সময়ে কোম্পানির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩.৯২ টাকা এবং এককভাবে ৩.৭৭ টাকা। আগের বছর একই সময়ে সমন্বিত ইপিএস ছিল ৩.০৬ টাকা এবং এককভাবে ২.৯১ টাকা।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক: ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ সমাপ্ত বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আলোচিত সময়ে কোম্পানির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১.৭৩ টাকা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ১.৪১ টাকা।

ওয়ান ব্যাংক: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ সমাপ্ত বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দেওয়ার সুপারিশ করেছে কোম্পানিটি। আলোচিত সময়ে কোম্পানির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ১.৮৪ টাকা। এর আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ৩.৪২ টাকা।

রূপালী ব্যাংক: রূপালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ সমাপ্ত বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দেওয়ার সুপারিশ করেছে। আলোচিত সময়ে কোম্পানির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ১.০৯ টাকা। এর আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ১.৬০ টাকা।

সাউথইস্ট ব্যাংক: সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ সমাপ্ত বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দেওয়ার সুপারিশ করেছে। আলোচিত সময়ে কোম্পানির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ২.৩৫ টাকা। এর আগের বছর একই সময়ে সমন্বিত ইপিএস ছিল ১.১১ টাকা।

মার্কেন্টাইল ব্যাংক: মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ সমাপ্ত অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ৩.৫৯ টাকা ও এককভাবে হয়েছে ৩.৬৮ টাকা।

স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক: স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ সমাপ্ত অর্থবছরের বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সমন্বিত মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ২ টাকা ৩৫ পয়সা। এককভাবে হয়েছে ২.৩৩ টাকা।

সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক: এসআইবিএল পরিচালনা পর্ষদ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ সমাপ্ত বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দেওয়ার সুপারিশ করেছে। আলোচিত সময়ে কোম্পানির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ১.৯৭ টাকা। এর আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ১.৮০ টাকা।

ইউনাইটেড কমর্সিয়াল ব্যাংক: ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ সমাপ্ত বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দেওয়ার সুপারিশ করেছে। আলোচিত সময়ে কোম্পানির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ২.৫২ টাকা। এর আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ২.৫৮ টাকা।

ন্যাশনাল ব্যাংক: ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ সমাপ্ত বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড দেওয়ার সুপারিশ করেছে। আলোচিত সময়ে কোম্পানির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ১.৪৫ টাকা। এর আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ১.৮১ টাকা।

প্রিমিয়ার ব্যাংক: প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিনিয়োগকারীদের ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ১৫.৫০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ২.৮৪ টাকা এবং এককভাবে ২.৭৮ টাকা। আগের বছর একই সময়ে সমন্বিত ইপিএস ছিল ২.৪৬ টাকা এককভাবে ছিল ২.৩৯ টাকা।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক: ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিনিয়োগকারীদের ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য ১০ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সমন্বিত আয় (ইপিএস) হয়েছে ২.০৩ টাকা। আগের বছর একই সময়ে সমন্বিত ইপিএস ছিল ১.৭২ টাকা।

আইসিবি ইসলামী ব্যাংক: ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ সমাপ্ত বছরে বিনিয়োগকারীদের কোনো প্রকার ডিভিডেন্ড না দেওয়ার সুপারিশ করেছে। আলোচিত সময়ে কোম্পানির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ০.৭৩ টাকা। যা এর আগের বছর একই সময়ে লোকসান ছিল ০.৬১ টাকা।