দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ২০১৭ সালের গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ ধূমপায়ী। এ হিসেবে বাংলাদেশে নিয়মিত ধূমপান করেন প্রায় দেড় কোটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। ধূমপায়ীর এ হার প্রতিবছরই বাড়ছে। এর সঙ্গে বাড়ছে সিগারেট বিক্রির পরিমাণও।

গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের শীর্ষ সিগারেট উৎপাদনকারী কোম্পানি ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের (বিএটি বাংলাদেশ) সিগারেট বিক্রি বেড়েছে ৩২ শতাংশ। এতে সিগারেট উৎপাদনকারী কোম্পানির মুনাফা যেমন বাড়ছে, তেমনি সরকারও বিপুল পরিমাণের রাজস্ব পাচ্ছে।

দেশে সিগারেটের বাজারের দুই-তৃতীয়াংশের দখল রয়েছে বিএটি বাংলাদেশের। এ কোম্পানির গত পাঁচ বছরের নিরীক্ষিত বার্ষিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৪ সালে বিএটি বাংলাদেশ ৩ হাজার ৯০১ কোটি পিস (স্টিক) সিগারেট বিক্রি করেছিল দেশের বাজারে। ২০১৮ সালে কোম্পানির সিগারেট বিক্রির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ১৪২ কোটি ৫০ লাখ পিস। এতে পাঁচ বছরে এ কোম্পানির সিগারেট বিক্রির পরিমাণ বেড়েছে ৩১ দশমিক ৮১ শতাংশ।

২০১০ সালে বিএটিবি মোট ২ হাজার ৬০৬ কোটি পিস সিগারেট বিক্রি করে, যা থেকে টার্নওভার ছিল ৬ হাজার ৩২৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। শুধু সিগারেটের বিক্রিতে নয়, আয়েও বড় ধরনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে গত পাঁচ বছরে। ২০১৪ সালে বিএটি বাংলাদেশের সিগারেট বিক্রি থেকে আয় হয় ১২ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা, যা ২০১৮ সাল শেষে ২৩ হাজার ৩১২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। এ সময়ে সিগারেট বিক্রি থেকে রেভিনিউ বেড়েছে প্রায় ৮৪ শতাংশ।

প্রতি বছর এ খাতের ট্যাক্স ও ব্যাটের পরিমাণ বাড়তে থাকায় বর্তমানে এ কোম্পানির সিগারেট বিক্রি যে রেভিনিউ আসে, তার ৮২ শতাংশ পায় সরকার। ২০১৪ সালে সরকারি কোষাগারে ১০ হাজার ৭ কোটি টাকা জমা দেয় কোম্পানিটি, যা ২০১৮ সালে ১৯ হাজার ১৩৩ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতি বছর সিগারেট বিক্রির পরিমাণ বাড়লেও ২০১৮ সাল থেকে এ চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে। সিগারেট বিক্রি থেকে আয় বাড়লেও ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে সিগারেট বিক্রির পরিমাণ কমেছে। ২০১৭ সালে বিএটি বাংলাদেশ ৫ হাজার ৩২০ কোটি পিস (স্টিক) সিগারেট বিক্রি করে, যেখানে ২০১৮ সালে ১৭৭ কোটি ৫০ লাখ পিস কম সিগারেট বিক্রি হয়েছে। মূলত লো সেগমেন্টের সিগারেটে ট্যাক্স ও ভ্যাটের পরিমাণ ৩০ শতাংশ বাড়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গত বছর লো সেগমেন্টের সিগারেট বিক্রি কমেছে ২৬ শতাংশ।

২০১৭ সালে বিএটি বাংলাদেশের মোট সিগারেট (প্রতি পিস হিসেবে) বিক্রির ৭৫ শতাংশ ছিল লো সেগমেন্টের। ২০১৮ সালে এ সেগমেন্টের সিগারেটে কর বেড়ে যাওয়ায় তা নেমে আসে ৬০ শতাংশে। অবশিষ্ট ৪০ শতাংশ আসে মধ্য ও প্রিমিয়াম সেগমেন্ট থেকে।

তবে ২০১৭ সালের তুলনায় সিগারেটের বিক্রি কমলেও কর বাড়ায় আয় ও নিট মুনাফা বেড়েছে বিএটি বাংলাদেশের। সরকারের কোষাগারে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট দেওয়ার পর ২০১৮ সালে কোম্পানির নেট রেভিনিউ ছিল ৫ হাজার ৪৬৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। উৎপাদন ব্যয় বাদ দেওয়ার পর ২০১৮ সালে কোম্পানির মোট আয় দাঁড়ায় ২ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকা। কর পরিশোধের পর নিট মুনাফা দাঁড়ায় ১ হাজার ১ কোটি টাকা, যা ২০১৭ সালের তুলনায় প্রায় ২৮ শতাংশ বেশি।

এদিকে করহার বৃদ্ধির কারণে চলতি বছর বিএটি বাংলাদেশের সিগারেট বিক্রি আরও কমেছে। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বিএটি বাংলাদেশের সিগারেট বিক্রি হয় ১ হাজার ২৬৩ কোটি পিস, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ শতাংশ কম। সিগারেট বিক্রি কমলেও সরকারের রেভিনিউ বেড়েছে।

তবে কোম্পানির নেট রেভিনিউ কমেছে। চলতি প্রথম প্রান্তিকে সিগারেট বিক্রি থেকে বিএটি বাংলাদেশের মোট রেভিনিউ ছিল ৬ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট বাদ দেওয়ার পর কোম্পানির নেট রেভিনিউ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৩২ কোটি টাকায়, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ৪ শতাংশ কম।

উৎপাদন, প্রশাসনিক ও কর বাবদ ব্যয়ের পর প্রথম প্রান্তিকে বিএটি বাংলাদেশের নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ২০৫ কোটি ৯০ লাখ টাকায়, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ কম। বিভিন্ন ক্ষেত্রে করহার বেড়ে যাওয়ায় অবৈধভাবে বিদেশ থেকে সিগারেট আমদানির কারণেই ২০১৮ সালের পর থেকে বাংলাদেশে সিগারেট বিক্রির পরিমাণ কমছে বলে মনে করে বিএটির বাংলাদেশের মূল কোম্পানি বিএটি পিএলসি। এ কোম্পানির ২০১৮ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সিগারেটের বিক্রির পরিমাণ কমলেও দাম বাড়ায় বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড থেকে রেভিনিউ বেড়েছে।