দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ২০১৮ সালে অধিকাংশ জীবন বীমা কোম্পানি ভালো ব্যবসা করেছে। আগের বছরের তুলনায় এ সময় জীবন বীমা কোম্পানির মোট প্রিমিয়াম আয় বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ। যদিও এ সময় ২৮ শতাংশ কোম্পানির আয় ২০১৭ সালের তুলনায় কমেছে। তারপরও করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়ে স্বাস্থ্যবীমায় আগ্রহ বাড়ায় গত বছর প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা প্রিমিয়াম আয় হয়েছে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

আইডিআরএ থেকে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, নতুন পুরনো মিলিয়ে বর্তমানে দেশে ৩২টি জীবন বীমা কোম্পানি রয়েছে। ২০১৮ সাল শেষে এসব কোম্পানির মোট প্রিমিয়াম দাঁড়িয়েছে ৮৯ হাজার ৫২১ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। প্রতি বছরের মতো এবারও প্রিমিয়াম আয়ে শীর্ষে ছিল মেটলাইফ।

বাংলাদেশে শাখা হিসেবে ব্যবসা পরিচালনা করা মেটলাইফের মোট প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৬৪০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি। জীবন বীমা কোম্পানির মোট প্রিমিয়াম আয়ের ২৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ হচ্ছে মেটলাইফের।

প্রিমিয়াম আয়ে দ্বিতীয় শীর্ষ কোম্পানি হচ্ছে ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ২০১৮ সাল শেষে এ কোম্পানির মেট প্রিমিয়াম আয় দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৫৮৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় ৬ শতাংশ বেশি। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ২০১৮ সাল শেষে এ কোম্পানির মোট প্রিমিয়াম আয় দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা। এ সময় প্রিমিয়াম আয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ শতাংশ।

মোট প্রিমিয়াম আয়ে সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়েছে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ২০১৮ সাল শেষে এ কোম্পানির মোট প্রিমিয়াম আয় দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৩৯ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। এক বছরের ব্যবধানে পপুলার লাইফের মোট প্রিমিয়াম আয় বেড়েছে ৩ হাজার ২৮ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে সব জীবন বীমা কোম্পানি মিলিয়ে যে পরিমাণের প্রিমিয়াম আয় করেছে, তার ৩৮ শতাংশই পপুলার লাইফের একার।

ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স মোট প্রিমিয়াম আয়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। ২০১৮ সাল শেষে এ কোম্পানির মোট প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা, যা আগের বছরের চেয়ে ৬ শতাংশ বেশি। ৫ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি জীবন বীমা করপোরেশন প্রিমিয়াম আয়ে রয়েছে ষষ্ঠ অবস্থানে। এক বছরের ব্যবধানে মোট প্রিমিয়াম আয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত এ কোম্পানির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ৯ শতাংশ।

২০১৮ সাল শেষে মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা। প্রিমিয়াম আয়ে সপ্তম অবস্থানে থাকা এ কোম্পানির প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র এক শতাংশ। ৩ হাজার ৭৭০ কোটি টাকার প্রিমিয়াম আয় নিয়ে অষ্টম অবস্থানে রয়েছে প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স। দুই হাজার কোটি টাকার বেশি প্রিমিয়াম আয় নিয়ে নবম ও দশম অবস্থানে রয়েছে প্রগতি ও রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।

শতাংশের হিসেবে প্রিমিয়াম আয়ের শীর্ষে ছিল প্রোটেক্টিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স। গত বছর প্রিমিয়াম আয়ে এ কোম্পানির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ৯৫ শতাংশ। এছাড়া নতুন কোম্পানি এনআরবি গ্লোবাল, গার্ডিয়ান চার্টার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম আয়ে ভালো অবস্থানে ছিল। তবে প্রিমিয়াম আয়ে অধিকাংশ নতুন কোম্পানির প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক ছিল। ২০১৮ সালে স্বদেশ, সানফ্লাওয়ার, সোনালী, যমুনা ও ডায়মন্ড লাইফের প্রিমিয়াম আয় কমেছে ২২ শতাংশ পর্যন্ত। তবে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক অবস্থা ছিল পদ্মা ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। গত বছর এ কোম্পানিটি ৪৪ শতাংশ প্রিমিয়াম আয় হারিয়েছে।

এছাড়া বায়রা, সন্ধানী, প্রগ্রেসিভ ও বায়রা লাইফ ইন্স্যুরেন্স প্রিমিয়াম আয় হারিয়েছে। এদিকে ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে প্রিমিয়াম আয় বাড়লেও অধিকাংশ জীবন বীমা কোম্পানিই ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার বেঁধে দেওয়া সীমা অতিক্রম করেছে। শুধুমাত্র যেসব কোম্পানির প্রিমিয়াম আয় বেশি, সে সব কোম্পানির ব্যবস্থাপনা ব্যয় আইডিআরএর নির্ধারিত সীমা বা তার চেয়ে কম ছিল।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৩২টি জীবন বীমা কোম্পানির মধ্যে ১০টি ব্যবস্থাপনা ব্যয় আইডিআরএর নির্ধারিত সীমার চেয়ে কম ছিল। বিপরীতে নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় করা ২২ কোম্পানির মধ্যে শীর্ষে ছিল ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স। ২০১৮ সাল শেষে এ কোম্পানি তার ব্যবস্থাপনায় ৭৮২ কোটি ৪০ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করেছে।

একই সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বীমা করপোরেশন ৫৩৫ কোটি টাকা, পদ্মা ইসলামী লাইফ ২১২ কোটি টাকা, সানলাইফ ১১৬ কোটি টাকা, প্রগ্রেসিভ লাইফ ১০২ কোটি টাকা ও সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবস্থাপনায় ১১২ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করেছে।