দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে এক সময়ে মিউচুয়াল ফান্ডকে উৎপাদনশীল কোম্পানির মতো মনে করা হতো। পরবর্তীকালে সেই ভাবনার আমূল পরিবর্তন হয়ে যায়। এখন আর মিউচুয়াল ফান্ডকে উৎপাদনশীল কোম্পানির মতো ভাবা হয় না। বরং পৃথিবীর অন্যান্য দেশের পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডকে বিনিয়োগের নিরাপদ মাধ্যম হিসাবে মনে করা হলেও বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডকে এখন গলার কাঁটা মনে করা হয়।

এখানে মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ রাখার বদলে উল্টো ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। এ কারণে মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ক্রমাগত নেতিবাচক অবস্থার দিকে ধাবিত হচ্ছে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বর্তমানে তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডের সংখ্যা ৩৮টি। এর মধ্যে ৫টি মিউচুয়াল কিছুটা অভিহিত মূল্যের উপরে কেনাবেচা হলেও ৩৩টি ফান্ড অভিহিত মূল্যের নিচে লেনদেন হচ্ছে। এ ৩৩টি ফান্ড এখন বিনিয়োগকারীদের গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাইরের দেশের পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যারা পুঁজিবাজার ভালভাবে যাচাই-বাছাই করে বিনিয়োগ করতে পারেন না তারা সাধারণত মিউচুয়াল ফান্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেন। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ নিরাপদে থাকে।

কিন্তু আমাদের দেশে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। একদিকে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো বিনিয়োগকারীদের ভাল মুনাফা দিতে পারছে না, অন্যদিকে বাজার সাপোর্টের ক্ষেত্রেও কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না।

ফলে মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে আস্থাহীনতা। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সার্বিক পুঁজিবাজারেও। তারা বলছেন, ফান্ড ম্যানেজারদের ব্যর্থতার কারণে মিউচুয়াল ফান্ডের এ অবস্থা। ফান্ড ম্যানেজারের দায়িত্বে যারা আছেন তাদের অধিকাংশই অদক্ষ।

পোর্টফোলিও তৈরির ক্ষেত্রে তারা দক্ষতার পরিচয় দিতে পারছেন না। অবার কিছু কিছু ফান্ড ম্যানেজারের সততারও অভাব রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের কথা চিন্তা না করে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য তারা অনৈতিকভাবে ব্যক্তিগত ঋণ দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডের মূল্য অভিহিত মূল্যের নিচে নামার প্রধান কারণ হতে পরে, তারা বিনিয়োগকারীদের ঠিকমতো মুনাফা দিতে পারছে না। ঠিকমতো মুনাফা দিতে না পারায় নতুন বিনিয়োগকারীরা মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন না।