দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নীরবে রক্তক্ষরণ চলছে শেয়ারবাজারে। ফলে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ছে দেশের শেয়ারবাজার। টানা ১৪ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ১৩ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা উধাও। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন পুঁজিবাজার দরপতনের শেষ কোথায়, আর কত প্রণোদণা দরকার। এ কথা এখন ২৮ লাখ বিনিয়োগকারীদের মুখে মুখে।

দেশের পুঁজিবাজার কোন প্রণোদনাই মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারছে না। টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মুল পুঁজি দিনের পর দিন নি:স্ব হতে চলছে। এমন অবস্থা চলছে যে পুঁজিবাজার অবিভাবকহীন। বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন আর কতদিন এ ভাবে চলবে। টানা দরতনের শেষ কোথায়। এ ভাবে চলতে থাকলে বাজার বিমুখ হয়ে পড়বে বিনিয়োগকারীরা।

বাজেটের পর চলতি জুলাইয়ের নয় কার্যদিবসের আট দিনই দরপতন হয়েছে পুঁজিবাজারে। এতে ডিএসইএক্স সূচক ২৪২ পয়েন্ট বা সাড়ে ৪ শতাংশ কমেছে। এ সময় তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির সব শেয়ারের দর অর্থাৎ বাজার মূলধন ১৩ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা কমেছে।

সংশ্নিষ্টরা জানান, দরপতনই শেয়ারবাজারের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ধস নামার পর মাঝে কিছুদিন ঊর্ধ্বমুখী থাকলেও কখনও স্বস্তিতে ছিলেন না বিনিয়োগকারীরা। আওয়ামী লীগ সরকার নতুন মেয়াদে দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্থমন্ত্রীর ঘোষণায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়।

বিশেষত জানুয়ারির পর টানা কয়েক মাসের দরপতনের প্রেক্ষাপটে তিনি বাজেটে প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই ঘোষণায় অনেক বিনিয়োগকারী আশ্বস্ত ছিলেন। কিন্তু বাজেট ঘোষণার পর হতাশ হয়েছেন তারা। ফলে ফের দরপতন শুরু হয়েছে। বাজেট পাসের পর দরপতনের মাত্রা বেড়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ের শেয়ারবাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাজেট ঘোষণার আগে গত ২৬ মে থেকে ১৩ জুন (সংসদে বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করার আগ পর্যন্ত) অধিকাংশ শেয়ারের বাজারদর বেড়েছিল। এতে ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছিল প্রায় ২২৪ পয়েন্ট। বাজার মূলধন ১৬ হাজার ২৫১ কোটি টাকা বেড়েছিল।

কিন্তু বাজেট ঘোষণার পর গত ১৬ জুন থেকে ক্রমাগত দরপতন হচ্ছে। এ সময়ের ২০ কার্যদিবসের ১৪ কার্যদিবসেই দরপতন হয়েছে। ওই ছয় দিনে ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছিল ৮৯ পয়েন্ট, সেখানে বাকি ১৪ দিনে সূচকটি হারায় ৩৯০ পয়েন্ট। এর মধ্যে চলতি মাসের ৯ কার্যদিবসের মধ্যে আট কার্যদিবসে সূচকটি হারিয়েছে আড়াইশ’ পয়েন্ট। এ সময় বাজার মূলধন হারিয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা।

এ বিষয় জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজারের মূল সমস্যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা সংকট। এ সংকট দূর করতে হবে। ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, কারসাজির মাধ্যমে কেউ পুঁজি হাতিয়ে নিলে তার বিচার হবে, বিনিয়োগকারীদের এ নিশ্চয়তা দিতে হবে। অর্থাৎ পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ফলে বাজারে নতুন পুঁজি আসবে, যা তারল্য সংকট কাটাতে সহায়তা করবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, নগদ লভ্যাংশ দিতে উদ্বুদ্ধ করতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ওপর করের চাপ বাড়িয়ে অর্থমন্ত্রী যে প্রণোদনা দেওয়ার দাবি করেছেন তা ভালোভাবে নেননি বিনিয়োগকারীরা। অর্থমন্ত্রী প্রণোদনার আশ্বাস দিয়ে শেষ পর্যন্ত কোনো প্রণোদনা না দিলে বিনিয়োগকারীরা যতটা অসন্তুষ্ট হতেন, প্রণোদনার নামে করারোপে বেশি অসন্তুষ্ট ও হতাশ হয়েছেন।

বাজার সংশ্নিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিনের নানা সংকটের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের অবসায়ন এবং লেনদেন স্থগিতের সিদ্ধান্ত দরপতনকে উস্কে দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির অবসায়নের খবর প্রকাশের পর গত বৃহস্পতিবার ডিএসই শেয়ারটির লেনদেন স্থগিত করে। এই স্থগিতের আগে সর্বশেষ চার কার্যদিবসে শেয়ারটির দর চার টাকা থেকে দুই টাকা ৮০ পয়সায় নেমেছিল।