রংপুর ব্যুরো, দেশ প্রতিক্ষণ: সাবেক রাষ্ট্রপতি, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের দাফন যেকোনো মূল্যে রংপুরেই করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে উত্তরবঙ্গ জাতীয় পার্টি (রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ)। প্রিয় নেতার লাশ জীবন দিয়ে হলেও রংপুর থেকে ঢাকায় আনা ঢেকানো হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দুই বিভাগের নেতারা।

রাজধানীর সামরিক কবরস্থানে সাবেক এই রাষ্ট্রপতির দাফনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সোমবার দুপুর ১২টায় রংপুরে অনুষ্ঠিত জাতীয় পার্টির উত্তরবঙ্গ প্রতিনিধিসভায় নেতারা এ ঘোষণা দেন।

নগরীর সেন্ট্রাল রোডের দলীয় কার্যালয়ে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সভাপতিত্বে সভায় রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় মেয়র মোস্তফা বলেন, জীবদ্দশায় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে কোনো দিন স্বাভাবিক রাজনীতি করতে দেয়া হয়নি। মৃত্যুর পরও তাকে এবং তার দলকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে এবং দলকে নিশ্চিহ্ন করতে সামরিক কবরস্থানে দাফনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

রংপুরে দাফনের বিষয়ে এরশাদের অসিয়ত ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা চাই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্মৃতিবিজড়িত রংপুর নগরীর দর্শনা মোড়ের পল্লী নিবাসেই তার অসিয়ত করা জায়গায় দাফন করা হোক। যদি সেটি না করা হয়, তা হলে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগীয় জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও প্রিয় নেতার লাশ রংপুর থেকে ঢাকায় নিয়ে যেতে দেবে না।

আবদ্ধ জায়গায় এরশাদকে দাফনের সিদ্ধান্ত ষড়যন্ত্রের অংশ উল্লেখ করে মেয়র মোস্তফা আরও বলেন, জাতীয় তিন নেতার সমাধির পাশে পল্লীবন্ধুর দাফন হলে কিংবা তাকে জাতীয় নেতার স্বীকৃতি দিলে আমাদের আপত্তি থাকত না। অথচ এসব না করে একটা আবদ্ধ জায়গায় আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে দাফনের সিদ্ধান্তের বিষয়টি গভীর যড়যন্ত্রের অংশ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজার খোলা জায়গায় হওয়ার বিষয়টিও এ সময় উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন রংপুরের মেয়র।

সভায় সাবেক সংসদ সদস্য শাহানারা বেগম, জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ও রংপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসীর, পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী আব্দুর রাজ্জাক, গাইবান্ধা জেলা জাপার আহ্বায়ক আব্দুর রশীদ সরকারসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত রোববার সকাল পৌনে ৮টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন মৃত্যুবরণ করেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। তিনি রক্তে সংক্রমণসহ লিভার জটিলতায় ভুগছিলেন।

সোমবার সকালে সংসদ ভবনে তার দ্বিতীয় জানাজা হয়। বিকালে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে তৃতীয় দফা জানাজা শেষে মঙ্গলবার সকালে হেলিকপ্টারযোগে সাবেক এ রাষ্ট্রপতির মরদেহ রংপুরে নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টায় রংপুর ঈদগাহ মাঠে তার শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। জানাজা শেষে এরশাদের মরদেহ আবার হেলিকপ্টারযোগে ঢাকায় নিয়ে এসে বাদ জোহর সেনা কবরস্থানে দাফন করার কথা রয়েছে।