দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে দরপতন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বারকলিপি দিতে যাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। ১৫ দফা দাবি নিয়ে ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর হয়ে একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বারকলিপি দিতে যাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার ঢাক স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সামনে দুপুর ২টা থেকে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন শুরু করে বিনিয়োগকারীরা। বিক্ষোভ ও মানববন্ধন শেষে ৩টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে প্রতিনিধি দলটি।

শেয়ারবাজারের অব্যাহত পতনের পরেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা থেকে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ না নেওয়ায় হতাশ বিনিয়োগকারীরা। এখন একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপকেই ভরসাযোগ্য মনে করছেন তারা। যার কারণে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বারকলিপি দিতে যাচ্ছেন।

বিক্ষুব্ধ বিনিয়োগকারীরা বলেন, শেয়ারবাজারকে কিছু কুচক্রী মহল লুটপাট করার জায়গা হিসেবে নিয়েছে। তারা মনে করে শেয়ারবাজার থেকে টাকা লুটপাট করলে সাধারন বিনিয়োগকারীদের কিছুই করার থাকবে না। কারন ব্যাংক থেকে টাকা নেওয়ার ক্ষেত্রে যে সব বাধ্যবাধকতা থাকে বাজারে তা নেই।

একাধিক বিনিয়োগকারীরা বলেন, ‘একটি জটিল অবস্থা বিরাজ করছে পুঁজিবাজারে। এমন অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কী পদক্ষেপ নেবেন, তা দেখার বিষয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপ বিনিয়োগবান্ধব হবে বলেই আমরা আশা রাখি।’

বিনিয়োগকারীদের দাবিগুলো হচ্ছে: ১। ইস্যু মূল্যের নিচে অবস্থান করা শেয়ারগুলো নিজ নিজ কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদকে ইস্যু মূল্যে শেয়ার বাইব্যাক করতে হবে। বাইব্যাক আইন পাশ করতে হবে।

২। ২ সিসি আইনের বাস্তবায়ন করতে যে সকল কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ব্যক্তিগত ২%, সম্মিলিতভাবে ৩০% শেয়ার নেই, ঐ সকল উদ্যোক্তা পরিচালক ও কোম্পানিগুলোকে শেয়ার ধারণ কতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

৩। প্লেসমেন্ট শেয়ারের অবৈধ বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে এবং প্লেসমেন্ট শেয়ারের লকইন পিরিয়ড ৫ বছর করতে হবে। পুঁজিবাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত সকল প্রকার আইপিও, রাইট শেয়ার অনুমোদন দেওয়া বন্ধ করতে হবে।

৪। খন্দকার ইব্রাহিম খালেদের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী শেয়ারবাজার কারসাজির সাথে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

৫। জেড ক্যাটাগরি এবং ওটিসি মার্কেট বলতে কোন মার্কেট থাকতে পারবে না। কোম্পানি আইনে কোথাও জেড ক্যাটাগরির ও ওটিসি মার্কেটের উল্লেখ নেই।

৬। পাবলিক ইস্যু রুলস ২০১৫ বাতিল করতে হবে।

৭। পুঁজিবাজারের প্রাণ মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোকে পুঁজিবাজারে সক্রিয় হতে বাধ্য করুন এবং প্রত্যেক ফান্ডের নূন্যতম ৮০% পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হবে।

৮। সাধারণ বিনিয়োগকারী আইপিও কোটা ৮০% করতে হবে এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে ১০% হারে লভ্যাংশ প্রদান করতে হবে।

৯। জানুয়ারি ২০১১ থেকে জুন ২০১৯ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মার্জিন লোনের সুদ সম্পূর্ণ মওকুফ করতে হবে।

১০। পুঁজিবাজারে অর্থের যোগান বৃদ্ধির জন্য সহজশর্তে অর্থাৎ ৩% সুদে ১০ হাজার কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। যা আইসিবি, বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকার হাউজের মাধ্যমে ৫% হারে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লোন হিসাবে বিনিয়োগের সুযোগ পাবে।

১১। অপ্রদর্শিত অর্থ বিনা শর্তে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের সুযোগ দিতে হবে।

১২। জীবন বীমা খাতের বিপুল অলস ও সঞ্চিত অর্থের ৪০% পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে বাধ্য করুন।

১৩। জীবন বাচাতে এবং ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনরত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে সকল প্রকার মামলা প্রত্যাহার ও পুলিশি হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

১৪। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বিপরীতে বাংলাদেশ স্টক এক্সচেঞ্জ নামে বিকল্প স্টক এক্সচেঞ্জ করতে হবে, এর ফলে কারসাজি বন্ধ করা যাবে।

১৫। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানসহ পুরো কমিশনারদের অপসারণ করে কমিশন পুন:গঠন করতে হবে।