দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বন্ড ও ডিবেঞ্চার খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে আগামীতে বন্ড ও ডিবেঞ্চার খেলাপিরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে না। শুধু তাই নয়, এসব খেলাপিকে চিহ্নিত করতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি ডাটাবেজে প্রবেশের ক্ষমতা দেয়া হচ্ছে।

দেশের দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন ও মূলধন বাজার উন্নয়নে গঠিত কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এসব উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, কোনো নীতিমালা না থাকায় আগামীতে যারা বন্ড ও ডিবেঞ্চার খেলাপি হবে তারা যাতে খেলাপি অবস্থায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে না পারে সরকার এ জন্য এ পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।

দেখা যাবে, আগামীতে অনেকেই বাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য বন্ড ও ডিবেঞ্চার ছাড়বেন। জনগণ এসব বন্ড ও ডিবেঞ্চারে অর্থ বিনিয়োগ করবেন। কোনো কারণে যদি ইস্যুকারী কোম্পানি জনগণকে বন্ডের বিপরীতে বিনিয়োগকারীর লভ্যাংশ প্রদানে ব্যর্থ হয় বা মূল টাকা ফেরত দিতে অপারগ হয়, তখনই সংশ্লিষ্ট ইসু্যুকারী খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হবে। আগামীতে তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে না।

সূত্র জানায়, দেশের বন্ড মার্কেট এবং শেয়ারবাজার উন্নয়নে সরকার এপ্রিল মাসে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলামকে আহবায়ক করে একটি কমিটি গঠন করেছিল। কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছে অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, আইডিআরএ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), এফবিসিসিআই, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স।

কমিটি স¤প্রতি তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে কমিটি ১৮টি সুপারিশ করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় জরুরি ভিত্তিতে সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, অর্থ বিভাগ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, বিএসইসি এবং আইডিআরএ’কে চিঠি দিয়েছে।

কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, বন্ড এবং ডিবেঞ্চার খেলাপিরা কোনো বাধা ছাড়াই ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারে। তারা যাতে নতুন করে ব্যাংক ঋণ নিতে না পারে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি ডাটাবেইজে বন্ড পরিশোধে খেলাপিদের ঋণখেলাপির মতো খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত বা শ্রেণীবদ্ধ করা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংককে এ কাজে সহায়তা করবে বিএসইসি। এ জন্য বিএসইসি’কে সিআইবি ডাটাবেজে প্রবেশের ক্ষমতা দেয়া হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএসইসি যেন সিআইবি ডাটাবেজে দ্রæত প্রবেশ করে বন্ড ইস্যুকারীর বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত ক্রেডিট রেকর্ড এবং ক্রেডিট পরিশোধের ইতিহাস যাচাই করতে পারে সে জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।

বিএসইসি এ সুবিধা পেলে খুব সহজেই বন্ড খেলাপিদের চিহ্নিত করা যাবে এবং এসব খেলাপি যাতে নতুন করে কোনো সুবিধা নিতে না পারে সে বিষয়েও ব্যবস্থা নেয়া যাবে। পাশাপাশি কমিটি বলেছে, বন্ড অনুমোদন সহজ করার জন্য বিএসইসি থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আর অনাপত্তির আবেদন পাঠানোর প্রয়োজন নেই। কারণ এতে দ্বৈত যাচাই করা হয়। আর এতে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়।

ব্যাংকের পুঁজিবাজারের এক্সপোজারের সংজ্ঞাও পরিবর্তন করার কথা বলেছে কমিটি। এতে বন্ডে বিনিয়োগ পুঁজিবাজারের এক্সপোজার গণনা থেকে বাদ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট বন্ডের ক্ষেত্রে নতুন সিরিজ ইস্যু করার শর্ত হিসেবে আগের ইস্যু করার পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রেও যুক্তিসঙ্গত পরিবর্তন আনা যেতে পারে বলে সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক তিন মাসের ফিক্সড ডিপোজিটের হার দিয়ে সাত বছরের দীর্ঘমেয়াদি বন্ডের হার নির্ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘ, মধ্য ও স্বল্প মেয়াদি বন্ডের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাজারে বন্ডের চাহিদা ও যোগানের উপর ভিত্তি করে তা যুক্তিযুক্তভাবে নির্ধারণের ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছে কমিটি। বন্ডে বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে করহারে বিশেষ সুযোগ দিতে এনবিআরকে তিনটি সুপারিশ করেছে কমিটি।

সুপারিশে বলা হয়েছে, স্ট্যাম্প শুল্ক বিনিয়োগকারীদের বন্ডে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করবে। তাই অন্যান্য দেশের মতো একটি নির্দিষ্ট টাকার অংকে (থোক আকারে এক লাখ টাকা) নির্ধারণ করা যুক্তিসঙ্গত হবে। এ শুল্ক শুধু কাগজভিত্তিক বন্ড ব্যবস্থায় প্রয়োগ করা উচিত। অর্থাৎ ডিম্যাটেরিয়ালাইজড বন্ড এবং অন্যান্য সিকিউরিটিজে স্ট্যাম্প ডিউটি আরোপ পরিহার করা যেতে পারে।

অগ্রিম আয়কর তুলে দেয়ার ব্যাপারে কমিটি বলেছে, বন্ড থেকে অর্জিত আয়ের ওপর কর আদায় এবং এ আয়কর পাওয়ার পর চার্জ আদায় করা যেতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে অগ্রিম আয়কর বা উইথহোল্ডিং কর আদায়ের নিয়ম পরিবর্তন করে চূড়ান্ত পর্যায়ে আদায় করা যেতে পারে। অর্থাৎ সরকারি বন্ডের ক্ষেত্রে অর্জিত আয়ের ওপর কর আদায়ের ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য গকুল চাঁদ দাস বলেন, বন্ড মার্কেট উন্নয়নেই মূলত এসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আশা করি এতে ভবিষ্যতে বন্ড মার্কেটের আরো উন্নতি হবে। বন্ড খেলাপিদের ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা আরোপ করার কারণে বন্ড মার্কেটে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বন্ড খেলাপিরা আর ইচ্ছে মতো ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে না।