শক্তিশালী বন্ড মার্কেট করপোরেট বন্ডে কর ছাড় চায় বিএসইসি
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: বেসরকারি খাতের অর্থায়ন চাহিদা মেটানোর জন্য শক্তিশালী বন্ড মার্কেট গড়তে করপোরেট বন্ডে কর ছাড়ের প্রস্তাব করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। করপোরেট বন্ডের ওপর বিদ্যমান স্ট্যাম্প শুল্ক, লেনদেনভিত্তিক উৎসে আয়কর ও বিনিয়োগ থেকে আয়ের ওপর করহার কমিয়ে যৌক্তিক পর্যায়ে নামাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন বিএসইসি চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন।
করপোরেট বন্ডে স্ট্যাম্প শুল্ক যৌক্তিকীকরণের প্রস্তাব করে চিঠিতে খায়রুল হোসেন লিখেছেন, এনডোর্সমেন্টের মাধ্যমে হস্তান্তরযোগ্য করপোরেট বন্ডের ইস্যুর ক্ষেত্রে প্রতিদান মূল্যের ওপর ২ শতাংশ স্ট্যাম্প শুল্ক রয়েছে। ডেলিভারির মাধ্যমে হস্তান্তরযোগ্য করপোরেট বন্ডের ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ শুল্কহার বহাল রয়েছে।
এই শুল্কহার বন্ড মার্কেট সৃষ্টিতে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে। বন্ড মার্কেটের উন্নয়নের জন্য বন্ড ইস্যুর ওপর প্রযোজ্য স্ট্যাম্প শুল্ক কাগুজে বন্ডের ইস্যুর ক্ষেত্রে শুল্ক দশমিক শূন্য এক (০.০১) শতাংশ হারে বা থোক পরিমাণ হিসেবে ৫ লাভ টাকা করা যেতে পারে।
তবে অজড় বা ডিমেটারালাইজড করপোরেট বন্ডের ওপর থেকে স্ট্যাম্প শুল্ক প্রত্যাহার করা যেতে পারে।
করপোরেট বন্ডের লেনদেনভিত্তিক উৎসে আয়কর যৌক্তিকীকরণের প্রস্তাব দিয়ে খায়রুল হোসেন বলেছেন, তালিকাভুক্ত করপোরেট বন্ডের লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্রোকারদের ওপর প্রযোজ্য উৎসে কর লেনদেনের মূল্যভিত্তিক হারে বলা হয়েছে, যা লেনদেনের দশমিক এক (০.১) শতাংশ।
এই উৎসে কর লেনদেনের মূল্যভিত্তিক আরোপ করার বদলে ট্রেডপ্রতি ধার্য করার প্রস্তাব করে তিনি লিখেছেন, ব্রোকাররা ট্রেড প্রতি কমিশন আদায় করে থাকেন। বর্তমানে ব্রোকাররা মক্কেলদের কাছ থেকে করপোরেট বন্ডের ট্রেডপ্রতি ১০০ টাকা আদায় করেন। এই ১০০ টাকা থেকে স্টক এক্সচেঞ্জকে ট্রেড প্রতি ৫০ টাকা, ডিপোজিটরিকে (সিডিবিএল) ট্রেডপ্রতি ২৫ টাকা পরিশোধ করে। বাকি ২৫ টাকা থাকে ব্রোকারদের।
তাই করপোরেট বন্ডের ট্রেডপ্রতি উৎসে আয়কর সর্বোচ্চ ৯.৩৭৫ টাকা বা ২৫ টাকার ৩৭.৫ শতাংশের নিচে যেকোনো পরিমাণ আরোপ করা যেতে পারে। করপোরেট বন্ডের বিনিয়োগ থেকে আয়ের ওপর কর-সুবিধা কাঠামো নিরপেক্ষ করার প্রস্তাব দিয়ে খায়রুল হোসেন লিখেছেন, বর্তমানে বন্ডের ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি শর্তযুক্তভাবে শুধুই জিরো কুপন বন্ডের ওপর প্রযোজ্য রয়েছে। এ সুবিধা সব ধরনের করপোরেট বন্ডের ক্ষেত্রে সব বিনিয়োগকারীর জন্য চেয়েছেন তিনি।
বিভিন্ন দেশের উদ্যোক্তারা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের জন্য বন্ড মার্কেট থেকে অর্থায়ন পেয়ে থাকেন। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদে আমানত সংগ্রহ করে দীর্ঘমেয়াদে অর্থায়ন করছে। এতে আর্থিক খাতে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে উল্লেখ করে সরকারের নীতিনির্ধারক ও বিশ্লেষকরা দীর্ঘদিন ধরেই বন্ড মার্কেট শক্তিশালী করার ওপর জোর দিচ্ছেন। তবে এজন্য কার্যকর তেমন উদ্যোগ দেখা যায়নি।
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আমাদের আর্থিক খাতে বিশেষ কোনো ইনস্ট্রæমেন্টের ব্যবহার ছিল না। তাই ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদে আমানত সংগ্রহ করে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ দিতে বাধ্য হতো। এতে ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়। এটা কখনো কখনো সংকট সৃষ্টি করে থাকে। এই জাতীয় ভারসাম্যহীন অবস্থা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। একটি গতিশীল বন্ড মার্কেটসহ অন্যান্য ইনস্ট্রæমেন্ট যেমন: ওয়েস আর্নার্স বন্ড, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, ট্রেজারি বন্ড ব্যবহার উৎসাহিত করব।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, পুঁজিবাজার উন্নয়নের জন্য বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন করতে হবে, করপোরেট বন্ডের কথা ভাবতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন সময় আসছে বন্ড মার্কেটে গুরুত্ব দেওয়ার। আমাদের ৯৯ শতাংশ সরকারি বন্ড। প্রাইভেট বন্ড বাড়াতে সরকারের দিক থেকে উৎসাহ দিতে হবে। কিন্তু প্রাইভেট কোম্পানির সমস্যা হলো, তারা মালিকানায় প্রসার ঘটাতে চায় না।
ওরা ভাবে শেয়ারবাজারে গেলে শেয়ারহোল্ডাররাও তো মালিক হয়ে যাবে। ভাই, ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী নিয়ে একটি কোম্পানি করে বসে থাকলে তো তাদের সুবিধা। বন্ড মার্কেটের লেনদেনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। না হলে কেউ বন্ড কিনবে না। বাংলাদেশে সেকেন্ডারি বন্ড মার্কেট এখনো ডেভেলপই করেনি। আগামী দিনে এদিকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে।