দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানবে-লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের খেলাপি ঋণ হঠাৎ করেই দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেছে। একই সঙ্গে সুদ ও বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয়ে বড় ধরনের পতন হয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটি লোকসান ঠেকাতে প্রায় সাড়ে ২৯ কোটি টাকার সম্পদ বিক্রি করেছে। এতেই কৃত্রিমভাবে মুনাফায় ফিরেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি। যদিও আর্থিক এ প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক প্রতিবেদন ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্রে এসব জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, তারল্য সংকটের কারণে বে-লিজিংয়ের বিনিয়োগ কমে যাচ্ছে। আয় বাড়াতে উচ্চ সুদের ঋণ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ঋণের সুদ ব্যয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে নতুন করে ঋণ নেওয়ারও সাহস পাচ্ছে না বে-লিজিং। ফলে বিনিয়োগ ও ধার দেওয়ার উৎস থেকে আয় কমে গিয়েছে। এর প্রভাবে খাতটি থেকে আসা আয়ে বড় ধরনের পতন হয়েছে ২০১৮ সালে।

এছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানটির বড় অঙ্কের বেশ কিছু ঋণ আদায় হচ্ছে না গত কয়েক বছর ধরে। এসব ঋণখেলাপিও দেখানো হয়নি। গত বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপে এসব ঋণখেলাপি দেখাতে হয়েছে। এক বছরেই খেলাপি ঋণের বিপরীতে চার কোটি টাকার বেশি প্রভিশন রাখতে হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানটির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে স¤প্রতি।

প্রতিষ্ঠানটির নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭ সালে সুদ থেকে প্রাপ্ত আয় ছিল ১০১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। আর সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় ছিল ৮৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা। এতে প্রকৃত সুদ আয় দাঁড়ায় ১৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আর ২০১৮ সালে সুদ বাবদ ব্যয় হয়েছে ১১২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। তবে সুদ আয় ছিল ১২১ কোটি ২২ লাখ টাকা। এতে প্রকৃত সুদ আয় দাঁড়ায় ৯ কোটি আট লাখ টাকা। উচ্চ সুদের ঋণের কারণে সুদ আয়ের চেয়ে ব্যয় হয়েছে বেশি। ফলে বছর শেষে প্রতিষ্ঠানটির সুদ আয় কমে অর্ধেকে নেমেছে।

অপরদিকে এই সময়ে কমেছে বিনিয়োগ থেকে আয়। ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগ থেকে আয় ছিল ১৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে তাতে বড় ধরনের পতন হয়ে দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৫৭ লাখ টাকায়। এদিকে ২০১৭ সাল শেষে পরিচালন মুনাফা হয়েছিল ৩৩ কোটি ১০ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে ২০১৮ সাল শেষে তা দাঁড়িয়েছে ৪২ কোটিতে। এই মুনাফার মধ্যে সম্পদ বিক্রি বাবদ আয়ই ছিল ২৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখতে হয়েছিল দুই কোটি পাঁচ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে পাঁচ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এর ফলে মোট প্রভিশন সংরক্ষণও বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে বে-লিজিংয়ের কর-পরবর্তী প্রকৃত মুনাফা ২০১৭ সালে ছিল ১৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে তা দাঁড়িয়েছে ২১ কোটি ৭৭ লাখ টাকায়।

যদিও সম্পদ বিক্রি থেকে প্রাপ্ত ২৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা বাদ দিলে প্রতিষ্ঠানটি লোকসান দিয়েছে ২০১৮ সালে। প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ রয়েছে ৬৭৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত এ প্রতিষ্ঠানটির চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকেও আয় কমেছে পূর্বের চেয়ে।

কোম্পানির এপ্রিল-জুন’১৯ সময়ের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির কনসলিডেটেড শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ছয় পয়সা। আগের বছর একই সময়ে যা ছিল ১৫ পয়সা। আর গত ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) কোম্পানির কনসলিডেটেড শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ২৪ পয়সা। আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ২৪ পয়সা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র অনুযায়ী, বর্তমানে আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি কৃত্রিম মুনাফায় রয়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে বে-লিজিংয়ের অফিসে গিয়ে ও মোবাইল ফোনে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখার আলী খানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তার মাধ্যমেও যোগাযোগ করা হয়। তবে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।