আবদুর রাজ্জাক, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা:  বিজিআইসিতে কিল-ঘুষিতে এজেন্ডা উত্থাপন,  ইর্স্টান ইন্সুরেন্সের শেয়ারহোল্ডাররা এজিএম আতঙ্কে, ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের এজেন্ডা উত্থাপনের আগেই পাশ, গ্লোবাল ইন্সুরেন্সে এজিএমে হট্টগোল, প্রহসনের বার্ষিক সাধারন সভা চলছে।

জুন ক্লোজিং কোম্পানিগুলো ২০১৮ সালের আর্থিক হিসাব প্রকাশ শেষে বার্ষিক সাধারন সভা (এজিএম) শুরু করেছে। তবে কিছু কিছু কোম্পানিতে বিনিয়োগকারীদের জন্য আতঙ্ক হিসাবে কাজ করছে এজিএম পার্টি। যেসব কোম্পানি ক্রমাগত নিচের দিকে ও দুর্নীতি পরায়ন সেসব কোম্পানির এজিএমে এই পার্টির উৎপাত বেশি লক্ষ্য করা যায়। তবে অন্যসব কোম্পানিও এর বাহিরে থাকে না।

প্রত্যেকটি কোম্পানি তাদের সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে সামর্থ্য অনুযায়ি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে। আর এরই মধ্যে ২০১৮ সালের জন্য কোম্পানিগুলো শেয়ারহোল্ডারদের লক্ষে লভ্যাংশ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে।  যা এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের মাধ্যমে চূড়ান্ত হবে।

কিন্তু অনেক সময় একটি কোম্পানি ভালো আয় করা সত্তে¡ও পরিচালকরা নিজেদের স্বার্থের কথা ভেবে তা থেকে বঞ্চিত করে বিনিয়োগকারীদেরকে। আবার তাদের দূর্ণীতির কারণে বিলীনও হয়ে যায় অনেক কোম্পানি। এদিকে বর্তমানে এমন পরিস্থিতি চলে এসেছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ না চাইলেও এজিএম পার্টি নিজেরাই চাঁদা নির্ধারণ করে দায়িত্ব পালন করে।

যার পরিমাণ সাধারণত ৫-১০ লাখ টাকা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ নিতে পারে না তাদের দূর্বলতা বা অনৈতিকতা প্রকাশ হওয়ার ভয়ে। এছাড়া এজিএমে পার্টির হাত থেকে মানসম্মান রক্ষার জন্যও অনেকে আবার বাধ্য হয় তাদের চাঁদা দিতে।

বিভিন্ন কারনে একটি কোম্পানির এজিএমে এই পার্টির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। কোম্পানি অনেক সময় নিজেরা তাদের নিয়োগ দেয়। আবার অনেক কোম্পানিতে পার্টিগুলো জোরপূর্বক প্রবেশ করে। যেসকল পরিচালকরা নিয়োগ দেয়, তাদের অধিকাংশ পরিচালক দূর্ণীতির সাথে জড়িত থাকে। আর এই অপকর্ম আড়াল করতেই তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোতে কোন ক্ষেত্রেই তাদের প্রভাব লক্ষ করা যায় না। এসব কোম্পানির কর্তৃপক্ষের সততার কারনেই এজিএম পার্টি কিছু করতে পারে না বলে মনে করেন বিনিয়োগকারীরা।

কোম্পানি আইন অনুযায়ি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিগুলোকে প্রত্যেক বছর এজিএম করতে হয়। যাতে করে শেয়ারহোল্ডাররা তাদের মতামত তুলে ধরতে পারেন। যেখানে তারা কোম্পানির আলোচ্য বিষয়সমুহ ইতিবাচক মনে হলে পাশ, অন্যথায় না করতে পারেন। কিন্তু ঘটে যাওয়া কোম্পানিগুলোর এজিএমে গিয়ে দেখা যায় বিনিয়োগকারীরা কোনো ধরনের মতামত দেওয়ার মতো সুযোগ পান না।

কোম্পানির সমস্ত বিষয়ে মতামত দেন কোম্পানিরই ভাড়া করা কিছু লোক। যাদের কে এজিএম পার্টি হিসাবে ডাকা হয়। বিনিয়োগকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় প্রত্যেকটি কোম্পানির এজিএমে একই লোকের উপস্থিতি। সাধারন শেয়ারহোল্ডাররা তাদের চেনেন না। কিন্তু তারাই দেখা যায় সব বিষয়ে মতামত পেষণ করেন। যার ফলে সাধারন শেয়ারহোল্ডাররা কোনো কিছুই করতে পারে না।

আর কেউ যদি কিছু বলতে চায় তাহলে তাকে মার খেতে হয়। শেয়ারহোল্ডাররা অভিযোগ করে বলেন, এভাবে আর কতোদিন অধিকার বঞ্চিত থাকব। তাই আবার এজিএম পার্টির খপ্পরে শেয়ারহোল্ডাররা যেন অধিকার বঞ্চিত না হয় সেদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নজর দেওয়া উচিত।

উল্লেখ্য, বিশৃঙ্খলা এড়াতে এজিএমে কোন ধরনের গিফট বা আপ্যায়নের ব্যবস্থা না করার জন্য এরইমধ্যে দুই দফায় নির্দেশনা জারি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে এজিএম পার্টি রোধে নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতি বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘ দিনের দাবি থাকলেও সে বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

বিজিআইসিতে কিল-ঘুষিতে এজেন্ডা উত্থাপনের আগেই পাশ: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি বিজিআইসি লিমিটেড প্রহসনের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করেছে। এমনটাই অভিযোগ ওঠে কোম্পানির বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর লেডিস ক্লাবে সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ জেনারেল ইন্সুরেন্স কোম্পানির (বিজিআইসি) এজিএমে গিয়ে দেখা গেলো ভয়ানক সব দৃশ্য।

বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর লেডিস ক্লাবে সভাটি শুরু হবার কিছু পরই শেয়ারহোল্ডারদের দুটি গ্রুপ মঞ্চে উঠার জন্য রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে। আর এনিয়ে তারা এক পক্ষ অপর পক্ষকে ঘায়েল করার জন্য অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। অদৃশ্য এ শক্তির হাতে কখনও বিনিয়োগকারী আর কখনও জিম্মি কেম্পানি কর্তৃপক্ষ। বহুল আলোচিত এ চক্রের কারণে তালিকাভুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) কথা বলার অধিকার এবং বছর শেষে ন্যায্য ডিভিডেন্ড বঞ্চিত হন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।

কিন্তু কোনোভাবেই এ চক্রকে চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না। বরং আলোচনায় এলেও রহস্যজনক কারণে সবসময়ই ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকছে এ চক্রের নেপথ্যের নায়করা। এজিএম পার্টির কর্মকান্ড আর বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি নিয়ে গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় সংবাদ প্রকাশের পর নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করার চেষ্টা করা হয় বলেও তথ্য মিলেছে।

দীর্ঘদিন ধরে এজিএম পার্টির কাছে জিম্মি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এজিএম পার্টির তৎপরতার কারণে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। বাজারের স্বচ্ছতা, বিনিয়োগকারীদের ন্যায্য অধিকার ও কোম্পানিগুলোর স্বার্থেই এ চক্রকে চিহ্নিত করার পক্ষে মত দিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা। কিন্তু এজিএম পার্টির তৎপরতার বিষয়ে দায়িত্বশীলরা অবগত থাকলেও রহস্যজনক কারণে এ অপশক্তিকে দমন করা যাচ্ছে না। এখনও এজিএম পার্টিই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে।

এ সময় তারা বিজিআইসির কোম্পানি সচিব সাইফুদ্দিন আহমদের কাছ থেকে মাইক্রোফোন ছিনিয়ে নিয়ে এমডির গুণগান শুরু করে। অপরপক্ষ বক্তব্য দিতে না পেরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে জোরপূর্বক মঞ্চে উঠতে চাইলে মঞ্চে থাকা প্রথমপক্ষ তাদেরকে জানে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। তবে এসময় কয়েকজনকে কিলঘুষি মারতে মারতে গেটের বাইরে নিয়ে যেতে দেখা যায়।

অবশ্য সভা শেষে এর জন্য প্রথমপক্ষ কোম্পানির এমডির কাছ থেকে চার লাখ টাকা চায়। দ্বিতীয় পক্ষকে শায়েস্তা করার পর সভার কার্যক্রম আবার শুরু হয়। নুরুল আনোয়ার নামে এমডির পছন্দের একজন শেয়ারহোল্ডার এবং সাংবাদিক মনিরুজ্জান বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া চেয়ারম্যন তনয় ফয়সাল সামাদ বিজিআইসির প্রতিষ্ঠাতা এম এ সামাদের স্মৃতিচারণ করে রসালো বক্তব্য দিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের মাতিয়ে রাখেন।

বিজিআইসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ সাইফুদ্দিন চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিজিআইসির পথচলা অগ্রগতির। নানা সমস্যার কারণে আমরা কাঙ্খিত ডিভিডেন্ট দিতে পারছি না। তিনি বলেন, আইডিআরএ-এর সার্কুলার অনুযায়ী আমরা কমিশন দিতে না পারলেও ডিভিডেন্ট দেবো।

সভায় শেয়ারহোল্ডারদের মধ্য থেকে ডিবিএ সভাপতি শাকিল রিজভীকে পরিচালক হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। বিজিআইসির চেয়ারম্যান তওহিদ সামাদ বলেন, ডিভিডেন্ড ব্যবসার অংশ। বিজিআইসির এজিএমের কালচার ডিপারেন্ড। গন্ডগোলের নয় শেয়ারহোল্ডাররা গাইড করবেন,বলবেন। তিনি বলেন, ইন্সুরেন্সের জন্য এখন খারাপ সময়। ইন্সুরেন্সে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটছে।

ইসলামী ইন্স্যুরেন্সের এজেন্ডা উত্থাপনের আগেই পাশ: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি ইসলামী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড প্রহসনের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করেছে। এমনটাই অভিযোগ ওঠে কোম্পানির বিরুদ্ধে। গত শনিবার সকাল সাড়ে ১০.৩০ টায় সভাটি রাজধানীর ইন্সটিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) হওয়ার কথা থাকলেও তা পৌণে ১১টার দিকে শুরু হয়।

প্রথানুযায়ী এজিএম বা বার্ষিক সাধারণ সভা যে প্রক্রিয়ায় হবার কথা তার ধারে কাছেও নেই। কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো: ইসমাইল নওয়াব বক্তব্য কিছুটা না বলে তার বক্তব্য কয়েক মিনিটের ব্যবধানে শেষ করেন। এজিএমের এজেন্ডা থাকলেও ঘোষণার আগেই তা পাশ পাশ বলে ওঠে বিনিয়োগকারীদের একাংশ। ইসলামী ইন্সুরেন্সের ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো: ইসমাইল নওয়াব বক্তব্য শুরু করে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে শেষ করেন। তিনি বলেন, শেয়ারহোল্ডারদের আস্থা ও ভালোবাসায় ইসলামী ইন্সুরেন্সের ব্যবসা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ভালো ডিভিডেন্ট দিচ্ছেন ও সামনে আরো দেবেন। মঞ্চে উপস্থিত প্রখ্যাত আলেম ও অত্র কোম্পানির শরীয়াহ্ কাউন্সিল চেয়ারম্যান সাইয়্যেদ কামালুদ্দীন জাফরীসহ অন্যান্য পরিচালক এবং মেহমানরা ১১টার আগেই অসহায়ের মতো মঞ্চ ত্যাগ করেন তিনি। ইসলামী ইন্স্যুরেন্স ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮ অর্থবছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ ক্যাশ এবং ৫ শতাংশ স্টকসহ মোট ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে।

এজিএম অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখা যায়, এজেন্ডা ঘোষনার আগেই তা পাশ পাশ বলে ওঠে বিনিয়োগকারীরা। আর তখনই অনেক বিনিয়োগকারী উত্তেজিত হয়ে পরে। এ দৃশ্য দেখার পর অনেকেই কানাঘুষা করছে, কোম্পানি এটা কি করল। শেষ পর্যন্ত এজিএম পার্টি ভাড়া করল। এমন এজিএমের কি আদৌ কোন প্রয়োজন ছিল?

এছাড়া অনেক বিনিয়োগকারীদের বলতে শোনা গেছে, পাশ না কইলে (বললে) টাকা পাবি না। খালি পাশ পাশ করবি। বিনিয়োগকারী শিহাব বলেন, আমি এসেছিলাম এজিএম’টা ভালভাবে অনুষ্ঠিত হবে ভেবে। এসে দেখি কোম্পানি কতগুলো এজিএম পার্টি (দালাল) নিয়োগ করেছে এজিএম পাশ করার জন্য। আর অন্যান্য বিনিয়োগকারীরা যাতে বার্ষিক প্রতিবেদন না পায় তার জন্য প্রতিবেদন লুকিয়ে রাখে ওই দালালরা।

দেখা গেছে, কয়েকজন শেয়ারহোল্ডার জনপ্রতি ৩শ’ টাকা হারে পেলেও অন্যরা পাননি । এ বিষয়ে কোম্পানি সচিব মজিবুর রহমান কিছুই জানেন না বলে জানান।’ ‘মারহাবা, মারহাবা। মার তেল, মার। পঠিত, পঠিত। মশা মারছেন চেয়ারম্যান (মেয়র খোকন) । মিটিং মেয়রের সম্মানে শুরু করেই শেষ। তার জন্য সবই হতে পারে। আপনাকে (এ প্রতিবেদক) কিন্তু তার কাছে নিয়ে যাবো। গেলেই বুঝতে পারবেন। জানেন মেয়র সাহেব আমাদের প্রিয় নেতা । যিনি এ কোম্পানিকে এত বড় করেছেন। তার বিরুদ্ধে কিছু লিখবেন না। তা’ হলে বুঝতে পারবেন তিনি কে? হানিফ ভাই (ঢাকার সাবেক সফল মেয়র ও মোহাম্মদ হানিফ আমাকে খুবই স্নেহ করতেন। আপনারা যে ভাষায় কথা বলছেন তিনি তেমনটা নন।

আমি তো কিছুটা জানি মেয়র খোকন একজন মাটির মানুষ।’ মিটিং শুরু করেই শেষ কেন ? এ প্রশ্নের জবাবে ইসলামী ইন্সুরেন্স বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল মতিনের সোজা-সাপটা বলেন, আমার বলার কিছু থাকে না।’ ‘এমডি সাহেব সঠিক বলেন নি। অবশ্যই মিটিং-এ সব বিষয়ে আলোচনা হবে। পরামর্শ আসবে। কোম্পানির উন্নয়নে সবাই মূল্যবান পরামর্শ দেবেন।

এটাই কিন্তু বিধি। তিনি কোম্পানির বিধি লংঘন করেছেন। এতে কোন সন্দেহ নেই। এমন বক্তব্য বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীকারী ঐক্য পরিষদ সাধারণ সম্পাদক ও শেয়ারহোল্ডার কাজী আবদুর রাজ্জাকের।’ আক্ষেপ করে শিরিন আখতার নামে একজন শেয়ারহোল্ডারের বলেন, কোম্পানি চেয়ারম্যান মেয়র সাঈদ খোকন কোন মিটিং এ আসেন না। তার প্রশ্ন এটা কেমন কথা।’

ইর্স্টান ইন্সুরেন্সের শেয়ারহোল্ডাররা এজিএম আতঙ্কে: পুুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি ইস্টার্ন ইন্সুরেন্সের ৩৩তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানস্থ স্পেক্ট্রা কনভেনশন সেন্টারে নির্ধারিত সময় বেলা ১১টার পূর্ব থেকেই এ সভা শুরু হয়। কোম্পানি সচিব মো: সামসুল আমিনের কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের কাজ শুরু করেন। কোম্পানি চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান ও মতিউর রহমানসহ কয়েকজন পরিচালক সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভায় কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ৬০/৭০ জনের মতো শেয়ারহোল্ডার উপস্থিত ছিলেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হারুন পাটোয়ারী সভাটির পরিচালনা করেন।

সভার শুরুতে হারুন পাটোয়ারী কিছু বলার সময় তাকে থামিয়ে দিয়ে একজন বিনিয়োগকারী কিছু বলার জন্য উঠে দাঁড়ালে অপর একজন তাকে ধমক দিয়ে বসে যেতে বলেন। অপর কয়েকজন মারহাবা, আলহামদুলিল্লাহ বলে বলতে থাকেন আর কিছু লাগবে না। পাস পাস। এসময় বেশ কয়েকজন বিনিয়োগকারী বলতে থাকেন হবে না। এমডি মিডিয়াকে বলে থাকেন ইস্টার্ন ইন্সুরেন্স লস প্রজেক্ট। মালিক পক্ষ বেতন দিতে পারে না।

এমন কোন চেরাগের বলে তিনি এ কোম্পানিকে লাভজনক করে ফেললেন। তা আমাদের জানা দরকার। আমাদের বলতে দিতে হবে বলে হট্টগোল করতে থাকেন। শেয়ারহোল্ডাররা অভিযোগ করে বলেন, এভাবে আর কতোদিন অধিকার বঞ্চিত থাকব। তাই আবার এজিএম পার্টির খপ্পরে শেয়ারহোল্ডাররা যেন অধিকার বঞ্চিত না হয় সেদিকে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নজর দেওয়া উচিত।

ইর্স্টান ইন্সুরেন্সে দালাল পার্টির দৌরাত্ন থাকায় প্রকৃত শেয়ারহোল্ডারা কথা বলার সুযোগ পাননি। এক পর্যায়ে কয়েকজন বক্তৃতার ডায়াসের দিকে জোর করে চলে যান। পাশে থাকা কয়েকজন তাদেরকে সরিয়ে দিয়ে নিজেরাই পাস পাস বলে বক্তব্য দিতে থাকেন। এরা চেয়ারম্যন মুজিবুর রহমানের সুন্দর চেহারা এবং চশমারও প্রশংসা করে হারুন পাটোয়ারী ও সামসুল আমিনের গুণগান করে বক্তব্য দিতে থাকেন।

এ প্রতিবেদক এদের পরিচয় জানতে চাইলে নিরীহ গোবেচারা একজন বিনিয়োগকারী বললেন, আমার পরিচয় যদি না দেন তা হলে বলবো । এরা এজিএম পার্টি। মানে দালাল। এদের দৌরাত্মের কারণেই খারাপ কোম্পানি টিকে আছে। একটু পরেই দেখবেন এমডি সাব এজেন্ডা উত্থাপন করবেন। এসব লোক প্রস্তাবক ও সমর্থক হয়ে এজিএমকে সফল করবে। মূলত হয়েছেও তাই। এরপর ১১টা ৩৮মিনিটে ইস্টার্ন ইন্সুরেন্সের চেয়ারম্যান সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভা শেষ করেন ।

গ্লোবাল ইন্সুরেন্সে এজিএমে হট্টগোল: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি গ্লোবাল ইন্সুরেন্সের গতকাল ১৯তম বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয়। এজিএমের শেষের দিকে শুরু হয় বিনিয়োগকারীদের হৈচৈ। শেয়ারহোল্ডারদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। চলতি বছরের বার্ষিক প্রতিবেদনের বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরে একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তারা। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে এই এজিএম অনুষ্ঠিত হয়। এতে কোম্পানির চেয়ারম্যান সৈয়দ বদরুল আলম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন, শতাধিক শেয়ারহোল্ডার উপস্থিত ছিলেন।

অনেক কোম্পানির এজিএমের মতো গ্লোবাল ইন্সুরেন্সের এজিএমেও ছিল শেয়ারহোল্ডার নামধারী কিছু ‘ভাড়াটে’ লোক। তাদের জন্য প্রকৃত শেয়ারহোল্ডাররা এজিএমে স্বাভাবিকভাবে বক্তব্য রাখতে পারেনি, কোনো প্রশ্ন করতে পারেনি। কেউ ডায়াসে উঠলেই অন্যরা চিৎকার চেচামেচি শুরু করেছে। তাদের চিৎকারে কারো বক্তব্য শোনা যায়নি।

একজন নারী শেয়ারহোল্ডার এজিএমে বক্তব্য দিকে চাইলে দালাল শেয়ারহোল্ডারা লাঞ্চিত করে। এ ঘটনায় পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। প্রকৃত শেয়ারহোল্ডারা কোম্পানির নানা অনিয়ম ও দুর্ণীতি তথ্য গনমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারা এজিএম আতঙ্কে: জুন ক্লোজিং কোম্পানিগুলো ২০১৮ সালের আর্থিক হিসাব প্রকাশ শেষে বার্ষিক সাধারন সভা (এজিএম) শুরু করেছে। তবে এর মধ্যে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক হিসাবে কাজ করছে এজিএম পার্টি। যেসব কোম্পানি ক্রমাগত নিচের দিকে ও দুর্নীতি পরায়ন সেসব কোম্পানির এজিএমে এই পার্টির উৎপাত বেশি লক্ষ্য করা যায়।

তবে অন্যসব কোম্পানিও এর বাহিরে থাকে না। প্রত্যেকটি কোম্পানি তাদের সমাপ্ত বছরের আর্থিক প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে সামর্থ্য অনুযায়ি শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে। আর এরইমধ্যে ২০১৮ সালের জন্য কোম্পানিগুলো শেয়ারহোল্ডারদের লক্ষে লভ্যাংশ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছে। যা এজিএমে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদনের মাধ্যমে চূড়ান্ত হবে।

কিন্তু অনেক সময় একটি কোম্পানি ভালো আয় করা সত্তে¡ও পরিচালকরা নিজেদের স্বার্থের কথা ভেবে তা থেকে বঞ্চিত করে বিনিয়োগকারীদেরকে। এদিকে বর্তমানে এমন পরিস্থিতি চলে এসেছে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ না চাইলেও এজিএম পার্টি নিজেরাই চাঁদা নির্ধারন করে দায়িত্ব পালন করে। যার পরিমাণ সাধারনত ৫-১০ লাখ টাকা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ নিতে পারে না তাদের দূর্বলতা বা অনৈতিকতা প্রকাশ হওয়ার ভয়ে। এছাড়া এজিএমে পার্টির হাত থেকে মানসম্মান রক্ষার জন্যও অনেকে আবার বাধ্য হয় তাদের চাঁদা দিতে।

তেমনি এমন ঘটনা ঘটছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে। ঘড়ির কাঁটা ঠিক ১০টার ঘরে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আক্কাস উদ্দিন মোল্লা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে ব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তারা তড়িগড়ি করে রাজধানীর মহাখালীস্থ রাওয়া কনভেনশন হলের মঞ্চে উঠলেন । ঠিক এ সময় মঞ্চ ঘিরে থাকা কয়েকজন যুবক ও মধ্য বয়সী লোক এজেন্ডা পাস পাস বলে শ্লোগান দিতে থাকে। একজনকে এদের পরিচয় সম্পর্কে জিজ্ঞ্যেস করা হলে এ প্রতিবেদককে জানায়, এরা শেয়ারহোল্ডার।

একই সময় অনুষ্ঠানের উপস্থাপক ঘোষণা করলেন, ঠিক আছে আমরা এমডি ও চেয়ারম্যান স্যারের একটু বক্তব্য দিয়েই শেষ করে দেব। অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে মঞ্চের পাশে থাকা কয়েকজনের আরেকটি গ্রুপ বললো তা হবে না। আমরা সব শুনবো। এ নিয়ে দু’পক্ষ মারমুখি অবস্থানে চলে গেলে যায়। অবশ্য একজন এসে কথা বলার পর উভয়পক্ষ থেমে যায়।

কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করতে হবে। এ নিয়ে শেয়ারহোল্ডাররা বিবাদে জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে কোরআন তেলাওয়াত শুরু হলে সবাই শান্ত হয়। এর পর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল ইসলাম এসে বক্তব্য শুরু করলে পূর্বে থেকে অবস্থান করা লোকজন চিৎকাব করে পাস পাস এজেন্ডা বলে শ্লোগান দিতে থাকে।

তিনি বলেন, আমরা কাঙ্খিত সাফল্য অর্জন করেছি। আমাদের মূলধনের পরিমান লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। এরপর ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আক্কাস উদ্দিন মোল্লা বক্তব্য দিতে আসলে আবারো একই কায়দায় এক পক্ষ হৈচৈ শুরু করে। অপরপক্ষ পাস পাস বলে শ্লোগান দিতে থাকে । এরমধ্যে তিনি বলেন, শেয়ারহোল্ডাররা গর্ব করার মতো একটি ইসলামী ব্যাংক হিসেবে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক গড়ে উঠছে। গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীস্থ রাওয়া কনভেনশন হলে অনুষ্ঠিত শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ১৮তম বার্ষিক সাধারণ সভায় এমস চিত্র দেখা গেছে।