দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের বীমা খাত উন্নয়নের বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ফলে এ খাতে কার্যকর তত্ত্বাবধান নিশ্চিত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিস্টরা। এজন্য গত বছর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ৬৩২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। ‘বাংলাদেশের বীমা খাত উন্নয়ন’ নামের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ৫১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ দেবে বিশ্বব্যাংক। বাকি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশনের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা শক্তিশালী করা হবে। সেই সঙ্গে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশে ইন্স্যুরেন্স কভারেজ বৃদ্ধি করা হবে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি বছর থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সদস্য ও মুখপাত্র গকুল চাঁদ দাস দেশ প্রতিক্ষণকে বলেন, বীমা খাত অটোমেশন হলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। ফলে বীমার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়বে, যা টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।

এদিকে দীর্ঘ মন্দার পর পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার আভাস দিচ্ছে। টানা দর পতনের পর অনেক বীমা কোম্পানির শেয়ারের দর কমে এসেছে। মৌলভিত্তি বিশ্লেষণ করলে ব্যাংকের পাশাপাশি বীমা খাতের শেয়ারও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ রয়েছে। তাছাড়া গত ছয় মাসে বীমা খাতে নিট মুনাফা হয়েছে ১৯৮ কোটি টাকা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘ মন্দায় ইতোমধ্যে যারা শেয়ার ক্রয় করে লোকসানে রয়েছেন, তারা করছেন ভিন্ন হিসাব। তাদের অনেকেই সমন্বয় করে লোকসান পোষাতে চাচ্ছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে দোলাচলে রয়েছেন তারা। কারণ বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারদর টানা কমছে। তবে পরিস্থিতি যাই হোক না কেন যাদের শেয়ারদর অনেক কমে গেছে, তারা এখন সমন্বয় করলে ক্ষতির মুখে পড়বেন না। কারণ কিছু শেয়ারদর এমন পর্যায়ে গেছে যে, এখান থেকে আর কমার শঙ্কা নেই। কারন ঈদ পরবর্তী পুঁজিবাজার চাঙ্গা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে গত বছরের প্রথম ৬ মাসে (জানুয়ারি-জুন) শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সাধারণ বীমা খাতের ৩৫ কোম্পানি নিট ১৯৮ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেশি। চলতি বছরের জুনে দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে সাধারণ বীমা খাতের কোম্পানিগুলোর প্রকাশিত অনিরীক্ষিত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) কোম্পানিগুলো প্রায় ১০০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে, যা গত বছরের তুলনায় সাড়ে ১৩ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে তুলনামূলক বেশি মুনাফা করেছে এ খাত। যদিও দ্বিতীয় প্রান্তিকে এ খাতের ১৯ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) বেড়েছে, কমেছে ১৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে দুটি কোম্পানির। বছরের প্রথম ছয় মাসের হিসাবে ২৬ সাধারণ বীমা কোম্পানির ইপিএস বেড়েছে, কমেছে বাকি নয়টির।

পর্যালোচনায় আরও দেখা গেছে, গত জুন শেষে তালিকাভুক্ত ৩৫টি সাধারণ বীমা কোম্পানির মোট পরিশোধিত মূলধন ছিল প্রায় এক হাজার ৭৪০ কোটি টাকা। দ্বিতীয় প্রান্তিকে এদের মুনাফার পরিমাণ মূলধনের ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ের ছিল ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। বছরের প্রথম ছয় মাসের হিসাবে মুনাফা বেড়েছে ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ১০ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

ইপিএস বেড়েছে :প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বছরের প্রথমার্ধে শেষে মুনাফা ও ইপিএস প্রবৃদ্ধিতে শীর্ষে ছিল প্রাইম ইন্স্যুরেন্স। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে বীমা কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় ছিল মাত্র ছয় পয়সা। এ বছর যা ৬৪ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। এছাড়া গত বছর দ্বিতীয় প্রান্তিকে এ কোম্পানির প্রতি শেয়ারে ২৯ পয়সা লোকসান থাকলেও এ বছর একই সময়ে মুনাফা হয়েছে ২০ পয়সা।

মুনাফায় প্রবৃদ্ধিতে এর পরের অবস্থানে রয়েছে প্যারামাউন্ট ইন্স্যুরেন্স। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে এ কোম্পানির ইপিএস ছিল ৩৫ পয়সা, যা এ বছর একই সময়ে ৮৭ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। একইভাবে দ্বিতীয় প্রান্তিকের ইপিএস গত বছরের ২০ পয়সা থেকে বেড়ে ৫২ পয়সা হয়েছে।

মুনাফায় প্রবৃদ্ধিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইউনাইটেড ইন্স্যুরেন্স। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে এ কোম্পানির ইপিএস ছিল ৮৪ পয়সা, যা এ বছর একই সময়ে এক টাকা ৩৩ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। একইভাবে দ্বিতীয় প্রান্তিকের ইপিএস গত বছরের ৪২ পয়সা থেকে বেড়ে এক টাকা ১৪ পয়সা হয়েছে। চতুর্থ অবস্থানে থাকা সিটি জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের ৬ মাসে ইপিএস ৪৪ পয়সা থেকে বেড়ে ৬২ পয়সায় উন্নীত হয়েছে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে হয়েছে ১৭ পয়সা থেকে ২৮ পয়সা। পঞ্চম অবস্থানে থাকা ফেডারেল ইন্স্যুরেন্সের ছয় মাসের ইপিএস ২৯ পয়সা থেকে বেড়ে ৩৭ পয়সায় এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১৯ পয়সা থেকে ২৩ পয়সা হয়েছে।

মুনাফায় প্রবৃদ্ধিতে পরের অবস্থানে থাকা স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। বছরের প্রথমার্ধের ইপিএস গত বছরের তুলনায় ২০ থেকে ২৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে কন্টিনেন্টাল, রিলায়েন্স, এশিয়া প্যাসিফিক, গ্লোবাল, প্রগতি এবং ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের। ইপিএসে ১০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে সোনার বাংলা, পূরবী, রিপাবলিক এবং পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্সের।

ইপিএস কমেছে :মুনাফায় থাকলেও গত বছরের তুলনায় ইপিএস কমেছে ৯ বীমা কোম্পানির। এগুলো হলো- মার্কেন্টাইল, নর্দান, পিপলস, সেন্ট্রাল, গ্রীন ডেল্টা, বাংলাদেশ জেনারেল, বাংলাদেশ ন্যাশনাল, ফিনিক্স এবং তাকাফুল ইন্স্যুরেন্সের। এর মধ্যে ইপিএস কমার হারে মার্কেন্টাইল ইন্স্যুরেন্স ছিল শীর্ষে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে এ বীমা কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ৮০ পয়সা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল এক টাকা ০১ পয়সা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এ কোম্পানিটির ইপিএস কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ। দ্বিতীয় প্রান্তিকের ইপিএস গত বছরের ৩৩ পয়সা থেকে কমে ১৮ পয়সায় নেমেছে।

ইপিএস কমায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল নর্দান ইন্স্যুরেন্স। জুন শেষে কোম্পানিটির ইপিএস দাঁড়িয়েছে এক টাকা ০৩ পয়সা, যা গত বছর ছিল এক টাকা ২৮ পয়সা। যদিও দ্বিতীয় প্রান্তিকের ইপিএস গত বছরের ৩৪ পয়সা থেকে এ বছর ৪৯ পয়সা হয়েছে। তৃতীয় অবস্থানে থাকা পিপলস ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস এক টাকা ৮৫ পয়সা থেকে কমে এ বছর এক টাকা ০৪ পয়সায় নেমেছে। ইপিএস কমেছে ১৮ শতাংশ। দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইপিএস ৪৪ পয়সা থেকে কমে ৪০ পয়সায় নেমেছে।