আবদুর রাজ্জাক, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দীর্ঘদিন লোকসান হওয়ায় ব্যথানাশক ওষুধ ডিসপ্রিন ও মশা নিধনকারী মরটিন কয়েল উৎপাদন বন্ধ করেছে রেকিট বেনকিজার (বিডি) লিমিটেড। এরপরই নিজস্ব কারখানায় ডেটল উৎপাদন শুরু করেছে কোম্পানিটি। পরিচালনা পর্ষদের এমন সিদ্ধান্তের সুফল পাচ্ছে কোম্পানিটি। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি হিসাব বছরের অর্ধবার্ষিকে কোম্পানিটির মুনাফা ৯২ দশমিক ৪৬ শতাংশ বেড়েছে। কোম্পানি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। চলতি হিসাব বছরের অর্ধবার্ষিকে (জানুয়ারি-জুন) কোম্পানিটি ২১৫ কোটি ৭৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করেছে।

এতে তাদের খরচ হয়েছে ৯৩ কোটি ১৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ মোট বিক্রির ৪৩ শতাংশ খরচ হয়েছে। গ্রস মুনাফা হয়েছে ১২২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর আগের বছর একই সময় ১৮৭ কোটি ৩০ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি হয়েছিল। এতে খরচ হয়েছিল ৮৭ কোটি ৬১ লাখ টাকা। সে বছর মোট বিক্রির ৪৭ শতাংশ খরচ হয়েছিল। গ্রস মুনাফা ছিল ৯৯ কোটি ৬৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকা।

আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটি কর পরিশোধের পর নিট মুনাফা করেছে ১৭ কোটি ৬১ লাখ ৪১ হাজার টাকা এবং শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৩৭ টাকা ২৮ পয়সা। এর আগের বছর একই সময় নিট মুনাফা ছিল ৯ কোটি ১৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা এবং ইপিএস ১৯ টাকা ৩৭ পয়সা। ইপিএসে প্রবৃদ্ধি ৯২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ৩০ জুন ২০১৯ শেষে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভি) হয়েছে ৪৮ টাকা ৯০ পয়সা। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ শেষে এনএভি হয়েছে ৮১ টাকা ৬৩ পয়সা।

কোম্পানিটি ইকুইটিকে নিট সম্পদ হিসাব করেছে। আর রিটেইনড আর্নিংস কমে যাওয়ায় ইকুইটি কমেছে।এদিকে দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) কোম্পানিটির নিট মুনাফা হয়েছে ১০ কোটি ৩০ লাখ ৭৮ হাজার টাকা এবং ইপিএস ২১ টাকা ৮২ পয়সা। এর আগের বছর একই সময়ে নিট মুনাফা ছিল ৫ কোটি ৬৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকা এবং ইপিএস ছিল ১২ টাকা ৩ পয়সা। দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইপিএসে প্রবৃদ্ধি ৮১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এ বিষয়ে রেকিট বেনকিজারের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রেকিট বেনকিজার মূলত টয়লেট্রিজ ও ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য উৎপাদন করে। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি ডিসপ্রিন ও ২০১৬ সালে মরটিন কয়েল উৎপাদন বন্ধ করা হয়।

আগে টোল ম্যানুফ্যাকচারিং এগ্রিমেন্টের মাধ্যমে হক গ্রুপের কারখানায় ডেটল সাবান উৎপাদন করলেও বর্তমানে নিজস্ব কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে। ডিসপ্রিন বন্ধ করার পরপরই নিজস্ব কারখানায় ডেটল উৎপাদন শুরু হয়। এতে উৎপাদন খরচের পাশাপাশি প্রশাসনিক ব্যয়ও কমেছে। এ ছাড়া হারপিক বিক্রিতে ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত ২০১৮ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ৭০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে রেকিট বেনকিজারের পরিচালনা পর্ষদ। এ সময় ইপিএস হয়েছে ৭০ টাকা ২২ পয়সা। ২০১৭ হিসাব বছরে ইপিএস ছিল ৮০ টাকা ৬৩ পয়সা।

সে বছর ৭৯০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল কোম্পানিটি। ১৯৮৭ সালে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ২৫ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ৪ কোটি ৭২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। রিজার্ভ ৩৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। মোট শেয়ার সংখ্যা ৪৭ লাখ ২৫ হাজার। এর মধ্যে ৮২ দশমিক ৯৬ শতাংশ বা ৩৯ লাখ ১৯ হাজার ৯১৮টি শেয়ারই রয়েছে মূল কোম্পানি যুক্তরাজ্যভিত্তিক রেকিট বেনকিজার পিএলসির কাছে। এ ছাড়া সরকারের কাছে ৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৪ দশমিক ২৩, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩ দশমিক শূন্য ১ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে বাকি ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।