আমীনুল ইসলাম, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা:  ২০১৭ সালে চামড়াপণ্যকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয়ভাবে বর্ষপণ্য বা প্রোডাক্ট অব দ্য ইয়ার ঘোষণার পর ২০২১ সালে এ খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করে সরকার। তারপর থেকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি বাড়া অনেক দূরের কথা, উল্টো কমছে। এ খাত থেকে গত অর্থবছরের রপ্তানি আয় ছয় বছর আগের আয়ের তুলনায়ও কমে গেছে। এ অবস্থায় আগামী দুই বছরের মধ্যে রপ্তানি চারগুণ বাড়িয়ে ৪ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য পূরণ প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কোরবানির পশুর চামড়ার দরপতনের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি, উৎপাদন ও আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয় ১ কোটি ৬২ লাখ ডলার। তারপর থেকে বাড়তে থাকা রপ্তানি আয় ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৩২ কোটি ৫২ লাখ ডলারে পৌঁছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছর তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১১৩ কোটি ডলারে। দুই বছর পর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয় ১২৩ কোটি ডলার।

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি উল্টো দিকে ঘুরে যায় পরের অর্থবছর থেকেই। ২০১৭-১৮ অর্থবছর ১২ শতাংশ কমে এ খাতের রপ্তানি আয় নেমে আসে ১০৮ কোটি ডলারে। আর গত অর্থবছর ৬ শতাংশেরও বেশি কমে নামে ১০২ কোটি ডলারে। এ অবস্থায় ২০২১ সালের মধ্যে এ খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার রপ্তানি আয় করা খুবই কঠিন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে বিদেশে এক সময় বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা ছিল। সরকার ও বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সমন্বয়হীনতার কারণে এ শিল্প প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। এ দেশের কৃষি খাত বিশেষ করে ধান ব্যবসাও সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে। ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না কৃষক, তৈরি হয়েছে বহু সংকট। প্রায় একইভাবে চামড়াজাত পণ্য বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি পণ্য হওয়া সত্তে¡ও সিন্ডিকেটের কারসাজিতে শিল্পটি বিপন্ন হতে চলেছে।

তৃণমূল পর্যায়ে বিক্রেতা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের চামড়ার ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার পেছনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সঙ্গে সিন্ডিকেটের দৌরাত্মও রয়েছে। এ দুইয়ের কারসাজিতে চামড়া শিল্প আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে। যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধান ও খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চামড়া শিল্পে সংকটের নেপথ্যে রয়েছে ২৯টি কারণ।

কারণগুলো হচ্ছে: ১. সঠিক পরিকল্পনার অভাব, ২. সাভারে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) নির্মাণ কাজ শেষ না করে কারখানা স্থানান্তর করা, ৩. সাভারে ট্যানারিপল্লীতে অবকাঠামোগত সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করা, ৪. নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ ও সময়মত গ্যাস সংযোগ দিতে না পারা, ৫. লোডশেডিং, ৬. জেনারেটর ব্যবস্থা ভালো না হওয়া,

৭. সড়ক যোগাযোগে অব্যবস্থাপনা, ৮. চামড়া কাটার পর বর্জ্য কোথায় ফেলা হবে সেটি নির্ধারণ করতে না পারা, ৯. জমির দলিল হস্তান্তরসহ নানা বিষয় নিয়ে চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব, ১০.তিন বছরেও সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে প্রত্যাশা অনুযায়ী সুবিধা নিশ্চিত করতে না পারা, ১১. কারখানা স্থানান্তরের পরও অনেক প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যেতে না পারায় রফতানি আদেশ বাতিল হয়ে যাওয়া,

১২. হাজারীবাগে ২০৫ টি কারখানা থাকলেও সাভারে মাত্র ১৫০টি প্লট বরাদ্দ দেয়া, ১৩. প্লট না পাওয়া ৫৪টি কারখানা বন্ধ হওয়ায় এসব কারখানার শ্রমিকদের বেকার হয়ে যাওয়া, ১৪. অবৈধ পথে চামড়া পাচার, ১৫.বিশ্ব বাজারের দরপতনে দেশের চামড়া শিল্পের অবস্থান আন্তর্জাতিক বাজারে দুর্বল হয়ে যাওয়া, ১৬. টানা কয়েক বছর ধরে চামড়া রফতানি আয় কমে যাওয়া, ১৭. আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পণ্যের আধুনিকায়নে সামঞ্জস্যতা না থাকা, ১৮. চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধ,

১৯. বিশ্ববাজারে চামড়ার জুতার পরিবর্তে সিনথেটিক বা কাপড় জাতীয় জুতার আগ্রহ বৃদ্ধি, ২০. চামড়াজাত পণ্যের উৎপাদন কমে যাওয়া, ২১. চামড়া শিল্পকে পরিবেশবান্ধব করে গড়ে না তোলা, ২২. ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী কারখানার পরিবেশ উন্নত না করা, ২৩. চাহিদার তুলনায় ব্যাংক ঋণ না পাওয়া, ২৪. পুঁজি সংকট, ২৫. দক্ষ শ্রমিকের সংকট, ২৬. গতবারের চামড়া এখনো প্রক্রিয়াজাত করতে না পারা, ২৭. আগের বছরের সংগৃহীত কাঁচা চামড়ার গুণগত মান কমে যাওয়া, ২৮.নতুন চামড়া সংরক্ষণে স্থান সংকট এবং ২৯. আমলাতান্ত্রিক জটিলতা।

কাঁচামালের সহজলভ্যতার পাশাপাশি মূল্য সংযোজনের হিসেবে কোনো একটি নির্দিষ্ট খাত থেকে সবচেয়ে বেশি রফতানি আয়ের অন্যতম বড় উৎস দেশের চামড়া শিল্প। কিন্তু এ সত্য শুধু কাগজে কলমেই। বাস্তবতা হলো, নানা ধরনের পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন প্রতি মাসে আমদানি করছে প্রায় ৫০ লাখ বর্গফুট চামড়া। অথচ প্রতি বছর দেশে উৎপাদিত ২২ কোটি ঘনফুট চামড়ার প্রায় অর্ধেকই ব্যবহৃত হচ্ছে না রফতানিযোগ্য পণ্য উৎপাদনে। চামড়ার আন্তর্জাতিক ক্রেতাজোট লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ এল ডব্লিউ জি’র ছাড়পত্র না থাকাই এর মূল কারণ। ট্যানারি মালিকরা বলছেন, সাভারে নতুন শিল্পনগরীই পারতো সব সংকট সমাধান করতে, যদিও তাদের দাবি বিসিকের গাফিলতিতে সংকট বেড়েছে আরও।

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি সম্পর্কে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চামড়াশিল্পে পরিবেশবান্ধব হিসেবে স্বীকৃতির ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের সনদ থাকতে হয়। এ সনদ পাওয়ার ক্ষেত্রে কার্যকর ইটিপি (বর্জ্য পরিশোধনাগার) থাকতে হয়। পরিবেশবান্ধব হিসেবে বাংলাদেশি চামড়ার স্বীকৃতি না থাকায় বিদেশি গ্রহণযোগ্যতা ও দাম দুটোই কম। বাংলাদেশের মাত্র দুটি ট্যানারির এ সনদ রয়েছে। এর একটি এপেক্স ট্যানারি, অন্যটি আসটান লিমিটেড।

পরিবেশ সনদ না থাকায় বাংলাদেশ থেকে অনেক ক্রেতা অন্যত্র চলে গেছে। চামড়া ও চামড়াপণ্য রপ্তানি কমার কারণ হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি প্রক্রিয়াজাত করা চামড়ার গুণগত মান আন্তর্জাতিক মানদন্ডের না হওয়ায় ব্র্যান্ডের চামড়াজাত পণ্য তৈরিতে বিদেশ থেকে চামড়া আমদানি করা হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৯৪৫ কোটি টাকার চামড়া আমদানি করেছে। বাংলাদেশের ক্রাস্ট ও ফিনিশড চামড়া রপ্তানি অনেকটাই চীনা বাজারের ওপর নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য অচলাবস্থার কারণে বাংলাদেশি চামড়ার দাম কমে গেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, সিনথেটিক জুতা ও পণ্যের দাম কম ও ফ্যাশনেবল হওয়ায় চামড়াজাত পণ্যের বাজার অনেকটাই দখল করে নিয়েছে। বিশ্ববাজারে চামড়াজাত পণ্যের দাম না কমলেও চাহিদা কমে গেছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে উচ্চমূল্যের পণ্যের চাহিদা রয়েছে। তবে বাংলাদেশ এ ধরনের পণ্যবাজারে তেমনভাবে প্রবেশ করতে পারেনি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাভারে ট্যানারি স্থানান্তরের পর চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ কমে গেছে। হাজারীবাগে প্রায় ৩০ কোটি বর্গফুট চামড়া প্রক্রিয়াজাত হতো। সাভারে এখন হচ্ছে ২২ থেকে ২৫ কোটি বর্গফুট। তবে সাভার ট্যানারি পল্লী পুরোপুরি চালু হলে ৯০ কোটি বর্গফুট প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব হবে।

মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা দেশ প্রতিক্ষণকেজানান, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে প্রতিবেদনে বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘এক্সপোর্ট কমপিটিটিভনেস ফর জবস’ প্রকল্পের আওতায় চামড়াজাত পণ্যের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে টেস্টিং, ক্যালিব্রেশন ও কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার স্থাপন করা হবে। এছাড়া সামাজিক, পরিবেশগত ও পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে রপ্তানিমুখী চামড়াশিল্প কারখানার সংস্কারে ম্যাচিং গ্রান্টের ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি জানান, বাংলাদেশি চামড়াজাত পণ্যের ব্র্যান্ডিং ও এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন যৌথভাবে তৃতীয়বারের মতো আগামী ৩১ অক্টোবর ‘বাংলাদেশ লেদার ফুটওয়্যার অ্যান্ড লেদার গুডস ইন্টারন্যাশনাল সোর্সিং শো-বিøস’ আয়োজন করতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সম্মতি দিয়েছেন। এ অনুষ্ঠানে বিদেশি ব্র্যান্ড, ক্রেতা, ব্যবসায়ীদের সমাগম ঘটে।

অন্যদিকে কাঁচা চামড়ার মৌসুমেও কর্মহীন ও অলস সময় পার করছে ‘অ্যাপেক্স ট্যানারি’র শ্রমিকরা। গত ছয় মাসে ভালো ব্যবসা করতে পারেনি কোম্পানিটি। ফলে আলোচ্য সময়ে প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) কমেছে। তবে প্রথম প্রান্তিকে ইপিএস বেশি দেখিয়ে শেয়ারের দর বাড়ানোর অভিযোগও রয়েছে। ‘অ্যাপেক্স ট্যানারি’র আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্পনগরীতে অবস্থিত কোম্পানির কারখানা সরেজমিনে পরিদর্শন করে এসব তথ্য জানা গেছে।

সম্প্রতি অ্যাপেক্স ট্যানারির কারখানা পরিদর্শনে গেলে কোম্পানির সচিব সুশান্ত কুমার সাহা প্রথমেই কথা না বলে হঠাৎ কারখানা পরিদর্শনে আসার কারণ জানতে চাইলেন। নানা প্রশ্নে জর্জরিত করার পর অবশেষে কারখানায় প্রবেশের অনুমতি দেন তিনি। ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, হাতেগোনা ৮ থেকে ১০ জন শ্রমিক কাজ করছে। আবার আরেকটি ফ্লোরে গিয়ে দেখা যায় শ্রমিকরা শুয়ে আছেন।

ঈদ-উল আযহার পর ট্যানারিগুলো ব্যস্ত সময় কাটালেও অ্যাপেক্স ট্যানারির চিত্র ভিন্ন। ভবনের নিচতলায় চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার মেশিনগুলোর ৭৫ শতাংশই বন্ধ রয়েছে। সেখানে শুধু একজন শ্রমিককে ঘুরাফেরা করতে দেখা গেছে। অধিকাংশ মেশিন বন্ধ থাকায় শ্রমিকের ভিড়ও নেই। দ্বিতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো শ্রমিকই কাজের মধ্যে নেই। দু’একজন শ্রমিক হাঁটাহাঁটি করছে। আর দু’জন শ্রমিক ফ্লোরে শুয়ে আছেন। কোনো সিকিউরিটির লোক (নিরাপত্তা কর্মী) বা ফ্লোর ইনচার্জ কাউকেই পাওয়া যায়নি।

এরপর তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখা যায়, প্রক্রিয়াজাতকৃত চামড়ার স্তূপ রয়েছে। এই ফ্লোরের এক কোনায় ৫ থেকে ৬ জন শ্রমিক কাজ করছে। ছবি তুলতে গেলে একজন এসে জানতে চাইলেন। সাংবাদিক পরিচয় দিলে আর কথা না বলে চলে যান।

এরপর কোম্পানির অফিস ফ্লোরে গিয়ে কোম্পানি সচিবের জন্য অপেক্ষা। কিছুক্ষণের মধ্যেই আসলেন কোম্পানি সচিব সুশান্ত কুমার সিনহা। কোরবানী ঈদে কোম্পানি সরাসরি কাঁচা চামড়া কিনেছে কি না জানতে চাইলে ‘মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার অনুমতি নেই’ বলে জানান তিনি। এরপর সব প্রশ্নই এড়িয়ে যান তিনি। চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার বা সিএফওর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চাইলে সুশান্ত কুমার জানান, তারও কথা বলার নিষেধাজ্ঞা আছে। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বাইরে কেউ কথা বলতে পারবে না বলে জানান তিনি।

এদিকে অ্যাপেক্স ট্যানারির আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, কোম্পানি প্রথম প্রান্তিকে ইপিএস দেখানো হয়েছে ৪৮ পয়সা দেখিয়েছে। এর পরের দুই প্রান্তিকে সেটির আর ধারাবাহিকতা রাখতে পারেনি। দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইপিএস দাঁড়িয়েছে ১১ পয়সা। সর্বশেষ তৃতীয় প্রান্তিকে ধস নেমে এসেছে। এবার ইপিএস দাঁড়িয়েছে মাত্র ৬ পয়সা। তবে কোম্পানিটি প্রথম প্রান্তিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইপিএস বেশি দেখিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের ১৪ নভেম্বর প্রথম প্রান্তিক ঘোষণার পর কোম্পানির শেয়ারের দর ১৩৮ টাকা থেকে বেড়ে দুই মাসের ব্যবধানে ১৫৩ টাকায় ওঠে আসে।
এরপর চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি দ্বিতীয় প্রান্তিক ঘোষণার পর থেকে আবার কমতে থাকে। তৃতীয় প্রান্তিকের পর সেটির দাম এখন নিন্মমুখী।

অন্যদিকে অ্যাপেক্স ট্যানারির শেয়ারের দর কমার পরও অতি মূল্যায়িত রয়েছে। বর্তমানে (২২ আগস্ট পর্যন্ত) নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী মূল্য ও আয়ের অনুপাত (পিই রেশিও) ১৪৭.৪৬। আর অ-নিরীক্ষিত প্রতিবেদন অনুযায়ী পিই ৫০.৫১।

এছাড়া কোম্পানি শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) কমেছে। সর্বশেষ অ-নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী এনএভি ৬৮ টাকা ১৩ পয়সা। অথচ ৩০ জুন ২০১৮ তে এনএভি ছিল ৭২ টাকা ২৪ পয়সা। এসব বিষয়ে কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। কোম্পানির অন্যতম পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুরকে তার মোবাইলে ফোন করে এবং খুদে বার্তা পাঠানোর পরও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ সিএসই সাবেক সভাপতি ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ বলেন, ‘কোম্পানির অ-নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে যদি কেউ বাড়িয়ে দেখায় এটি ধরার কোনো উপায় নেই। এটি একমাত্র নৈতিকতার অভাবেই হয়ে থাকে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে নৈতিকতা বাড়াতে হবে। ম্যানেজমেন্ট ও পর্ষদ যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য দেয় তাহলে এটি ধরার কোনো উপায় নেই।’

বিগত ২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮ সালে অ্যাপেক্স ট্যানারি ৪০ শতাংশ হারে নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। সর্বশেষ ৩০ জুন অনুযায়ী কোম্পানির পরিচালকদের কাছে ৪৩.০৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ৩৫.০৭ শতাংশ এবং ২১.৮৮ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে।