দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের একাধিক উদ্যোগের পরেও লেনদেনে গতি ফেরেনি পুঁজিবাজারে। প্রতিনিয়তই বাজারে লেনদেন কমছে। এক হাজার কোটি টাকার গড় লেনদেন তিনশো কোটি টাকায় নেমে এসেছে। চরম আস্থা ও তারল্য সংকটের কারণে এমনটি হচ্ছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এভাবে বাজার চলতে থাকলে চরম ক্ষতির মুখে পড়বেন বিনিয়োগকারীরা।

গত এক বছরে যে আইপিওগুলো বাজারে এসেছে সেগুলোর অনেকটাই অভিহিত মূল্যের নিচে অবস্থান করছে। প্লেসমেন্ট ও আইপিও বাণিজ্যের কারণে এমনটি হয়েছে বলে মনে করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। তাদের মতে প্লেসমেন্টের কারণে হাজার হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে চলে গেছে। দুর্বল কোম্পানিকে উচ্চহারে প্রিমিয়াম দিয়ে বাজারে আনার কারণে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

একাধিক বিনিয়োগকারীরা বলেন, পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি খুবই শোচনীয়। এ পরিস্থিতিতে সরকারসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ভুমিকা না নিলে বিনিয়োগকারীরা পুঁজি হারিয়ে পথে বসছে। আশা করি সরকার দ্রুত ভুমিকা নিবে বলে তিনি মনে করেন।

রইচ উদ্দিন নামে একজন বিনিয়োগকারী বলেন, পুঁজিবাজারে দরপতনের শেষ কোথায়। এটা কোন বাজার হতে পারে না। এটা লুটের বাজার। আমাদের কষ্টের টাকা শেষ হয়ে গেলেও কেউ বলার নেই। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, দেশে কি সরকার নেই। একদিকে বিনিয়োগকারীরা নি:স্ব হচ্ছে, অন্যদিকে বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে জিডি দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে।

এ ব্যাপারে ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, তারল্য সংকট ও বাজারে আস্থা না থাকায় লেনদেনে ভাটা পড়েছে। বিনিয়োগকারীদের মাঝে বাজার নিয়ে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করায় বাজার ঘুরে দাঁড়াতে পারছে না।

তিনি বলেন, বাজারে এখন আস্থা শূন্যের কোটায় রয়েছে। যতগুলো আইপিও বাজারে এসেছে প্রত্যেকটিতেই বিনিয়োগকারীরা ঠকেছে। তারা ব্যালেন্স শিট এবং আইপিওর ওপর কোনো আস্থা রাখতে পারছে না বলেই বাজারের এমন চিত্র। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে তারল্য বৃদ্ধি ও বাজারে ভালো কোম্পানিকে আনতে হবে বলে মনে করেন মিনহাজ মান্নান ইমন।

অপরদিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বাজার থেকে দূরে থাকা এবং প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা চলে যাওয়ার কারণে বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরছে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক।

তিনি বলেন, বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কোনো ভূমিকা নেই। মার্চেন্ট ব্যাংক ও আইসিবি বাজারে কোনো ভূমিকা রাখছে না। যদিও বিএসইসি আইপিও বন্ধসহ প্লেসমেন্টের ওপরে রুল জারি করলেও ইতিমধ্যেই প্লেসমেন্টের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে চলে গেছে। যার কারণে বিনিয়োগকারীরা নিস্ব হয়ে গেছেন। আস্থা সংকটের পড়ে তারা নতুন করে বিনিয়োগ করতে পারছেন না। যার প্রভাব বাজারে পড়ছে বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন লেনদেনের শুরুতে উত্থান থাকলেও ২০ মিনিট পর সেল প্রেসারে টানা নামতে থাকে সূচক। গতকাল লেনদেন শেষে সূচকের পাশাপাশি কমেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। আর টাকার অংকেও লেনদেন আগের দিনের তুলনায় কিছুটা কমেছে। গতকাল দিন শেষে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৩২ কোটি ৪০ লাখ ৮১ হাজার টাকা। দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ২৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫০৭০ পয়েন্টে।

আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১১৭৮ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১৭৯১ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৫১টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৯৩টির, কমেছে ২১০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৮টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ৩৩২ কোটি ৪০ লাখ ৮১ হাজার টাকা।

এর আগের কার্যদিবস দিন শেষে ডিএসইর ব্রড ইনডেক্স ৪৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ৫০৯৫ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৯ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১১৮৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৭ পয়েন্ট কমে অবস্থান করে ১৮০০ পয়েন্টে। আর ওইদিন লেনদেন হয়েছিল ৪০২ কোটি ৯১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সে হিসেবে আজ ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৭০ কোটি ৫০ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।

এদিকে দিন শেষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সাধারণ মূল্য সূচক সিএসইএক্স ৪৬ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৯ হাজার ৪১০ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ২৩০টি কোম্পানির ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫৮টির, কমেছে ১৩৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৬টির। আর দিন শেষে লেনদেন হয়েছে ১৩ কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা।