এফ জাহান ও এম রহমান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: নানা পদক্ষেপেও আস্থা ফিরছে না বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে। লেনদেন তলানীতে নেমে আসছে। মূল্যসূচক একদিন বাড়ছে, তো পাঁচ দিন পড়ছে। কোন কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। এদরপতন ঠেকাতে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট অব করপোরেশন (আইসিবি) বেশ কিছু উদ্যোগ নিলেও তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। এ অবস্থায় সাবেক সকল ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সহযোগিতা চেয়েছে আইসিবি। সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের পরামর্শে নতুন তহবিল গঠনের জন্য একটি ‘একশন প্লান’ হাতে নিচ্ছে আইসিবি।

এদিকে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতার লক্ষে ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) নয়া পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে তারল্য সংকট বিরাজ করায় আইসিবি এ নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। কারন বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের উত্তম সময়। দিন দিন নতুন নতুন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ছে। নতুন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়লেও অস্থিতিশীল বাজার থাকায় লেনদেন তেমন একটা বাড়ছে না।

এছাড়া নির্বাচনের পর পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল রাখতে আইসিবি নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। টানা অস্থিতিশীল বাজার থেকে উত্তরণের পাশাপাশি চলমান তারল্য ও আস্থার সংকট দূর করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাই বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গড়ার লক্ষ্যে বেশ কিছু নতুন কর্মপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে আইসিবি ।

জানা গেছে, গত রোববার আইসিবির সভাকক্ষে সাবেক সব ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সাথে মতবিনিময়ের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। সবাই একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেয়। সভায় আইসিবির সদ্য নিয়োজিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা ঠিক করতে সকলের কাছে পরামর্শ চান।

আইসিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুজিব উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সদ্য নিয়োজিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসেন, সদ্য বিদায়ী ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী সানাউল হক ছাড়াও মো. ইফতেখারুজ্জামান, মো. ফায়েকুজ্জামান, জিয়াউল হক খন্দকার, খায়রুল হুদা, আবদুর রউফ, ওয়াহিদুজ্জামানসহ সাবেক অধিকাংশ ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা অংশ নেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, উপস্থিত সবাই তারল্য সঙ্কটের বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন। এজন্য আইসিবিকে আরো বেশি তহবিল গঠনের পরামর্শ দেন। বিশেষ করে মিউচ্যুয়াল ফান্ড, বন্ড ছেড়ে তহবিল গঠন করার প্রস্তাব আসে। পাশাপাশি বাংলাদেশ ফান্ডের মতো আরেকটি বিশেষ তহবিল গঠন করা পক্ষেও মত দিয়েছেন দু’য়েকজন।

এছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের উদ্যোক্তা করা। আইসিবি নিজেও আরো ইউনিট ফান্ড গঠন করতে পারে। পাশাপাশি বাজারে লেনদেন যোগ্য বন্ডের উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে।

আইসিবিকে নতুন বিনিয়োগকারী আনার পরামর্শও দেয়া হয়েছে। শুধু নতুন ইস্যু আনলেই হবে না। আইবিসিকে বিনিয়োগকারী বাড়াতে হবে। নতুন বিনিয়োগকারী আসলে বাজারে নতুন তহবিল আসবে। এটিও বাজারের জন্য ইতিবাচক হবে।

সুত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে পুঁজিবাজারে ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ‘ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ’ (আইসিবি)। এছাড়া ইক্যুইটি হিসেবে অর্থ বিতরণ করবে ৪০ কোটি টাকা। সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তির আওতায় এ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার ঘাটতি থাকায় চলতি অর্থবছরে অধিকাংশ সূচকে আইসিবি’র লক্ষ্যমাত্রা আগের অর্থবছরের তুলনায় কমানো হয়েছে।

আইসিবি’র নিজস্ব ভাষ্য অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে মুদ্রাবাজার থেকে পরিবর্তনশীল সুদহারে সংগৃহীত তহবিলের ওপর নির্ভরশীলতা এবং পর্যাপ্ত তহবিল প্রাপ্তির সীমাবদ্ধতা; স্বল্পমেয়াদে তহবিল সংগ্রহ করে দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের ফলে সংস্থার তহবিল ব্যয় ও সুদ ব্যয় বেড়ে যাওয়া; বিপুল পরিমাণ মার্জিন ঋণ অনাদায়ী থাকা সংস্থাটির প্রধান সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ।

চুক্তি অনুযায়ী, পুঁজিবাজারে উল্লেখিত পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ ছাড়াও চলতি অর্থবছরে মোট ১ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করবে আইসিবি। এর মধ্যে মার্জিন ঋণ দেবে ৮০০ কোটি টাকা ও প্রকল্প ঋণ দেবে ৩৭৫ কোটি টাকা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিবি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুজিব উদ্দিন আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজারের টানা দরপতনে সবমহলে উদ্বিগ্ন। তাই নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক সবার সঙ্গে বসতে চেয়েছিলেন। সেজন্যই সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সবাই তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে পরামর্শ দিয়েছেন। সকলের মতামতের উপর ভিত্তি করে একটি ‘একশন প্ল্যান’ তৈরি করা হবে। সেই প্ল্যান অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।