দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের ১১টি ব্যাংক প্রয়োজনীয় ন্যূনতম মূলধন সংরক্ষণে (সিএআর) ব্যর্থ হয়েছে। সর্বশেষ গত জুন প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে প্রয়োজনীয় ন্যূনতম মূলধন ঘাটতির পরিমাণ হয়েছে ১৬ হাজার এক কোটি ৪৯ লাখ টাকা। সামগ্রিক মূলধন সংরক্ষণের হার দাঁড়িয়েছে ১১.৭৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সংরক্ষণ বিবেচনায় ব্যাংক খাতে মার্চের তুলনায় জুনে মূলধন পর্যাপ্ততার হার সামান্য বেড়েছে। মার্চ প্রান্তিকে সংরক্ষণের হার ছিল ১১.৪১ শতাংশ। তবে জুনে ঘাটতির পরিমাণ কমলেও ব্যাংকের সংখ্যা বেড়েছে। মার্চে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৮ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। আর ঘাটতি থাকা ব্যাংকের সংখ্যা ছিল ১০টি।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক নীতিমালার আলোকে ব্যাংকগুলোকে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি সে পরিমাণ মূলধন রাখতে হচ্ছে। কোনো ব্যাংক এ পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে মূলধন ঘাটতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক অর্থাৎ এপ্রিল-জুন সময়ে মূলধন ঘাটতি মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে ১১টি ব্যাংক। এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার এক কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি ও বিশেষায়িত খাতের সাতটি, বেসরকারি খাতের তিনটি ও বিদেশি একটি ব্যাংক রয়েছে। তবে এ সময়ে বেশ কিছু ব্যাংকের মূলধন উদ্বৃত্তি থাকায় সামগ্রিক ঘাটতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনিয়ম, দুর্নীতি আর নানা অব্যবস্থাপনায় ব্যাংক খাতে চলছে এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা। যাচাই-বাছাই না করে ভুয়া প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেওয়া হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে খেলাপি হয়ে পড়ছে। এসব ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। বাড়তি অর্থ জোগাতে হাত দিতে হচ্ছে মূলধনে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে সংকট।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রতিবছরই সরকারি ব্যাংকগুলোর ঘাটতি মেটাতে জনগণের করের টাকা থেকে ব্যাংকগুলোকে মূলধনের জোগান দেওয়া হয়। কিন্তু এবার সরকার থেকে বলা হচ্ছে, তাদের আর মূলধন দেওয়া হবে না। এটা ভালো উদ্যোগ। তবে এর জন্য বিকল্প পন্থা ব্যাংকগুলোকেই বের করতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ে জোর দিতে হবে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোতে সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি। কারণ সুশাসন ও জবাবহিদি থাকলে জালিয়াতি হবে না। তখন ঋণও খেলাপি হবে না।

এতে স্বাভাবিকভাবে কমে যাবে মূলধন ঘাটতি। চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ৪২৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ১১.৬৯ শতাংশ। এর আগের প্রান্তিকে অর্থাৎ মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল এক লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, যা ওই সময়ের বিতরণ করা ঋণের ১০.৮৭ শতাংশ। অন্যদিকে গত জুন শেষে ব্যাংকিং খাতে ১২টি ব্যাংক তাদের প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারেনি। এর মধ্যে আটটিই বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক রয়েছে।