দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দীর্ঘদিন ধামাচাপা থাকার পর ব্যাংকিং খাতের অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম) আমদানিতে বিপুল অংকের শুল্ক ফাঁকির ঘটনা তদন্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০১৬ সালে বিষয়টি তদন্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিল এনবিআরের শুল্ক গোয়েন্দ বিভাগ। কিন্তু রহস্যজনক কারণে মাঝপথে থেমে যায় সে তদন্ত প্রক্রিয়া।

এবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ৫০০ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকির ঐ ঘটনার তদন্ত সংক্রান্ত ফাইলটি পুনরায় সক্রিয় করেছে এনবিআর। ইতিমধ্যে সংস্থার পক্ষ থেকে এটিএম বুথ আমদানির তথ্য চেয়ে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের চিঠিতে ব্যাংকগুলোর কাছে এটিএম মেশিন আমদানি এবং কেনার তথ্য চাওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে এ সংক্রান্ত সকল তথ্য অধিদপ্তরের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত পরিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ কাউছার আলম পাটওয়ারী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, কাস্টমস থেকে ইতিমধ্যে আমরা এটিএম মেশিন আমদানির প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করেছি। এতে ঘোষিত এবং প্রকৃত মূল্যে ব্যাপক গরমিল দেখা গেছে।

ব্যাংক এবং অন্য সূত্র থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশে এখন ১০ হাজারের বেশি এটিএম মেশিন সচল রয়েছে। এর মধ্যে বেশি আমদানি করেছে টেকনোমিডিয়া লিঃ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। বাকিগুলো অন্য পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের আমদানি করা। এ বিষয়ে টেকনোমিডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক যশোদা জীবন দেবনাথের সঙ্গে টেলিফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

শুল্ক গোয়েন্দারা জানান, বাংলাদেশের কোনো কোনো ব্যবসায়ী কম্পিউটার যন্ত্রাংশের নাম দিয়ে অথবা মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এটিএম আমদানি করত। কম্পিউটার যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক না থাকায় এ পথ বেছে নেয় তারা। পরে এনবিআরের কড়াকড়ির কারণে ব্যবসায়ীরা এ পথ থেকে সরে আসে। এরপর ব্যবসায়ীরা মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এটিএম মেশিন আমদানি শুরু করে। সংশ্লিষ্টরা জানান, শুল্ক ফাঁকির ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় ঐ চক্রটি এখনো সক্রিয় রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত কয়েক বছরে এ খাতে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা ফাঁকি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কাস্টমসের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে এ কাজটি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। রপ্তানিকারকদের সঙ্গে যোগসাজশ করে তারা এখন মূল্য কম দেখিয়ে অথবা মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে এটিএম মেশিন আমদানি করছে। বাকি টাকা আমদানিকারকরা হুন্ডির মাধ্যমে রপ্তানিকারকদের কাছে পাঠাচ্ছে।

জানা যায়, চীনা একটি এটিএম মেশিনের (শুধু টাকা তোলা) ফ্যাক্টরি থেকে রপ্তানিমূল্য ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীরা এলসিতে ঐ পণ্যের দাম দেখাচ্ছে মাত্র ১ লাখ টাকা। দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে তা আবার বিক্রি করা হচ্ছে ৫ লাখ টাকার বেশি দামে।
অপরদিকে, একটি চীনা রিসাইক্লার এটিএম মেশিনের (টাকা তোলা এবং জমা দেওয়া) ফ্যাক্টরি থেকে রপ্তানিমূল্য ১০ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু

অসাধু ব্যবসায়ীরা তা মাত্র ২ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকায় আমদানি দেখাচ্ছে। দেশীয় ব্যাংকগুলো এসব মেশিন ন্যূনতম ২০ লাখ টাকায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনছে। এক্ষেত্রেও রপ্তানিকারকদের কাছে হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল অংকের বাকি অর্থ পাঠানো হচ্ছে।

উল্লেখ্য, এটিএম মেশিন আমদানিতে শুল্কের পরিমাণ ৩২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। শুধু শুল্ক ফাঁকি নয়, অনেক সময় তথ্য গোপন করেও এটিএম মেশিনের যন্ত্রপাতি আমদানি করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে যে পরিমাণ এটিএম আমদানির তথ্য রয়েছে বাজারে প্রকৃত এটিএমের সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি। শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ মনে করছে, চোরাচালানের মাধ্যমে তৃতীয় কোনো দেশ থেকে এসব মেশিন বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।