ক্যানসার চিকিৎসায় শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ডেল্টা হসপিটাল
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ক্যানসার চিকিৎসায় শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত ডেল্টা হসপিটাল বাংলাদেশে প্রাইভেট হসপিটালগুলোর মধ্যে ক্যান্সার রোগের চিকিৎসার জন্য ডেল্টা হসপিটাল লিমিটেড অন্যতম। ধানমন্ডি ডেল্টা মেডিকেল ইউনিটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয় ১৯৮৭। মিরপুর ইউনিটের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৪ সালে। ১৯৯৫ সালের ১৭ মার্চ এ ইউনিটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। সময়ের পরিক্রমায় বাংলাদেশে ক্যানসার চিকিৎসায় শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে ডেল্টা হসপিটাল।
চোখ, দাঁত, নাক, কান, গলা ও গাইনিসেবার পাশাপাশি সার্জারিও করে থাকে ডেল্টা হাসপাতাল। বাংলাদেশেও অনেকে ক্যানসারের কারণে মৃত্যুবরণ করছেন। ক্যানসার চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল। দীর্ঘমেয়াদি এ চিকিৎসায় ব্যবহার্য যন্ত্রপাতি অপ্রতুল।
এছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরও অভাব রয়েছে আমাদের দেশে। এরপর রয়েছে সাধারণ মানুষের অসচেতনতা। ফলে মৃত্যুহার বেড়েই চলেছে। তবু দেশের কিছু হাসপাতাল যুগোপযোগী ক্যানসার চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে। সাধারণ মানুষের সামর্থ্যরে মধ্যে বিশ্বমানের সেবা দিচ্ছে এমনই একটি প্রতিষ্ঠান ডেল্টা হাসপাতাল লিমিটেড।
বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে ক্যানসার নির্ণয় ও চিকিৎসায় অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান ডেল্টা হাসপাতাল লিমিটেড (ডিএইচএল)। রোগীকে রেডিয়েশন থেরাপির মতো অত্যাধুনিক চিকিৎসাসেবা দিয়ে আসছে এই হাসপাতাল। এখানের কনসালট্যান্ট, ক্যানসার বিশেষজ্ঞ, টেকনিশিয়ান, প্যাথলজিস্ট ও সার্জনসহ অন্য বিশেষজ্ঞরা রোগীদের জন্য যথাযথ সেবা নিশ্চিত করে থাকেন। সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় এ হাসপাতালে।
এখানের ক্যানসার বিশেষজ্ঞরা প্রায়ই আন্তর্জাতিক সভা, সেমিনার ও সম্মেলনে অংশ নিয়ে থাকেন। এর মধ্য দিয়ে ক্যানসার সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য পেয়ে যান তারা। ফলে রোগীদের সঠিক চিকিৎসা দিতে পারেন তারা। চিকিৎসা খাতের চার উদ্যোক্তা রাজধানীতে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা করেন।
আর্থিক কারণে সেই উদ্যোগ থেকে পিছিয়ে আসেন তারা। পরে একটি বিশেষায়িত ক্যানসার হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য রাজধানীর দুটি স্থান নির্ধারণ করা হয়। বর্তমানে এই দুটি স্থান থেকে সেবা দিচ্ছে ডেল্টা হাসপাতাল।
একটি ধানমন্ডিতে, অপরটি মিরপুরে। ধানমন্ডিতে রয়েছে হাসপাতালটির জেনারেল ইউনিট। মিরপুর ইউনিট থেকে বিশেষায়িত ক্যানসার চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। এ ইউনিটের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও জার্মান সোসাইটি অব রেডিয়েশন ফিজিসিস্টের যৌথ উদ্যোগে নিয়মিত রেডিয়েশনবিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। হাসপাতালের প্যাথলজি সেবা অতুলনীয়।
দিন ও রাতের যে কোনো সময় এ সুবিধা পেয়ে থাকেন রোগীরা। নিজস্ব জেনারেটর সুবিধা রয়েছে এখানে। হাসপাতালটির ল্যাবরেটরি সুবিধা বিশ্বমানের। ডেল্টা হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছেন ডা. সৈয়দ মোকাররম আলী। ডেল্টা হাসপাতালের সেবা ও মান আরও বৃদ্ধির চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি চেয়ারম্যান বলেন, সাধারণ মানুষের সামর্থ্যরে মধ্যে বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা আমাদের মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। রোগীদের চাহিদা মেটাতে ডেল্টা হাসপাতালের সম্প্রসারণ প্রয়োজন। এটা করতে পারলে আরও বেশি রোগীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. সৈয়দ মোকাররম আলী। তিনি বলেন, দেশসেরা প্যাথলজিগুলোর মধ্যে অন্যতম ডেল্টা হাসপাতাল। বিশেষ করে ক্যানসার চিকিৎসার জন্য শুধু দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই নয়, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি) ও আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজি (এএফআইপি) থেকেও এখানে রোগীদের পাঠানো হয়। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা খাতে আমরা রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি ও সার্জারিতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা প্রদানে অগ্রগামী।
এদিকে ডেল্টা হাসপাতাল লিমিটেড প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে বাজারে শেয়ার ছেড়ে ৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। বুকবিল্ডিং পদ্ধতিতে বাজারে আসবে এই কোম্পানি। এর অংশ হিসেবে কোম্পানিটি রোড শো নামের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে হাসপাতালটির বিভিন্ন দিক এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা তুলে ধরছেন।
সম্প্রতি রাজধানীর রিজেন্সি হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টে এই রোড শো অনুষ্ঠিত হয়। কোম্পানিটি ৫০ কোটি টাকা সংগ্রহের জন্য যতগুলো শেয়ার বিক্রি করা প্রয়োজন, ততগুলো শেয়ার ইস্যু করবে। পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করা অর্থের একটি বড় অংশ দিয়ে মেশিনারিজ আমদানি করবে কোম্পানিটি। এ বাবদ ব্যয় করা হবে ৩৮ কোটির বেশি টাকা। ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ৮ কোটির বেশি টাকা এবং ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে আইপিও খরচে।
যেসব মেশিন কেনা হবে তার মধ্যে রয়েছে, লাইন্যাক মেশিন, এমআরআই মেশিন, সিটি স্ক্যান, ডিজিটাল এক্স-রে, আল্টা স্নোগ্রাম মেশিন এবং এটি ইক্যুইপমেন্ট। আইপিওর টাকা হাতে পাওয়ার পর মেশিনগুলো আনতে কোম্পানির প্রায় ১ বছর সময় লাগবে। যা যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি ও জাপান থেকে আমদানি করা হবে। ডেল্টা হসপিটালের প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য ১০ টাকা।
কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ১০০ কোটি টাকা। আর পরিশোধিত মূলধন ৩৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। ৩০ জুন ২০১৯ সমাপ্ত আর্থিক বিবরণী অনুযায়ী কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতিসহ) দাঁড়িয়েছে ৪৫.৮৪ টাকায় এবং শেয়ারপ্রতি নিট সম্পত্তি মূল্য (পুনর্মূল্যায়ন সঞ্চিতি ব্যতিত) দাঁড়িয়েছে ১৬.৬২ টাকায়।
আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ২.১০ টাকা। কোম্পানির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড এবং রেজিস্টার টু দ্য ইস্যুর দায়িত্বে রয়েছে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট।
উল্লেখ্য, কোম্পানিটির কাট-অফ প্রাইস নির্ধারনের জন্য ইলেকট্রনিক বিডিংয়ে অংশগ্রহনে ইচ্ছুক প্রত্যেক যোগ্য বিনিয়োগকারীকে বিডিং শুরুর পূর্বের ৫ম কার্যদিবস শেষে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে কমপক্ষে ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ থাকতে হবে।
এছাড়া শেয়ারবাজার ও আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং বাজার চাঙ্গা করার লক্ষে ভালো কোম্পানির ইস্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি করার উপর জোর দিয়েছেন। তাদের মতে, দেশীয় ও বহুজাতিক ভালো কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে নিয়ে আসার জন্য সকলের সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া দরকার।
ভালো কোম্পানিগুলো ইস্যুর ন্যায্য মূল্যসহ অন্যান্য সুবিধা পেলে শেয়ারবাজারে আসতে আগ্রহী হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের বিশ্বাস ওয়ালটন ও ডেল্টা হাসপাতালের মতো ভালো ইস্যু বাজারের উন্নতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থার সংকট কেটে স্বস্তি ফিরে আসবে। সেই সঙ্গে বাজারও কিছুটা চাঙ্গা হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ এ হাফিজ বলেন, ডেল্টা হসপিটাল ক্যানসার চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম হসপিটাল। এ জাতীয় কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করে নিতে সক্ষম হবে।
ফলে বাজারও চাঙ্গা হবে তিনি আশাবাদী। যে কোনো স্টক এক্সচেঞ্জে ভালো শেয়ার থাকা দরকার। অন্যথায় সেই শেয়ার বাজার কখনই উন্নতি করতে পারে না। আমাদের স্টক মার্কেটে ভালো শেয়ারের সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকটি। তাই, ডেল্টা হসপিটালের মতো কোম্পানিগুলোর ইস্যু বাজারে আসা দরকার।