পুঁজিবাজার উন্নয়ণে বাজেটে সরকারের কাছে বিএসইসি’র একগুচ্ছ সুপারিশ
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: পুঁজিবাজার উন্নয়ণে সরকারের কাছে বিএসইসি’র একগুচ্ছ আবেদন করছেন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। মুলত পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে মূলধনি মুনাফায় করছাড়ের সুপারিশ করেছে বিএসইসি। এ ছাড়া জিরো কুপন বন্ডের মতো সব ধরনের বন্ড থেকে সব ধরনের বিনিয়োগকারীর আয় করমুক্ত রাখারও সুপারিশ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সম্প্রতি এমন প্রস্তাব দিয়েছে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।
গত সপ্তাহে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছে দেওয়া আসন্ন বাজেট প্রস্তাবে দেওয়া চিঠিতে এসইসি জানিয়েছে, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ ও সক্ষমতা অনেক কম। বর্তমানে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের সেকেন্ডারি বাজারে মূলধনি মুনাফা সম্পূর্ণ করমুক্ত।
দেশে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা ও বিনিয়োগ বাড়াতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদেরও সেকেন্ডারি মার্কেটে মূলধনি মুনাফার ওপর সম্পূর্ণ করমুক্ত সুবিধা দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে এসইসি। অথবা এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান করহার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার অনরোধ জানায় এসইসি। এতে পুঁজিবাজারের গভীরতা বৃদ্ধিসহ লেনদেনের পরিমাণ বাড়বে বলে মনে করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
স্থানীয় প্রাতিষ্ঠানিকদের মতো বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগকারীদেরও সেকেন্ডারি বাজারে মূলধনি মুনাফা থেকে অর্জিত আয়ের ওপর কমানোর অনুরোধ জানিয়েছে। অর্থমন্ত্রীর কাছে দেওয়া চিঠিতে এসইসি জানিয়েছে, বিগত সময়ে বিদেশিরা ক্রয়ের তুলনায় বেশি বিক্রি করায় পুঁজিবাজারে দরপতন হচ্ছে। এতে বিদেশিদের বিনিয়োগও কমে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন…….
সিএসইর করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা এক লাখ টাকা করার দাবি
এমতাবস্থায় পুঁজিবাজারে বিদেশি পোর্টফোলিও বিনিয়োগ বাড়াতে সেকেন্ডারি বাজার থেকে অ-নিবাসীদের অর্জিত আয়ের ওপর বিদ্যমান উৎসে কর কর্তনের হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আগের মতো ১০ শতাংশ গেইন ট্যাক্স করার অনুরোধ জানায় এসইসি। এ ছাড়া তালিকাভুক্ত কোম্পানির নগদ লভ্যাংশের ওপর যে উৎসে কর কর্তন করা হয়, তা চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছে এসইসি।
দুই বছর ধরে পুঁজিবাজারে একটি কার্যকর বন্ড মার্কেট গড়ে তোলার চেষ্টা করছে এসইসি। কিন্তু করসংক্রান্ত কিছু বাধার কারণে এখনো কার্যকর বন্ড মার্কেট হয়নি। বন্ড মার্কেট উন্নত হলে বিনিয়োগকারীরা যেমন ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজে সুবিধা পাবেন, তেমনি সরকারের উন্নয়নমূলক কাজেও তাদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে। পুঁজিবাজারের কাক্সিক্ষত উন্নয়নে ও দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংকনির্ভরতা কমাতে জিরো কুপন বন্ডের মতো করমুক্ত সুবিধা অন্য সব ধরনের বন্ডে সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে এসইসি। বর্তমানে ব্যাংক, বীমা ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব ধরনের করদাতাদের জিরো কুপন বন্ড থেকে উদ্ভূত আয় করমুক্ত।
আরও পড়ুন…….
পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ ইস্যুতে হার্ডলাইনে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি
ব্যাংকের ডিভিডেন্ড ৩ সেপ্টেম্বরের আগেই বিতরণ করা যাবে
ব্যাংক, বীমা ও অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যতীত কোনো কোম্পানি তার দীর্ঘমেয়াদি ঋণের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ যদি করপোরেট বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে সংগ্রহ করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির আয়করের হার বর্তমানের চেয়ে ৫ শতাংশ কম করার অনুরোধ জানিয়েছে এসইসি। এর ফলে কোম্পানিগুলো বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহে উৎসাহিত হবে এবং দীর্ঘমেয়াদে ব্যাংকনির্ভরতা কমবে। করপোরেট বন্ডের সুদের ওপর যে উৎসে কর কর্তন করা হয়, তা করপোরেট বন্ড থেকে সুদ হিসেবে প্রাপ্ত আয়ের চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচনারও অনুরোধ জানিয়েছে কমিশন।
উল্লিখিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও লেনদেনের পরিমাণ কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছে এসইসি। এতে করের হার কমলেও সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। একই সঙ্গে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগও আকর্ষিত হবে।