দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকে পুঁজি করে পুঁজিবাজারে একটি শ্রেনী বাজারকে অস্থির করে তুলছে। ফলে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে দেশের পুঁজিবাজারে ধসের ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে। আর এ কারসাজির সাথে যারা জড়িত তাদের শাস্তির দাবী জানিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।

বর্তমান পুঁজিবাজার  ভালো-মন্দ নির্বিশেষে পড়ছে শেয়ারের দর। সূচক এক বছর আগের কাছাকাছি নেমে এসেছে। এই টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ২০১০ সালের মহাধসের স্মৃতি যে ফিরেছে, সেটি পুঁজিবাজারকেন্দ্রিক নানা ফেসবুক পেজে ঢুঁ দিলেই বোঝা যায়।

পুঁজিবাজারের এই অবস্থান গত বছরের ২৯ জুলাইয়ের পর সর্বনিম্ন। সেদিন ডিএসইএক্সের অবস্থান ছিল ৬ হাজার ৪২৫ পয়েন্ট। তবে সে সময় বিনিয়োগকারীরা ছিল উৎফুল্ল। কারণ, তখন বাজারে ছিল চাঙাভাব আর প্রায় প্রতি দিনই সূচক আগের অবস্থানকে ছাড়িয়ে ২০১০ সালের মহাধসের পর সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছে যায়।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকেই পুঁজিবাজারে শুরু হয় দর সংশোধন। চলতি বছরের শুরুতে সংশোধন কাটিয়ে চাঙাভাবে ফেরার আভাস দেখা যায়। তবে সেটি স্থায়ী হয়নি। জানুয়ারির শেষেই আবার পড়তে থাকে বাজার।

এর মধ্যে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে নেগেটিভ ইক্যুইটির বিও হিসাব ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সমন্বয়ের আদেশের একটি গুজব ছড়ায়। তবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি জানায়, তারা এমন কোনো আদেশ দেয়নি। শেষে একটি আদেশ জারি হয়, তাতে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের কথা জানানো হয়।

এদিকে রেববারও পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। তবে সোমবার এতো বড় পতন প্রত্যাশা করেনি বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকে পুঁজি করে কারসাজিকারিরা সুবিধা নেয়ার আশায় এভাবে বাজারকে ফেলে দিয়েছে। এটা কোনো স্বাভাবিক পতন হতে পারে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অবশ্যই আজকের পতনের কারণ খুঁজতে হবে। একই সাথে এর সাথে জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান বিনিয়োগকারীরা।

সোমবার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৯৬ শতাংশ সিকিউরিটিজের দর কমেছে। তবে সেল প্রেসার থাকার কারণে শেয়ারবাজারে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। আর প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমে সাত মাস আগের অবস্থানে নেমে গেছে।

আজ ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৮২.১২ পয়েন্ট বা ২.৭৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৫৬.৫১ পয়েন্টে। ডিএসইতে আজকে পতনের মাধ্যমে এই সূচকটি সাত মাস ৮ দিন বা ১৫০ কার্যদিবস আগের অবস্থানে নেমে গেছে। এর আগে ২০২১ সালের ২৯ জুলাই সূচকটি আজকের চেয়ে নিচে অর্থাৎ ৬ হাজার ৪২৫ পয়েন্টে অবস্থান করছিল। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ৩৬.৬১ পয়েন্ট বা ২.৫৫ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৬৪.৫৪ পয়েন্ট বা ২.৬৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৩৯৪.৪০ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ৩৭৪.৩৯ পয়েন্টে।

ডিএসইতে আজ টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৭৪০ কোটি ২৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। যা আগের দিন থেকে ৯৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা বেশি। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৬৪৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকার। ডিএসইতে আজ ৩৭৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৭টির বা ১.৮৫ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ৩৬৪টির বা ৯৬.০৪ শতাংশের এবং ৮টি বা ২.১১ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ৪৪৭.৪৫ পয়েন্ট বা ২.৩০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৯৯৭.০৩ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৯৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ২০টির, কমেছে ২৫০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২৪টির দর। আজ সিএসইতে ২০ কোটি ৭১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

একাধিক বিনিয়োগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজার ২০১০ সালের দিকে যাচ্ছে। বিএসইসি চেয়ারম্যানের নানামুখী বক্তব্যে পুঁজিবাজার আরো অস্থির হচ্ছে। তিনি দেশের প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ঠিক না করে বিদেশে থেকে কিসের বিদেশী বিনিয়োগ আনার বক্তব্য দিচ্ছেন। গত ১ বছরে দেশের পুঁজিবাজারে কোন বিদেশী বিনিয়োগ আসেনি। এছাড়া পুঁজিবাজার টানা দরপতনে বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ, আমাদের বাঁচান। পুঁজি শেষ হয়ে যাচ্ছে।