নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হলে চমৎকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে: সিইসি
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, যদি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয় তাহলে চমৎকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সেই লক্ষ্যে আমাদের পুরো প্রস্তুতি রয়েছে। বুধবার নির্বাচন ভবনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে জানাতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেন সিইসি।
তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল ইভিএম নিয়ে কোনও অবিশ্বাস আছে কি-না তা জানতে চেয়েছিলন। তাদের বলেছি, ইভিএম নিয়ে যে অবিশ্বাস ছিল তা অনেকটা কেটে গেছে। তবে এটাও জানিয়েছি যে ইভিএম নিয়ে এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছি না। কারণ আদৌ ইভিএম এভেলেবল হবে কি-না। আমরা কী পরিমাণ নির্বাচন ইভিএমে করতে পারবো, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্তে নিতে পারিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশনের রাষ্ট্রদূতরা গত বছরের জুলাইতে আমাদের এখানে এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে তখন নির্বাচন নিয়ে মতবিনিময় হয়েছে। এখন যেহেতু আমাদের দশ মাস অতিবাহিত হয়েছে। আমরা নির্বাচন বর্ষে উপনীত হয়েছি। তাই তারা এটাও পিরিয়ডিক্যাল বলে থাকেন, উনারা পুনর্বার মতবিনিময় করতে এসেছেন। মূলত আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি কেমন তা জানতে এসেছিলেন।
সিইসি বলেন, আমরা তাদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চেয়েছি, নির্বাচনের কোন কোন বিষয় উনারা জানতে চান। আমাদের ইলেক্টোরাল রোল সম্পর্কে অবহিত করেছি। সংসদীয় আসনের সীমা পুনর্র্নিধারণ, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে আমাদের কোনও উদ্যোগ আছে কি-না, এই বিষয়গুলো তাদের জানিয়েছি। আমাদের বর্তমান অবস্থান পরিস্কার করেছি এবং জানিয়েছি আমরা প্রস্তুত আছি।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, রোডম্যাপ অনুযায়ী আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে এবং যথাসময়ে নির্বাচন করবো। আমরা এটাও উনাদের পরিষ্কার করে বলেছি। কিছু কিছু বিষয় নিয়ে এখনো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপাথর্ক্য রয়েছে। এই মতপার্থক্য থাকার কারণে এখনো নির্বাচনী পরিবেশটা সহানুভূতিসম্পন্ন (কনজেনিয়াল) নয়।
সিইসি বলেন, আমরা আশাকরি অচিরেই এ মতপার্থক্য দূর হয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত সবদল নির্বাচনে আসবে সে বিষয়ে আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছি। তবে সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত করে…। আমরা বলেছি, যদি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয় তাহলে চমৎকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সেই লক্ষ্যে আমাদের পুরো প্রস্তুতি রয়েছে।
পলিটিক্যাল ডায়লগের বিষয়ে কোনও কথা হয়েছে কি-না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে একাধিকবার বলেছি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার প্রয়োজন। ব্যাপক অর্থে তাদের মধ্যে সমঝোতা প্রয়োজন, যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে সম্পন্ন হয়। প্রথম থেকেই আমরা এই আবেদন করে আসছি, এখনো করে যাচ্ছি। মতপার্থক্যগুলো রাজনৈতিক ইস্যু, আমাদের জন্য ইস্যু নয়।
কাজেই রাজনৈতিক ইস্যুগুলো, যেগুলো নির্বাচনের জন্য অন্তরায় হতে পারে, সেগুলোর সুরাহা রাজনৈতিক নেতাদের করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলো সেটা অনুধাবন করতে হবে এবং বুঝতে হবে। তাদেরই সেই অসুখ নিরাময় করতে হবে। তাহলেই নির্বাচন প্রত্যাশিত মাত্রায় অংশগ্রহণমূলক হবে। সুন্দর, সুষ্ঠু হবে এবং গণতান্ত্রিক চেতনায় যে নির্বাচন প্রত্যাশিত সে নির্বাচনটা ওভাবেই অনুষ্ঠিত হবে।
কোনও সুপারিশ তাদের পক্ষ থেকে আাছে কি না, এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণে কী ধরনের সহযোগিতা দিতে পারবো- এটা জানতে চেয়েছিলেন। আমরা বলেছি যে গণমাধ্যম আমাদের নির্বাচন কাভার করে থাকে, পর্যবেক্ষকরাও করে থাকে। অতীতেও যেভাবে করেছে, কিন্তু এবার আমরা যেটা করবো আমাদের পক্ষ থেকে ফুললি ওপেন হবো। আমাদের পক্ষ থেকে কোনো অন্তরায় থাকবে না।
ফরেন অবজারভার সম্পর্কে আমাদের একটা পলিসি আছে। তারা আমাদের কাছে আবেদন করবেন। আমরা সেটা পাঠিয়ে দেবো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। কারণ বিষয়টি দ্বিপাক্ষিকভাবে সুরাহা হতে হবে। কিন্তু এতটুকু আমরা বলেছি, আমাদের পক্ষ থেকে কোনো অন্তরায় থাকবে না।
‘জেনেছি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি বিদেশি পর্যবেক্ষকে এলাউ করবেন। কারণ একটা ব্রিটিশ এমপি ডেলিগেশন উনার সঙ্গে মিট করেছিল। তখন প্রধানমন্ত্রী সে আশ্বাস দিয়েছিলেন। উনারাও এতে আনন্দিত, আমরাও এতে আনন্দিত। বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও যদি এসে আমাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে, গ্লোবালিও দেখবে আমাদের দেশের নির্বাচন সুন্দর, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেলিগেশন চার্লস হোয়াইটলির নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সিইসির সঙ্গে তিন নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।