দেশ প্রতিক্ষণ, কক্সবাজার: দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন আন্দামান সাগর এলাকায় সৃষ্ট লঘুচাপটি গভীর নিম্নচাপ থেকে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’য় পরিণত হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, আগামী রোববার নাগাদ দেশের কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম করতে পারে ঘূর্ণিঝড় মোখা। এ সময় টেকনাফ উপকূল ও প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনসহ আশপাশের উপকূলীয় এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোখা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে কক্সবাজার।

আসন্ন বিপদ এড়াতে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ছেড়ে নিরাপদে টেকনাফে চলে যাচ্ছেন অনেকে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার সহস্রাধিক বাসিন্দা টেকনাফে এসেছেন বলে জানিয়েছেন ট্যুারিস্ট পুলিশ সেন্টমার্টিন জোনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতের তীব্রতা বেশি হওয়ার আশঙ্কায় সেন্টমার্টিন সৈকতের কাছে বসবাসকারীরা নিরাপত্তার জন্য টেকনাফ চলে যাচ্ছেন। তবে সাগর এখনো শান্ত রয়েছে।

অন্যদিকে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সরকারি কর্মকর্তাদের নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, স্বেচ্ছাসেবক ও মেডিকেল টিম গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ ছাড়া ১২ মের মধ্যে চাষিরা যাতে মাঠ থেকে পাকা ধান ঘরে তোলেন এবং লবণ যথাযথ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করেন, সে বিষয়ে কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিসিক, কক্সবাজারকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, মোখা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। জেলার ৫৭৬টি সাইক্লোন শেল্টার ধুয়েমুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। যেখানে ৫ লাখ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে। এ ছাড়া জেলার জন্য আপাতত ২০ লাখ নগদ টাকা, ১৫০ টন চাল, ৩ টন বিস্কুট, ৩ টন ড্রাই কেক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এগুলো ক্রমানুসারে প্রতিটি উপজেলায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বিশুদ্ধ খাবার পানি ও পানি বিশুদ্ধকরণ ওষুধও সরবরাহ করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজনে কক্সবাজারের উঁচু উঁচু ভবন (বিশেষ করে হোটেল-মোটেল) আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে গ্রহণ করা হবে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জেলার প্রতিটি উপজেলায় ৫ টন চাল, আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে এমন চারটি উপকূলীয় উপজেলা কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও টেকনাফে দেড় লাখ নগদ টাকা পাঠানো হয়েছে। তা ছাড়া জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য ৪৯০ টন চাল, নগদ ১০ লাখ ৩০ হাজার টাকা, ১৯৪ বান্ডিল ঢেউটিন মজুদ রয়েছে। এ ছাড়া ৫ লাখ টাকা এবং ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ চেয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কক্সবাজারজুড়ে মোখার কোনো প্রভাব না পড়লেও মুঠোফোনে খবর পেয়ে কিংবা রেডিওতে খবর শুনে মাছ ধরার ট্রলারগুলো উপকূলে ফিরতে শুরু করেছে। কক্সবাজারে অবস্থান করা পর্যটক পরিবার-পরিজন নিয়ে সকাল-বিকেল-সন্ধ্যায় সমুদ্র উপভোগ করছেন। তবে সম্ভাব্য দুর্যোগ বিবেচনায় সৈকতে আসা পর্যটকদের গোসলে নিরুৎসাহিত করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, আবহাওয়ার বুলেটিনে ঘূর্ণিঝড়ের বার্তা এলেও দ্বীপে এখনো বৈরী আবহাওয়া শুরু হয়নি। এরপরও প্রশাসনের নির্দেশনায় আমরা প্রস্তুতিমূলক সভা করেছি। দুর্যোগ শুরু হলে জানমাল রক্ষায় কারা কোথায় অবস্থান করব, তা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেভাবে প্রস্তুত করা হচ্ছে উঁচু ভবনগুলো।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল হলে ঢেউ বড় হয়ে যায়। এ অবস্থায় সাগরে গোসল করা নিরাপদ নয়। এমন পরিস্থিতি হলে পর্যটকদের সাগরে গোসল করতে অনুৎসাহিত করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, দুর্যোগ শুরু হলে উপকূলীয় এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে আনার পূর্বপ্রস্তুতিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক টিম, রেড ক্রিসেন্ট, স্কাউট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে।