দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: গাজীপুরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দ্বিধাবিভক্ত রাজনীতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুই দফায় দলটির মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খানকে ভোটে পরাজিত করে তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ত্যাগী, দক্ষ, মেধাবী ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তি সম্পন্ন আজমত উল্লাকে বরং আরও ওপরে রাখতে চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি টের পেয়েছেন মেয়র প্রার্থী আজমত হারেননি, তাকে গাজীপুরের দলীয় রাজনীতির মারপ্যাঁচে হারানো হয়েছে।

গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লাকে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ডেকে পাঠান। আজমতের সঙ্গে আলোচনায় গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন চক্রান্তের বিষয় শেখ হাসিনা জানেন এবং জানান। গণভবনে পরাজিত প্রার্থী আজমতকে বলেন, পরাজয়ের কারণ আমরাই। বিএনপি-জামায়াত তাদের প্রার্থী দেয়নি গাজীপুরের সিটি ভোটে। তারা নৌকা হারাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে জাহাঙ্গীর আলম। এর সঙ্গে দলেরও কেউ কেউ রসদ জুগিয়েছে। এতে আজমতের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে এমনটা নয়।

গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি সূত্র জানায়, আজমত উল্লা খানকে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। ওই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আকবর হোসেন পাঠান (নায়ক ফারুক) ১৫ মে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়ায় আসনটি শূন্য হয়। এই আসনে আজমত উল্লাকে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।

বিষয়টি নিয়ে ঘনিষ্ঠ অনেকের কাছে জানতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভিন্ন কোনো জটিলতার সৃষ্টি না হলে আসছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের যেকোনো আসন থেকে মনোনয়ন পাবেন আজমত উল্লা খান। সে ক্ষেত্রে গাজীপুর সিটির ভোটে যে সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করার তথ্য মিলবে, তাকেই বাদ দেওয়া হবে। এই সিটির ভোটে হারের কারণ জানতে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব একটি সংস্থাকে নির্ভুল তথ্য দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

গণভবনের গুরুত্বপূর্ণ সূত্রটি বলছে, নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রীর দায়িত্বও পেতে পারেন আজমত উল্লা খান। প্রধানমন্ত্রী যার ওপর ক্ষুব্ধ হন তাকে যেমন শাস্তি দেন, আবার যার ওপর সন্তুষ্ট ও যিনি ধৈর্য ধারণ করেন তাকে একই সঙ্গে সব দেন। গত ১৫ বছরে বহুজন এর উদাহরণ। গাজীপুরে মেয়র পদে আজমতকে হারা বা হারানোয়, প্রধানমন্ত্রী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি ভোটকে ঘিরে সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত নেতা জাহাঙ্গীর আলম যে নাটকীয় আচরণ করেছেন তাতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। গাজীপুর আওয়ামী লীগের রাজনীতি আজমতকে নিয়ে যে খেলায় মেতেছে, সেই আজমতকে আরও ওপরে নিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রয়াত সংসদ সদস্য নায়ক ফারুক গাজীপুরের কালীগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন। আজমতও কালীগঞ্জের পাশের টঙ্গীর। তা ছাড়া ঢাকা লাগোয়া জেলার বাসিন্দা। গাজীপুরের অনেক মানুষের বসবাস ঢাকা-১৭ আসনে।

এসব সমীকরণ মিলিয়ে আজমত প্রাধান্য পেতে যাচ্ছেন এই আসনের উপনির্বাচনে। আজমতের বিভিন্ন ঘনিষ্ঠজনেরা এসব তথ্য দিলেও আজমত উল্লা খান বলেন, এসব ব্যাপারে তার কোনো কিছুই জানা নেই। চিন্তাও করেন না তিনি। সূত্র: দেশ রুপান্তর