গুজব আর আতঙ্ক ভর করে পুঁজিবাজারে ফের সূচকের বড় দরপতন
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দিনভর অস্থিরতার মধ্য দিয়ে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচকের বড় দরপতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন বীমা, খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ ও প্রকৌশল খাতের শেয়ারের দরপতনে সূচকের বড় দরপতন হয়েছে। মুলত মার্কিন ভিসা নীতির আতঙ্কে অস্থির হয়ে পড়ছে পুঁজিবাজার। সেই সাথে পুঁজিবাজারে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক কমেছে ১৯ পয়েন্ট। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সূচক কমেছে ২৭ পয়েন্ট।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা-নীতি প্রয়োগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নানা ধরনের গুজব ও অপপ্রচার চলছে। গত কয়েক দিনের ন্যায় সপ্তাহের শুরুতে ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এই ভিসা-নীতি। এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। এছাড়া বাজারে ৬০ শতাংশ তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার ফ্লোরপ্রাইসে আটকে আছে। এসব কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হচ্ছে না বললেই চলে। ফলে বাজারে যখন কোনো বিষয় নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তখন বাজারে বড় ধরনের পতন হয়।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের ওপর আরোপিত যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির ইস্যুতে দরপতন হয়েছে। মূলত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নতুন করে আরও ভয়ানক ভিসা নীতি দিতে যাচ্ছে মার্কিন সরকার। এই ভয় ও আতঙ্কে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে বাজার থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। ফলে দরপতন হয়েছে।
প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ভিসা-নীতি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা কাজ করেছে। এছাড়া পুঁজিবাজার ইস্যুতে নানা গুজবে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা অস্থির হয়ে পড়ছে। আশা কুরি শিগরিই এসব গুজব আতঙ্ক কেটে যাবে। তবে বিনিয়োগকারীদের তিনি কোনো ধরনের গুজবের পেছনে না ছোটার পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচারের কারণে পুঁজিবাজারে বড় ধরনের পতন হয়েছে। এর সঙ্গে বিভিন্ন কোম্পানির কোয়ার্টার এন্ডিং-এর একটা চাপ আছে। তিনি বিনিয়োগকারীদের জেনে-বুঝে শেয়ার ক্রয়ের পরামর্শ দেন।
ডিএসইয়ের দেওয়া তথ্য মতে, রোববার বাজারে লেনদেন হওয়া ৩০২টি কোম্পানির মধ্যে দাম বেড়েছে ৭০টির, কমেছে ৭৮টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫৪টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। এতে ডিএসইএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে দশমিক ৮৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৮৪ পয়েন্টে। ডিএসইয়ের অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএস শরীয়াহ সূচক ১৯ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২৬৪ পয়েন্টে। ডিএস-৩০ সূচক ৪ দশমিক ৬৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৩৫ পয়েন্টে। আর ডিএসই সূচক ২ দশমিক ২২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২৫৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইতে আজ ৫৩১ কোটি ৯৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১০৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বেশি। আগের কার্যদিবস লেনদেন হয়েছিল ৪২২ কোটি ৩০ লাখ টাকা। আজ প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৯.৭৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ২৬৪.৯০ পয়েন্টে।
ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ২.২২ পয়েন্ট এবং ডিএসই-৩০ সূচক ৪.৬৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে একহাজার ৩৫৭.৩৭ পয়েন্টে এবং দুইহাজার ১৩৫.৬৯ পয়েন্টে। আজ সিএসইতে ১৪৯টি প্রতিষ্ঠানে লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ২৭টির, কমেছে ৭০টির আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৫২টি প্রতিষ্ঠানের। এদিন সিএসইতে ১২ কোটি ১০ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে।