তিন ইস্যুতে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বেড়েছে ৩ হাজার কোটি

দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দুই বছর আগে গঠিত হওয়া পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য ব্যাংকগুলোর বিশেষ তহবিলের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ছে। এখন পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। কিন্তু তহবিল গঠন করলেও বিনিয়োগে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করছে প্রতিষ্ঠানগুলো। তাছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার বেঁধে দেওয়া ফ্লোর প্রাইসের (শেয়ারের সর্বনিম্ন দর) কারণে এমনিতেই লেনদেন অনেক কমে গেছে দেশের পুঁজিবাজারে।
এ অবস্থার মধ্যেই অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের অবনতি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহার বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলো পুঁজিবাজারে চাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে অনিশ্চয়তার কারণে নতুন বিনিয়োগও আসছে না। সব মিলিয়ে কঠিন সময় পার করছে পুঁজিবাজার।
তবে এর মধ্যেও দরপতন ও ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা পুঁজিবাজারেও গত ৮ মাসে ব্যাংকগুলো নতুন করে তিন হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজারে ৩৫টি সরকারি ব্যাংক তালিকাভুক্ত রয়েছে। এই ব্যাংকগুলো নিয়ম অনুসারে আরও ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, পুঁজিবাজারে বর্তমানে তালিকাভুক্ত ৩৫টি ব্যাংক। এই ব্যাংকগুলোর ক্যাপিটাল বা মূলধন হচ্ছে ৮৩ হাজার ৪১৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এই মূলধনের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ নিয়ম অনুসারে ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবে। যা টাকার অংকে ২০ হাজার ৮৫৩ কোটি ৯৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকগুলো চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে ১৫ হাজার ৫৩৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ এখনো ব্যাংকগুলো ৫ হাজার ৩১৯ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে।
সূত্র মতে, চলতি বছরের শুরুতে অর্থাৎ ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ছিল ১২ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। আট মাস পর গত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত নতুন করে ৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ বেড়েছে। তাতে বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। নিয়ম অনুসারে এখনো আরও ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারবে ব্যাংকগুলো।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিন কারণে টালমাটাল পুঁজিবাজারেও ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করেছে। প্রথমত, ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজার থেকে বন্ডের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে মূলধন বাড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার একটি নির্দেশনা ছিল যে, যেসব ব্যাংক পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে তাদের বন্ড অনুমোদন দেওয়া হবে। ফলে বন্ডের অনুমোদনের জন্য বেশ কিছু ব্যাংক বাধ্য হয়েই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছে। আর ব্যাংকগুলোর বন্ডের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে ব্যাংকের মূলধনকে আরও শক্তিশালী করেছে।
দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক মন্দার এই সময়ে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশ কিছু কোম্পানি ভালো লভ্যাংশ দিয়েছে। সেই মুনাফার আশায় ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করেছে।
তৃতীয় কারণ হলো: ফ্লোর প্রাইসের এই বাজারেও কারসাজি চক্রের সঙ্গে মিলে বিমা কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করেছে কয়েকটি ব্যাংক। এসব শেয়ারের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ পাশাপাশি ওষুধ ও বস্ত্র খাতের ছোট মূলধনী ও দুর্বল কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে। এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করে ব্যাপক ক্যাপিটাল গেইন করেছে ব্যাংকগুলো। এ কারণে তারা বিনিয়োগ করেছে।
অপরদিকে বিপরীত চিত্র দেখা গেছে বেশ কিছু ব্যাংকে। ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, অর্থনৈতিক সংকট ও ফ্লোর প্রাইসের কারণে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে বেশ কঠিন সময় পার করেছে ব্যাংকগুলো। তার কারণ বেশির ভাগ ব্যাংক তালিকাভুক্ত ব্যাংকের শেয়ারে অনেক বিনিয়োগ করেছে পাশাপাশি ভালো মৌল ভিত্তি কোম্পানিতেও বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় ধরে বাজারে এসব ব্যাংকের শেয়ারের দাম বাড়েনি বরং তলানিতে রয়েছে। তার ওপর আবার পুঁজিবাজারে আরোপ রয়েছে ফ্লোর প্রাইস। ফলে শেয়ার বিক্রি করে অন্য শেয়ারে বিনিয়োগ করবে সেটাও করতে পারেনি। তারা বলছেন বাজার ভালো হলে ব্যাংকগুলোর মুনাফাও বাড়বে। পাশাপাশি বিনিয়োগের সুযোগ বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সক্ষমতার দিক দিয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময়ে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের শীর্ষে রয়েছে: এনআরবি কর্মাশিয়াল ব্যাংক লিমিটেড। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক। তৃতীয় স্থানে রয়েছে মিডল্যান্ড ব্যাংক লিমিটেড। এরপর ছিল- ন্যাশনাল ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, দ্যা প্রিমিয়ার ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এবং এবি ব্যাংক লিমিটেড।
অপরদিকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত পুঁজিবাজারে সব চেয়ে কম বিনিয়োগ করেছে আইসিবি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড। এরপর ছিল ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী বাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক,ব্র্যাক, সিটি, এক্সিম ব্যাংক,রূপালী এবং ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড।