ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আট লেনে উন্নীত করার লক্ষ্যে সমীক্ষা শুরু হবে মার্চে
মোহাম্মদ সিরাজুল মনির, দেশ প্রতিক্ষণ, চট্টগ্রাম: আট লেনে উন্নীত হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। এ লক্ষ্যে আগামী মার্চ মাসে সমীক্ষা শুরু হবে। ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেট পর্যন্ত ২৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মহাসড়কটি আট লেন করতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি মহাসড়কের উভয় পাশে সার্ভিস লেনও নির্মাণ করা হবে। সূত্র জানায়, দেশের লাইফলাইন হিসেবে খ্যাত এ মহাসড়কে গাড়ির চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান অবস্থায় ধারণক্ষমতার বেশি যানবাহন চলাচল করছে এ মহাসড়ক দিয়ে। এতে যানজটসহ নানামুখী সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় আট লেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
জানা গেছে, এর আগে ২০১৩ সালে এক্সপ্রেসওয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। কিন্তু নানা কারণে গত বছর প্রকল্পটি বাতিল করা হয়। এর পরই আট লেনে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৩ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে ঋণ চাওয়া হচ্ছে ৫০ হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা সরকার জোগান দেবে। ২০২৪ সালে শুরু হয়ে ২০২৯ সালে সড়ক প্রশস্তের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ)।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি আট লেনে উন্নীত করা হবে। তবে পুরো সড়ক আট লেন হবে না। এটি কোথাও ছয় লেন, কোথাও আট লেন হবে। এটি নির্ধারিত হবে যানবাহনের চাপের ওপর ভিত্তি করে। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসে চূড়ান্ত নকশা করা হবে। এতে ৭৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে।
সূত্র জানায়, আলাদা তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশস্ত করা হবে মহাসড়কটি। একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে বৃহত্তর ঢাকা অংশের তিনটি জেলায় (ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ)। এ অংশে সড়কের দৈর্ঘ্য ৩৮ কিলোমিটার, যা বাস্তবায়নে খরচ হবে ৮ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা।
আরেকটি প্রকল্প হবে বৃহত্তর কুমিল্লা অংশের দুটি জেলায় (কুমিল্লা ও ফেনী)। এ অংশে সড়কের দৈর্ঘ্য ১২৫ কিলোমিটার। এটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৪৫ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা। তৃতীয় অংশ হিসেবে বাস্তবায়িত হবে ফেনী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত। এতে খরচ হবে ১৮ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। এই অংশের দৈর্ঘ্য ৬৯ কিলোমিটার।
সূত্র জানায়, নতুন প্রকল্পের আওতায় নারায়ণগঞ্জের মদনপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রামের বারইয়ারহাট থেকে সিটি গেট পর্যন্ত যেসব স্থানে যানজট তৈরি হতে পারে, সেসব স্থানে ওভারপাস করে দেওয়া হবে। যেসব স্থানে সড়ক বাঁকা, সেগুলো সোজা করা হবে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত ২৩২ কিলোমিটার মহাসড়কটি আট লেনে উন্নীত করতে খরচ হবে ৭৩ হাজার কোটি টাকার বেশি।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, প্রকল্পের পুরো টাকা সরকারি কোষাগার থেকে জোগান দেওয়া সম্ভব নয়। তাই উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হবে। কিন্তু একসঙ্গে পুরো প্রকল্পের জন্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলো ঋণ দিতে রাজি হবে না। তাই প্রকল্পের জটিলতা এড়াতে আলাদা তিনটি প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের শিল্প মালিক ও ব্যবসায়ীদের ধারণা গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে আট লেনে হবে না। চট্টগ্রাম থেকে রামগড় পর্যন্ত এই সড়কে ১০ হাজার গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করা দরকার। একই সঙ্গে রামগড় স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য ব্যবহার করে সুনামগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার ৩ ঘণ্টায় যাতায়াত করা যাবে। এটি বাস্তবায়ন করতে পারলে আমাদের সময় ও অর্থ খরচ দুটোই কম হবে।
এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিস এর সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রামের সাথে সারা দেশের ব্যবসার প্রসার ঘটাতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি আট লেনে উন্নীত করার দাবি জানিয়ে আসছি। আট লেনে উন্নীত হলে যানজট কমবে এবং খরচও কমবে।