এস আলমের সুগার মিলে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ৭ সদস্যের কমিটি গঠন
মোঃ সিরাজুল মনির, দেশ প্রতিক্ষণ, চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার ইছাপুর এলাকায় এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলের গোডাউনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এস আলম সুগার মিলের আগুন এখনো দাউদাউ করে জ্বলছে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর এস আলম সুগার মিলে লাগা আগুন এখনো নির্বাপণ হয়নি। প্রায় ২৮ ঘণ্টা ধরে চেষ্টা চালাচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট। গত সোমবার বিকেল সাড়ে তিনটায় লাগা আগুন রাত সাড়ে ১০টায় একবার নির্বাপণ করা গেলেও গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে ফের দাউদাউ করে জ্বলতে শুরু করেছে।
এস আলম সুপার রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান কর্ণফুলি নদীর পাড়ের ইছানগর এলাকায়। বিকেল ৪টার দিকে কারখানার একটি গুদামে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুন লাগার সময় কারখানাটি চালু ছিল। সেখানে প্রায় সাড়ে ৫০০ শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন। আগুন লাগার পর কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
স্থানীয়রা প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, আগুনের কারণে এসব চিনি গলে লাভায় পরিণত হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য মারা পানিতে সেই চিনি মিশ্রিত হয়ে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, যা পানি আকারে সড়কের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। মূলত গতকাল বলা হচ্ছিল আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। কিন্তু না, আসেনি। প্রশ্ন হচ্ছে, এখন পর্যন্ত আগুন একটি দেওয়াল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রয়েছে। কিন্তু এর বেশিক্ষণ যদি এই আগুন জ্বলতে থাকে তখন তো ওই দেওয়াল ভেঙে ভয়ংকর রূপ নেবে। আশপাশে আগুন ছড়ালে বড় বিপদ হয়ে যাবে।
৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি : আগুন লাগার ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সার্বিক ও ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার আনোয়ার পাশা।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি) শাকিলা ফারজানা বলেন, ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আনোয়ার পাশা ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে। তিনি আরও বলেন, ঘটনার পর থেকেই ফায়ার সার্ভিস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার। পর্যায়ক্রমে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ির সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, রমজানকে সামনে রেখে এ গোডাউনে চার লাখ টন অপরিশোধিত চিনি ব্রাজিল থেকে আমদানি করা হয়েছিল। এর মধ্যে, মজুদ করা এক লাখ টন অপরিশোধিত চিনি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, আগুন লাগার সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ১০টায় প্রায় নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে মঙ্গলবার সকাল এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত পুরোপুরি নির্বাপণ হয়নি। এসময় মিলের ভিতরে টুকরো টুকরো আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। আগুন লাগার ঘটনায় গোডাউনে থাকা ব্রাজিল থেকে আমদানি করা ১ লাখ মেট্রিক টন অপরিশোধিত চিনি (র সুগার) পুড়ে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গত ৪ই মার্চ সোমবার বিকেল ৩টা ৫৩ মিনিটে এস আলম গ্রুপের এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলের ১ নম্বর গুদামে এ আগুন লাগে। কর্ণফুলী উপজেলার মইজ্জারটেক সংলগ্ন ইছাপুর এলাকায় ১১ মেগাওয়াটের এস আলম পাওয়ার প্লান্টের পাশেই এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলটি অবস্থিত। পাওয়ার প্ল্যান্টের বিদ্যুৎ দিয়েই চিনি কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম চলে। সূত্র জানায়, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা ও থাইল্যান্ড থেকে চিনির কাঁচামাল এনে পরিশোধন করা হয় দুইটি প্লান্টে। এর মধ্যে প্লান্ট ১ এর উৎপাদন ক্ষমতা দৈনিক ৯০০ টন, প্লান্ট ২ এর উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৬০০ টন। থাইল্যান্ড ও ফ্রান্সের প্রযুক্তি ও কারিগরি সহায়তায় এ কারখানাটি পরিচালিত হচ্ছে।
বিকালে ৪টায় আগুন লাগার খবর পাওয়ার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন স্টেশনের ১৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিভানোর চেষ্টা করে। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগ দেয় নৌবাহিনীর ১২ সদস্যের ২টি টিম, বিমানবাহিনী, কোস্টগার্ড, র্যাব, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য। আগুন লাগার পর ভেতর থেকে কুণ্ডলি পাকিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। রাত সাড়ে ১০টায় গুদামের বাইরের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও গুদামের ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল।
আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ হারুন পাশা বলেন, গোডাউন ভর্তি র সুগার ছিল। পাঁচতলা ভবনের মতো উঁচু গোডাউনটির আগুন প্রায় নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আগুনে কোনো হতাহত নেই দাবি করে তিনি বলেন, আশেপাশের স্থাপনাগুলোতে আগুন ছড়ানো ঠেকানো গেছে।
এস আলম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সুব্রত কুমার ভৌমিক বলেন, মিল চালু থাকা অবস্থায় আগুন চারদিকে ছড়িয়ে যায়। ভেতরে কেউ আটকা পড়েছে কি না বা কোথা থেকে আগুনের সূত্রপাত এর কিছুই জানতে পারিনি। আগুন নির্বাপণে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করার চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, গোডাউনে থাকা ব্রাজিল থেকে আমদানি করা ১ লাখ মেট্রিক টন চিনির কাঁচামাল ছিল, যা পুড়ে গেছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কর্ণফুলী মডার্ন ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর শোয়াইব হোসেন মুন্সি বলেন, আলম নামে একজন বেল অপারেটর আহত হয়েছেন। আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে এখনো জানা যায়নি। তদন্ত রিপোর্টের পর বিস্তারিত জানা যাবে।
এস আলম গ্রুপের কর্মকর্তারা জানান, ওই চিনিকলে আমদানি করা কাঁচা চিনি পরিশোধন করা হয়। সেখানকার একটি গুদামে এই এক লাখ মেট্রিকটন অপরিশোধিত চিনি ছিল। সেগুলো সবই পুড়ে গেছে। আসন্ন রোজার জন্য এসব চিনি আমদানি করা হয়েছিল। বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা।