বিএসইসি চেয়ারম্যানের আশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন, ১০ হাজারে যাবে সূচক এখন ৫ হাজারের দিকে
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক, প্রবাসী আয় যখন উর্ধ্বমূখী তখন পুঁজিবাজারের টানা সূচকের দরপতনে আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা। টানা সূচকের দরপতনে পুঁজি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে বিনিয়োগকারীরা। অথচ পুঁজিবাজারে টানা দরপতন হলেও মুখ খুলছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা। প্রশ্ন উঠছে এর আগে নিয়ন্ত্রক সংস্থা পুঁজিবাজার নিয়ে সকাল বিকাল বিভিন্ন বেফিং করলেও এখন আর পুঁজিবাজার নিয়ে তার মাথা ব্যথা নেই।
প্রশ্ন উঠছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার আশ্বাসে বিনিয়োগ করে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী আজ নি:স্ব। তবে এক শ্রেনীর রাজনৈতিক ব্যাক্তিরা যেমন মিথ্যার কথামালা সাজিয়ে আমজনতাকে বোকা বানিয়ে থাকেন, ঠিব সেই রকম বিএসইসি চেয়ারম্যানের আশ্বাস ছিল বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
অথচ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দায়িত্ব নেওয়ার পরে বর্তমান কমিশন দেশের পুঁজিবাজার নিয়ে অনেক আশার বাণী শুনিয়েছিল। যেখানে সূচক ১০ হাজারে যাবে এবং লেনদেন ছাড়াবে ৫ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু দেশের পুঁজিবাজার এখন ৫ হাজার সূচকের পথে ধাবিত। আর লেনদেন ৫০০ কোটির কাছে।
অথচ ২০২২ সালের ২২ মে একাত্তর টিভিকে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছিলেন, আগামি ২ বছরের মধ্যে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১০ হাজার পয়েন্টে যাবে। এছাড়া তার কমিশন বিভিন্ন সময় ডিএসইর লেনদেন ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়াবে বলে আশার বাণী শুনিয়েছে। সেই ২ বছর শেষের পথে।
কিন্তু পুঁজিবাজার উল্টোপথে। ভুল প্রমাণিত হয়েছে কমিশনের আশার বাণী। দেখিয়েছেন ব্যর্থতার পরিচয়। বরং সূচক তাদের প্রত্যাশার অর্ধেকের পথে ধাবিত। গত কয়েকদিন ধরে শেয়ারবাজারে মূল্যসূচক টানা ও ভয়াবহ পতনে রয়েছে। এরমধ্যে বুধবার সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে ৫৫ পয়েন্টের সূচকের দরপতন হয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে ২০১০ সালের মত দরপতন হচ্ছে। কারণ গত তিন মাস ধরে টানা দরপতন হচ্ছে। এমন দরপতনে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক গত ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমেছে।
মুলত পুঁজিবাজার অস্থিতিশীলতার পেছনে বিএসইসির ঘন ঘন সিদ্ধান্ত, তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সাথে তালিকাবহিভূত ব্যাংকের মার্জার, আইএমএফ এর চাপে সূদহার বৃদ্ধি ও ক্যাপিটাল গেইনের উপর কর আরোপের আলোচনা সব শেষ যুক্ত হয়েছে কমিশনের কর্তাদের নবায়ন বা নিয়োগ নিয়ে গুঞ্জন। এমন অবস্থা প্রতিদিনই কমছে সূচক ও বাজার মূলধন। এতে করে নতুন করে রাস্তায় নামছে বিনিয়োগকারী।
পুঁজিবাজারের এমন পতনে দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা। যারা চোখেমূখে অন্ধকার দেখছেন। এমন পরিস্থিতিতে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার ছাড়তে শুরু করেছেন। নিয়মিত সিকিউরিটিজ শুন্য হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের হাজার হাজার পোর্টফোলিও। কমিশনের ব্যর্থতার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে মানববন্ধন করছেন বিনিয়োগকারীরা।
সপ্তাহের চতুর্থ কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৫৫৭৯ পয়েন্টে। বুধবারের এমন পতনে ডিএসইএক্স সূচকটি ২০২১ সালের ৫ মে’র মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমে গেছে। অর্থাৎ আজকের সূচকটি বিগত ৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে সর্বশেষ ২০২১ সালের ৪ মে সূচকটি আজকের তুলনায় কম ছিল। ওইদিন ডিএসইএক্স ছিল ৫৫৩৫ পয়েন্টে।
আজ ডিএসইতে ৬০২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যার পরিমাণ আগের দিন হয়েছিল ৫৯৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এ হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৫ কোটি ১৯ লাখ টাকার বা ১ শতাংশ।
এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৯৪ টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৭৯ টি বা ২০.০৫ শতাংশের। আর দর কমেছে ২৭৪ টি বা ৬৯.৫৪ শতাংশের ও দর পরিবর্তন হয়নি ৪১ টি বা ১০.৪১ শতাংশের।
অপরদিকে সিএসইতে বুধবার ২৬ কোটি ৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২২৭ টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৪১ টির, কমেছে ১৬৬ টির এবং পরিবর্তন হয়নি ২০ টির। এদিন সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৭৪ পয়েন্ট কমে দাঁডিয়েছে ১৫৯৮০ পয়েন্টে।