বিএসইসির হুটহাট সিদ্ধান্তে দীর্ঘ হচ্ছে পুঁজিবাজারের অস্থিরতা
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দীর্ঘ দরপতনে দেশের পুঁজিবাজারে চরম অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হচ্ছে না। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা এতোটাই ভারি হয়েছে যে, তারা বাজারে আসাই বন্ধ করে দিচ্ছেন। এমনকি অনেক বিনিয়োগকারী বড় লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এমন অবস্থায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দরপতনের ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকার বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তকে বাজার সংশ্লিষ্টরা ভালোভাবে নেয়নি। এটা বুমেরাং হবে বলে জানিয়েছিল।
যার সত্যতাও বাস্তবে দেখা গেল ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেনের বাজার চিত্রে। এদিন বিএসইসির খামখেয়ালি সিদ্ধান্তে অযৌক্তিক হস্তক্ষেপে লেনদেনের শুরুতেই ৮০ পয়েন্ট উধাও হয়ে যায়। ফলে লেনদেন চলাকালে ১০০ পয়েন্ট পর্যন্ত সূচকের দরপতনে হয়েছে। ফলে দিনশেষে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ৬০ পয়েন্ট সূচকের পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে।
সূত্রে জানায়, গত বুধবার বিকালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর দর পতনের ক্ষেত্রে নতুন সার্কিট ব্রেকার বা সীমা নির্ধারন করে বিএসইসি। নতুন সীমায় একদিনে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর সর্বোচ্চ ৩ শতাংশ কমতে পারবে। যা বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়েছে। বিএসইসির এমন সিদ্ধান্তকে বাজারের জন্য ইতিবাচক বলে মানতে নারাজ বাজার সংশ্লিষ্টরা। কারণ এর আগে সার্কিট ব্রেকার দিয়ে বাজারের কোন লাভ হয়নি।
তবে এ অবস্থায় দীর্ঘ সময়ে বাজারে শেয়ারের মূল্য কমে যাওয়ায় এখন বিনিয়োগের আকর্ষণীয় স্তরে এসেছে শেয়ারমূল্য, এমন মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ। তারা বলছেন, পুঁজিবাজারে যথেষ্ট মূল্য সংশোধন হয়েছে। যে কোনো সময় বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।
বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি দর পতনের সময় প্রায় প্রতিদিনই দিনের লেনদেনের শুরুতে কিছুটা দর বেড়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশা জাগায়। তবে তা বেশিক্ষণ টেকে না। দিনের শেষটা হয় আরও বড় দর পতনে, আরও বড় হতাশায়। প্রতিদিনই মনে হয়, এই বুঝি দর পতন থামল। আদতে তা থামছে না। এ অবস্থায় হতাশা থেকে বের হতে অনেক বিনিয়োগকারী লোকসানে সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন।
রাজধানীর মতিঝিলের বেশিরভাগ ব্রোকারেজ হাউস এবং মার্চেন্ট ব্যাংক ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে বিনিয়োগকারী-শূন্য পরিবেশ। ব্রোকরেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, হতাশা থেকেই বিনিয়োগকারীরা বাজারে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা হতাশার সঙ্গে বলেন, দরপতন বন্ধ হবে, শিগগির ঘুরে দাঁড়াবে বাজার এমন আশা বিনিয়োগকারীরা ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে প্রতিদিনই কিছু না কিছু বিনিয়োগকারী সব শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে টাকা তুলে নিচ্ছেন। তারা মনে করছেন, এখন বিক্রি না করলে লোকসান আরও বাড়বে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাংক খাতের আমানতের সুদের হার বাড়ানো, বিভিন্ন মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের ফোর্সড সেল এবং লভ্যাংশ বিতরণের পর বড় কোম্পানিগুলোর দাম সমন্বয়ের কারণে বাজারে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, দেশের অর্থনীতি বিনিয়োগের জন্য অনুকূল বলে মনে করছেন না কেউ। সুদের হার যেখানে ১০-১২ শতাংশ, সেখানে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ আসা কমবে, উল্টো চলে যাবে এটাই স্বাভাবিক। এ সময় সবার ধৈর্য ধরা দরকার। বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী থাকলে তারা এ সময়ে হাল ধরতে পারতেন, যা এখানে নেই। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ফোর্সড সেল করছে।
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সাথে বিনিয়োগ করতে হবে। ব্যাংক খাতে সুদের হার বেড়েছে। ডলার সংকট সমাধান হয়নি। তিনি বলেন, সবারই ধারণা ছিল ফ্লোর প্রাইস (নিম্নসীমা) তুলে নিলে একটা ধাক্কা আসবে। তবে এটি তাৎক্ষণিকভাবে না এসে একটু পরে এসেছে। এছাড়া বাজার প্রায় ৮ থেকে ৯ শতাংশ সংশোধন হয়েছে। যে কোনো সময় বাজার ঘুরে দাঁড়াবে।
এদিকে পুঁজিবাজারের অস্থিরতার বিষয়টি বিএসইসিকে ভাবাচ্ছে। এজন্য গত সোমবার টানা দুই মাসের অধিক সময় দর পতন চলার প্রেক্ষাপটে শীর্ষ অংশীজনকে ডেকে পাঠিয়েছিল বিএসইসি। বৈঠকে অংশীজনরা জানিয়েছেন, পুঁজিবাজারে আস্থা ও তারল্য সংকট প্রধান সমস্যা। বিএসইসির তরফ থেকে ব্রোকার ডিলার, বিভিন্ন ব্যাংক ও মিউচুয়াল ফান্ড থেকে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।