একীভূত না হওয়ার সিদ্ধান্ত ন্যাশনাল ব্যাংকের, নিজেরাই সবল হতে চায়
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: মার্জার (একীভূত) থেকে সরে আসার কথা জানিয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদ। কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না হয়ে বরং নিজেরাই সবল হতে চায় বলে জানায় পর্ষদ। কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না হয়ে বরং নিজেরাই সবল হতে চায় বলে জানায় পর্ষদ।
আজ সোমবার ব্যাংকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নতুন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আলহাজ খলিলুর রহমান এ কথা বলেন। এসময় নতুন পরিচালনা পর্ষদের অন্যান্য সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত রোববার মাত্র সাড়ে চার মাসের মাথায় আবারও বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংকটির বিদ্যমান পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদও গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সুপারিশে ব্যাংকটির পর্ষদ ভেঙে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সংবাদ সম্মেলনে নতুন পর্ষদ জানায়, নতুন পরচালনা পর্ষদ ন্যাশনাল ব্যাংকর বর্তমান ব্যবস্থাপনা পর্ষদকে নিয়ে ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিতকরণ ও গ্রাহকের আস্থা অর্জনে নিরলস কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছে। এছাড়াও বিভিন্ন সূচকে উন্নয়ন নিশ্চিত করে ন্যাশনাল ব্যাংকের হারানো ঐতিহ্য ও গৌরব ফিরিয়ে আনবে।
নতুন পরচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের প্রয়োজন বুঝি। ফলে ব্যবসায়ীদের জন্য সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে ও তাদের পাশে থেকে ন্যাশনাল ব্যাংককে একটি ব্যবসায়ীবান্ধব ব্যাংক হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা বন্ধ পরিকর। এর মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াবে ও তার হারানো এতিহ্য ফিরে পাবে বলে আমরা দৃঢ় বিশ্বাস করি। ন্যাশনাল ব্যাংকের এই অগ্রযাত্রায় আমরা সাংবাদিকদের পাশে চাই।
ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, শীর্ষ গ্রাহকদের মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপ চলতি মাসে ৭ কোটি টাকা, নাসা গ্রুপ ৩৩ কোটি টাকা ও বেক্সিমকো গ্রুপ ২০ কোটি টাকা জমা দিয়েছে। ফলে ব্যাংকটির ঋণ আদায় পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে। পাশাপাশি যেসব ঋণ আদায় হচ্ছে না, তা খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করছে ব্যাংকটি। এর ফলে অনেক গ্রাহক ব্যাংকটির সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেছেন। যাঁরা আগে ব্যাংকের ডাকে সাড়া দেননি, তাঁরা এখন ব্যাংকে ফিরেছেন।
ব্যাংক খাত সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথমে বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংককে ডেকে সমস্যায় জর্জরিত ন্যাশনাল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পরামর্শ দেয়। তবে এক্সিম ব্যাংক দুর্বল হিসেবে পরিচিত পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার আগ্রহ দেখালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাতে রাজি হয়। এরপর ১৪ মার্চ ইসলামি ধারার এক্সিম ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ আলাদা বৈঠক করে একে অপরের সঙ্গে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায়। পরে গভর্নরের উপস্থিতিতে দুই ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
এরপর ৩ এপ্রিল সরকারি খাতের দুটি ব্যাংককে অন্য দুটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়। জানানো হয়, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হবে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) এবং সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে মিলবে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল)। এরপর ৮ এপ্রিল বেসরকারি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে সরকারি খাতের সমস্যাগ্রস্ত বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়।
ন্যাশনাল ব্যাংকের মালিকানায় থাকা সিকদার গ্রুপের বিরুদ্ধেই এত দিন অনিয়মের নানা অভিযোগ ছিল। শেষ পর্যন্ত সিকদার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হওয়ার পর গত ডিসেম্বরে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গঠন করে নতুন পর্ষদ, যারা এখন ব্যাংকটির নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।