পুঁজিবাজারে ৪০ লাখ টাকার বেশি মুনাফা করলে করের চিন্তা এনবিআরের
দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: করের আওতায় আসছে পুঁজিবাজারের বড় ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা। আগামী বাজেটে পুঁজিবাজারে লেনদেন মুনাফা বা ক্যাপিটাল গেইনে ১৫ শতাংশ আয়কর আরোপ করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে মূলধনী আয় ৪০ লাখের কম হলে কর দিতে হবে না। এতদিন পুঁজিবাজারে ক্যাপিটাল গেইনের ওপর ব্যক্তি পর্যায়ে বিনিয়োগকারীদেরকে আয়কর দিতে হতো না। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য এই করের হার ১০ শতাংশ।
তবে আগামী অর্থবছর থেকে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীর লাভের ওপর কর বসানোর উদ্যোগ নিচ্ছে এনবিআর। আইএমএফের পরামর্শে এই কর আরোপের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সংস্থাটি। ২০১৫ সালে এসআরওর মাধ্যমে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের তালিকাভুক্ত স্টক, মিউচুয়াল ফান্ড, বন্ড ও ডিবেঞ্চারগুলোর ক্যাপিটাল গেইন থেকে কর প্রত্যাহার করা হয়েছিল। আগামী অর্থবছর থেকে ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের লাভ ৪০ লাখের বেশি হলে ১৫ শতাংশ কর দিতে হবে। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো থেকে অর্জিত মুনাফার ওপর এই কর বসানো হবে। তবে মূলধনি আয়ের (ক্যাপিটাল গেইন) ওপর কর আরোপের বিষয়টি শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত হলেও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এর আওতায় আসবেন না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তি বিনিয়োগকারীদের অনেকেই পুঁজিবাজারে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেন। তাদের অনেকে বিপুল পরিমাণ মুনাফাও করেন। তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে অনেক সময় ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। বড় বিনিয়োগকারীরা বেশিরভাগ সময়ই মুনাফা করেন। তবে সরকার সেখান থেকে কোনো রাজস্ব পায় না।
এসব কারণে পুঁজিবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দিয়ে আগামী বাজেটে বড় বিনিয়োগকারীদের ওপর কর আরোপ করা হতে পারে। এই ক্ষেত্রে, যদি একজন বিনিয়োগকারী ৪০ লাখ টাকার বেশি লাভ করেন, তাহলে সরকারকে কর দিতে হতে পারে। এক্ষেত্রে করের হার ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে। বর্তমানে, পৃথক বিনিয়োগকারীরা মূলধন লাভ কর থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত।
এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আসন্ন বাজেটে পুঁজিবাজারের মূলধন লাভের ওপর কর আরোপের প্রস্তাব করা হতে পারে। এক্ষেত্রে লাভের ১৫ শতাংশ দিতে হতে পারে। এ ধরনের সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কি না জানতে চাইলে ঐ কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত কোনো ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর বছরে ৪০ লাখ টাকা মুনাফা করার বাস্তবতা নেই। আর যারা ৪০ লাখ টাকার বেশি মুনাফা করেন, তারা নিশ্চয়ই ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পড়বেন না।
এ বিষয়ে মন্তব্য চাওয়া হলে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি ও ব্র্যাক-ইপিএল স্টক ব্রোকারেজের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আমরা ক্যাপিটাল গেইনে ট্যাক্স দিয়ে থাকি। আমরা যতটুকু জেনেছি, এবার ব্যক্তির ক্ষেত্রেও ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স আরোপ করা হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, এ ক্ষেত্রে আমরা চাই সাধারণ বিনিয়োগকারীর বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে যাতে করা হয়। কারণ অনেক বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারে রয়েছেন, যারা পেনশনের অর্থ বিনিয়োগ করে আয় করছেন। সবার ওপর করারোপ করা হলে তাতে বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়বে। যেহেতু আমাদের পুঁজিবাজার একটা ভারনারেবল পজিশনে আছে।
৪০ লাখ টাকার বেশি মুনাফার ওপর ট্যাক্স আরোপ করা হলে বাজারে তার প্রভাব পড়বে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ডিবিএ সভাপতি বলেন, ব্যক্তিগত খাতে এমন বিনিয়োগকারী থাকতে পারে। তাদের কর দিতে হবে। কারণ আমাদের করের টাকায় দেশ চলবে।