৯৬ বা ২০১০ সালের চেয়েও ভয়াবহ অবস্থা পুঁজিবাজারের, প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা
মনির হোসেন, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: উচ্চ প্রবৃদ্ধির দেশে পুঁজিবাজার হাঁটছে উল্টো পথে। সমালোচনার মুখে পড়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিনিয়োগকারীদের আশার বানী দিয়ে বাজার ইস্যুতে নিরব ভুমিকা পালন করছেন। ফলে দিন যতই যাচ্ছে লোকসানের পাল্লা ততই ভারী হচ্ছে। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার মুখের কথায় ফুলঝুঁড়ি থাকলেও বাস্তবে বাজারে উল্টো চিত্র।
টানা দরপতনে পুঁজি হারিয়ে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী ছেড়েছেন এই বাজার। লেনদেন কমায় বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পড়েছে লোকসানে। নতুন কোম্পানির পুঁজি সংগ্রহের পথও সংকুচিত হয়ে গেছে। ফলে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের ধসে সৃষ্ট সংকটকালের পর গত ১৪ বছরের মধ্যে এখন সবচেয়ে নাজুক দশা পুঁজিবাজারের। ফলে টানা ১০ কার্যদিবস ধরে দরপতনের মধ্যে থাকলো পুঁজিবাজার। এতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ৩৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে গেছে। মূল্যসূচকের অব্যাহত দরপতনের পাশাপাশি পুঁজিবাজারে লেনদেন খরাও দেখা দিয়েছে। ডিএসইতে লেনদেন কমে তিনশ কোটি টাকার ঘরে চলে এসেছে। এতে সাড়ে চার মাসের মধ্যে ডিএসইতে সর্বনিম্ন লেনদেন হলো।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, কারসাজি ঠেকাতে না পারায় আস্থার সংকটে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে দেশের পুঁজিবাজার। এ অবস্থাকে ১৯৯৬ সাল বা ২০১০ সালের চেয়েও করুণ অবস্থা বলে মনে করছেন। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাজার ইস্যুতে দ্রুত কোন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত না নিলে পুঁজিবাজারে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী নি:স্ব হবে বলে মনে করছেন তারা।
একাধিক বিনিয়াগকারীর সাথে আলাপকালে বলেন, পুঁজিবাজারে ২০১০ সালের ভূত ভর করেছে। একটার পর একটা ইস্যু কাজ পুঁজি করে টানা দরপতন হচ্ছে। এছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার উপর আস্থার অভাবে বিনিয়োগকারীরা হাতে থাকার শেয়ার বিক্রি করে সাইডলাইনে অবস্থান করেছেন। ফলে সূচকের পাশাপাশি লেনদেনে ধস নেমেছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারের বর্তমান দুরবস্থার প্রধান কারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা। আর এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে সুশাসন, প্রয়োজনীয় নজরদারি ও অপরাধীর যথাযথ শাস্তির অভাবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিলে এমনটি হতো না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে ভালো কোম্পানি পুঁজিবাজারে আনতেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অথচ বাজারে গতি আনতে এসব ছিল সবচেয়ে কার্যকর উপায়। তবে উল্টো মানহীন কোম্পানির আইপিও (প্রাথমিক গণপ্রস্তাব) এনে বাজারকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১২ মে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) প্রধান সূচক ছিল ৫ হাজার ৬৯৬ পয়েন্ট। এরপর থেকেই দেখা যায় টানা পতনের তান্ডব। গত ৯ কার্যদিবসের টানা দরপতনে ডিএসইর সূচক ৩৪৬ পয়েন্ট কমে আজ দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২৫০ পয়েন্টে। এই সময়ে বিনিয়োগকারীদের মূলধন কমেছে ৬৩ হাজার ৬৪৬ কোটি টাকার।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসন্ন বাজেটে পুঁজিবাজারে গেইন ট্যাক্স আরোপ এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির ট্যাক্স বৃদ্ধির প্রচারণাকে কেন্দ্র করে বাজারে চলছে ধারাবাহিক পতনের তান্ডব। কিন্তু এনবিআর’র কর্মকর্তারদের এদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।
বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করছেন, পুঁজিবাজারে যত প্রণোদনা ছিল, গত কয়েক বছরে পর্যায়ক্রমে সেগুলো প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাকি যে কয়েকটি আছে, সেগুলোও প্রত্যাহার করার জন্য এনবিআর কর্মকর্তারা উঠে পড়ে লেগেছেন। এগুলোও প্রত্যাহার করে তারা পুঁজিবাজারকে নিঃশেষ করে তারপর ক্ষান্ত হবেন। এই পর্যায়ে বিনিয়োগকারীরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৬১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ২৫০ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ১৪৬ পয়েন্টে এবং ডিএসই ৩০ সূচক ১৮ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ৮৮৮ পয়েন্টে। দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৮২ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৩১ টির, দর কমেছে ৩২২ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ২৯ টির।
ডিএসইতে ৩২২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ১৮৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা কম। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৫০৮ কোটি টাকার। অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১৭০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ২৩২ পয়েন্টে। সিএসইতে ২১০ টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৪ টির দর বেড়েছে, কমেছে ১৬৫ টির এবং ২১ টির দর অপরিবর্তিত রয়েছে। সিএসইতে ৮ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।