রাকিবুল হাসান, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: টানা দরপতনে ধুঁকছে দেশের পুঁজিবাজার। নিয়ন্ত্রণ সংস্থার নানা উদ্যোগে কাটানো যাচ্ছে না অস্থিরতা। সূচকের সঙ্গে বাজার মূলধনও হারাচ্ছে ডিএসই। ফলে পুঁজিবাজারের ভয়াবহ অবস্থা এতটাই যে কিনলেই লোকসান। লাভ করতে এসে প্রতিদিন পুঁজি হারিয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী এখন দিশেহারা প্রায়। বাজারকে এ খাদের কিনারা থেকে কে তুলবে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসিরই-বা ভূমিকা কী এই প্রশ্ন করছেন বিনিয়োগকারীরা। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের লাভ থাকা দূরের কথা, এখন পুঁজি কীভাবে ফিরবে এই নিয়েই নেই কোনো পদক্ষেপ। এমন পরিস্থিতিতে বাজারবিমুখ হচ্ছেন হাজার হাজার বিনিয়োগকারীরা।

স্টক এন্ড বন্ডের বিনিয়োগকারী মাহামুদা আক্তার। একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। ইডেন কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। এরপর ২০০০ সালে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকতা শুরু করেন। ২০০৮ সাল থেকে একটি বিও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আইপিও’র পাশাপাশি সেকেন্ডারী ব্যবসায় শুরু করেন। অনেক কষ্টে অর্জিত অর্থ একটু একটু করে জমিয়ে কিছুটা লাভের আশায় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন। ২০১০ এর মহা পতনের সময় নিজের মূলধনের বেশিরভাগ অর্থই হারিয়েছেন। তবে হাল ছাড়েননি। ধৈর্য্য ধরে বসেছিলেন। কবে হারানো অর্থ ফেরত পান।

এরপর বর্তমান কমিশন যোগদানের পর চেয়ারম্যানের পুঁজিবাজারের নিয়ে ইতিবাচকমুখী পদক্ষেপে স্বামীর কাছ থেকে আরো ১০ লাখ টাকা নতুন করে বিনিয়োগ শুরু করেন। কিন্তু গত এক বছরে টানা দরপতনে তার নতুন পুঁজির ৮ লাখ টাকা হারিয়েছেন। এরকম হাজার হাজার বিনিয়োগকারীর পুঁজি হারিয়ে দিন দিন আর্তনাদ বাড়ছে।

তবে ঈদুল ফিতরের পরবর্তী পতনে তার সেই বিনিয়োগকৃত অর্থের বেশিরভাগ হারিয়ে এবার তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। মাহামুদা আক্তারের মতো হাজারো বিনিয়োগকারী তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ হারিয়ে আজ দিশেহার হয়ে পড়েছেন। চোখের সামনে নিজেদের কষ্টে অর্জিত বিনিয়োগকৃত অর্থ হারাতে দেখে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কিছুই করার নেই তাদের। মাহামুদা আক্তার আর্তনাদ আমাদের পুঁজি শেষ, আমাদের বাঁচান।

বর্তমান নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারমানের পুঁজিবাজারমুখী ইতিবাচক পদক্ষেপে নতুন করে বিনিয়োগ করে আজ আমার পুঁজি হারিয়ে সব শেষ। আমার মত শিক্ষিত নারীরা বার বার পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আমরা কি করে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে। ২০১০ সালের ধসের সময় বড় লোকসানের মুখে পড়ে ১৪ বছর ধৈর্য্য ধারন করে আজও নতুন পুঁজি ফিরে পাইনি।

আবার ২০২০ সালে নতুন করে বিনিয়োগ করে সেই পুঁজি হারাবার পথে। আমার প্রশ্ন হলে বর্তমান কমিশন কি পুঁজির নিরাপত্তা দিতে পারছে। পুঁজিবাজার টানা দরপতন হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভুমিকা প্রশ্নবিদ্ধ দেখা যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমার মত কোন নারী বিনিয়োগকারী পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে না।

বর্তমান কমিশন আমাদের আশ্বাস দিয়েছে পুঁজিবাজারে সূচক যাবে ১০ হাজার, লেনদেন হবে ৫ হাজার কোটি টাকা। এ মিথ্যা আশ্বাসের শেষ কোথায়। আজ আমরা সর্বশান্ত। কারণ আজও অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারে বিক্রিতা থাকলেও কেনার মতো কোনো বিনিয়োগকারীই ছিল না। অর্থাৎ শেয়ার বিক্রিতে আগ্রহ থাকলেও ক্রেতা পাচ্ছিল না তারা। এতে করে ওই সব কোম্পানির শেয়ারের দরও কমে যায়। এতে করে লোকসানের মুখে পরেন তারা।

শেষ কোথায়। আজ আমরা সর্বশান্ত। কারণ আজও অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারে বিক্রিতা থাকলেও কেনার মতো কোনো বিনিয়োগকারীই ছিল না। অর্থাৎ শেয়ার বিক্রিতে আগ্রহ থাকলেও ক্রেতা পাচ্ছিল না তারা। এতে করে ওই সব কোম্পানির শেয়ারের দরও কমে যায়। এতে করে লোকসানের মুখে পরেন তারা।