মনিরুজ্জামান মনির, দেশ প্রতিক্ষণ, ঢাকা: দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল দশা দেশের পুঁজিবাজারে। মাঝে কিছুদিন ঘুরে দাঁড়ালেও ফের টানা দরপতনে পুঁজিবাজার। এতে বিনিয়োগকারীরা প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন। বাজারের পতন ঠেকানোর কোনো উপায় যেন মিলছে না। বরং দিন যত যাচ্ছে বিনিয়োগ করা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজারের বর্তমান যে অবস্থা চলছে এতে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিও ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। লোকসান গুনতে হচ্ছে বিপুল পরিমাণে। ফলে চরম হতাশায় ভুগে পুঁজিবাজার ছাড়ছেন বিনিয়োগকারীরা।

তবে টানা দরপতন হলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারছে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নিরব আচরন বিনিয়োগকারীদের ক্ষোভ আরো বাড়ছে। এ অবস্থায় চরম আস্থা সংকটে বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হওয়া এক বিনিয়োগকারীর আর্তনাদ তুলে ধরছেন দেশ প্রতিক্ষণের কাছে।

এম সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী কাজী হোসাইন আলী ২০২০ সালে পুঁজিবাজারে ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। প্রথমে কিছু শেয়ারে মুনাফা করলেও এরপর শুরু হয় লোকসান। এক পর্যায়ে সব লোকসানে বিক্রি করে বন্ধুর কথায় ফনিক্স ফাইন্যান্সের শেয়ার ৩২.৫০ টাকা করে ৫০ হাজার শেয়ারে ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেন। মাত্র চার বছরের মাথায় তার পোর্টফোলিও বাজারমুল্য এখন দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

তিনি দু:খ করে বলেন, আমি একজন কলেজের প্রভাষক। বর্তমান নিয়ন্ত্রক সংস্থার আশ্বাসে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে আজ সর্বশান্ত হয়েছি। বর্তমান নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারমান বলেছিলেন সূচক যাবে ১০ হাজার লেনদেন হবে ৫ হাজার। আপনারা নির্ভয়ে বিনিয়োগ করুন। আপনাদের পুঁজির নিরাপত্ত দিব আমি। আজ তার এসব বক্তব্য কোথায়। অথচ আওয়ামীলীগ সরকারের ১৬ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ সময় যাচ্ছে পুঁজিবাজারের। ২০১০ সালের চেয়ে বর্তমান পুঁজিবাজারের অবস্থা ভয়াবহ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুঁজিবাজার ইস্যুতে দ্রুত হস্তক্ষেপ না করলে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী সর্বশান্ত হয়ে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

মশিউর সিকিউরিটিজের বিনিয়োগকারী কামাল হোসেন বলেন, এনআরবি কর্মাশিয়াল ব্যাংকের ১ লাখ শেয়ারে ২৮ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে আজ আমি সর্বশান্ত। ২৮ টাকার শেয়ার বর্তমান ১০ টাকার নিচে নেমে গেছে। বর্তমান বাজার মুল্য হিসেব করলে ২৮ লাখ টাকার বিনিয়োগে ১৮ লাখ টাকা লোকসানে আছি।

বেসরকারি চাকরিজীবী মাছুম বিল্লাহ আক্ষেপ করে বলেন, ‘এই বাজার আমাকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। আমার সহায় সম্বল হারিয়ে গেছে এই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে। আমি ফান্ডামেন্টাল শেয়ার দেখে বিনিয়োগ করেছিলাম। কিন্তু কোনো কিছুই কাজে লাগেনি। এই বাজারে আমি আমার পুঁজি হারিয়ে ফেলেছি। বাজারের এই অবস্থায় আমার মতো বিনিয়োগকারীদের রক্তক্ষরণ কবে থামবে?’

করোনা মহামারির কারণে পুঁজিবাজারে যখন বড় ধরনের ধস নামে, সেই কঠিন সময়ে বিএসইসির হাল ধরে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন। দায়িত্ব নেওয়ার পর পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরুসহ বেশ কয়েকটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রশংসা কুড়িয়েছে বর্তমান কমিশন।

তবে দীর্ঘদিন ফ্লোর প্রাইস দিয়ে শেয়ারের দাম এক জায়গায় আটকে রেখে বড় ধরনের সমালোচনার মধ্যেও পড়তে হয় বর্তমান কমিশনকে। বিভিন্ন পক্ষের সমালোচনার মধ্যে চলতি বছরের জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে পুঁজিবাজার থেকে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয় বিএসইসি। ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার পর সাময়িক মূল্য সংশোধনের পর পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়ালেও এই অবস্থা টেকসই হয়নি বেশিদিন। এর কয়েকদিন পরেই আবার আগের রূপে ফিরে যায় পুঁজিবাজার। শুরু হয় ধারাবাহিক দরপতন।